ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : দুই দলই আগেই সেমিফাইনালে ওঠা নিশ্চিত করে ফেলেছিল (Champions Trophy)। তাই রবিবার দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি ছিল গ্রুপের ‘ফার্স্ট বয়’ ও ‘সেকেন্ড বয়’ নির্ধারণের লড়াই। এই ম্যাচের ফলাফলের ওপরই নির্ভর করছিল সেমিফাইনালে কারা কাদের বিপক্ষ হবে (Champions Trophy)। সেই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৪৪ রানে হারিয়ে গ্রুপ শীর্ষে থেকেই শেষ চারে পৌঁছলেন রোহিত শর্মারা।
সেমিফাইনালে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া (Champions Trophy)
আগামী ৪ মার্চ দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সেমিফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া (Champions Trophy)। ৫ তারিখ অপর সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা নামবে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। রবিবার দুবাইয়ে টসে জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠিয়ে ২৪৯ রানে আটকে দিলেও শেষ রক্ষা করতে পারল না নিউজিল্যান্ড। বরুণ চক্রবর্তীর আঙুলের ভেল্কিতেই ধরাশায়ী কিউইরা।
টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্বান্ত কিউইদের (Champions Trophy)
রবিবার টসে জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠিয়ে রান তাড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন (Champions Trophy)। কারণ এই মাঠে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গত দুই ম্যাচে রান তাড়া করেই জিতেছিল ভারত। তাই সিদ্ধান্তে কোনও ভুল ছিল না। ৩০ রানের মধ্যেই তিন মহারথী শুভমন গিল (২), রোহিত শর্মা (১৫) এবং বিরাট কোহলিকে (১১) তুলে নিয়ে শুরুতেই ভারতকে কোনঠাসা করে দিয়েছিলেন দুই পেসার ম্যাট হেনরি ও কেইল জেমিসন। তবে বিরাটকে আউট করার জন্য বোলার হেনরির থেকেও বেশি কৃতিত্ব গ্লেন ফিলিপসের। পয়েন্টে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে যেভাবে এক হাতে বিরাটের ক্যাচ তালুবন্দী করলেন ফিলিপস তা এককথায় অসাধারণ। শুরুতেই তিন উইকেট হারানোয় প্রথম পাওয়ার প্লে কাজেই লাগাতে পারলো না ভারত। প্রথম ১০ ওভারে উঠল তিন উইকেটে মাত্র ৩৭ রান।
ভারতের ২৪৯ রানের ইনিংস
যদিও এই ধাক্কা দারুন ভাবে সামলে দিয়েছিলেন শ্রেয়স আইয়ার ও অক্ষর প্যাটেল। চতুর্থ উইকেটে দু’জনের ৯৮ রানের পার্টনারশিপ ভারতীয় ড্রেসিংরুমে স্বস্তি ফেরায়। এই জুটি যখন ক্রমশই ভয়ংকর হয়ে উঠছিল তখনই অক্ষর প্যাটেলকে (৪২) ফিরিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রুটা দেন রাচীন রবীন্দ্র। তাঁর বলে সুইপ করতে গিয়ে উইলিয়ামসনের হাতে ধরা পড়েন অক্ষর। তখন ভারতের রান চার উইকেটে ১২৮। এরপর কেএল রাহুলকে নিয়ে দলের রান এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন আইয়ার। হাফ সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন তিনি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ও’রুকের বলে ইয়ংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আইয়ার।
৯৮ বলে চার বাউন্ডারি ও জোড়া ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৭৯ রান করে শ্রেয়স যখন আউট হন তখন ভারতের রান পাঁচ উইকেটে ১৭২। এরপর রাহুলও বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি। ২৩ রান করে স্যান্টেনারের শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। এরপর রবীন্দ্র জাদেজা ও হার্দিক পান্ডিয়া মিলে ভারতের রান ২০০ পার করান। জাদেজা ১৬ রান করে হেনরির বলে আউট হন। পয়েন্টে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে একহাতে জাদেজার দুরন্ত ক্যাচ নেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন। তবে হার্দিক ৪ বাউন্ডারি ও জোড়া ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৪৫ বলে ৪৫ রান করে ভারতকে লড়াইয়ের জায়গায় পৌঁছে দেন। শেষে হার্দিক ও মহম্মদ সামিকেও (৫) ফেরান হেনরি। ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৯ রানের শেষ হয় ভারতের ইনিংস।
কিউইদের দুরন্ত ফিল্ডিং
হেনরি ৮ ওভারে ৪২ রান দিয়ে একাই নেন ৫ উইকেট। এদিন ভারতের রান ২৭০ টোপকে যেতেই পারতো। তার জন্য কিউই বোলারদের পাশাপাশি অবশ্যই কৃতিত্ব দিতে হবে নিউজিল্যান্ডের ফিল্ডিংকে। দুরন্ত ফিল্ডিং করে এদিন ভারতের কম করে ২৫ থেকে ৩০ রান আটকে দেন কিউই ফিল্ডাররা।
প্রথম একাদশে বদল গম্ভীরের
রবিবার প্রথম একাদশে একটাই বদল এনেছিলেন ভারতের কোচ গৌতম গম্ভীর। পেসার হর্ষিত রানার জায়গায় দলে এসেছিলেন স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী। এক পেসার ও চার স্পিনারে খেলার ভারতের এই সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছিলেন সকলেই। দুবাইয়ের স্লো টার্নিং উইকেটে এই একটা সিদ্ধান্তেই বাজিমাত করল ভারত। এক পেসারকে বাদ দিয়ে এক অতিরিক্ত স্পিনার খেলানোর সিদ্ধান্ত যে একদম নির্ভুল ছিল, তা নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রমাণ হয়ে গেল। ভারতের চার স্পিনার মিলে নিল ৯ উইকেট। গত দুই ম্যাচে রিজার্ভ বেঞ্চে বসলেও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সুযোগ পেয়েই নিজের জাত চেনালেন স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী। বরুণের আঙুলের ভেল্কিতেই কুপোকাত হয়ে গেল নিউজিল্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ। ১০ ওভারে ৪২ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে একাই নিউজিল্যান্ডকে শেষ করে দিলেন ম্যাচের সেরা বরুণ। তাতেই ৪৫.৩ ওভারে ২০৫ রানেই শেষ হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপকে চ্যালেঞ্জ
যদিও চতুর্থ ওভারের শেষ বলে ওপেনার রাচীন রবীন্দ্রকে (৬) ফিরিয়ে কিউই শিবিরে প্রথম ধাক্কাটা দেন হার্দিক। অপর ওপেনার ইয়ংকেও দ্রুত ফেরান (২২) বরুণ। এরপর অধিনায়ক উইলিয়ামসন নিজের কাঁধেই দলকে জেতানোর দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের চার স্পিনার- অক্ষর, বরুণ, জাদেজা ও কুলদীপকে সামলাতে এদিন রীতিমতো হিমশিম খেলেন কিউই ব্যাটসম্যানরা। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন নিউজিল্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে হলে এই উইকেটে কম করে ২৭০ রান তুলতে হতো ভারতকে। ২৪৯ রান করে ম্যাচ জেতা ভারতের পক্ষে খুবই কঠিন। কিন্তু সেই অসাধ্য সাধনটাই করে দেখালো ভারতের স্পিন অ্যাটাক।
আরও পড়ুন : Afghanistan vs Australia: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালের লড়াই, আবহাওয়া বড় ফ্যাক্টর
ভারতের স্পিন অ্যাটাক
ড্যারেল মিচেল (১৭) ও টম ল্যাথাম (১৪) যথাক্রমে কুলদীপ ও জাদেজার শিকার হয়ে ফেরেন। গ্লেন ফিলিপস (১২) ও ব্রেসওয়েলও (২) দ্রুত ফেরান বরুণ। ১৫৯ রানের মধ্যে ৬ উইকেট পড়ে গেলেও তখনও নিউজিল্যান্ডের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন উইলিয়ামসন। কিন্তু ৪১তম ওভারের শেষ বলে উইলিয়ামসনকে ফিরিয়ে দিয়ে ভারতের জয় নিশ্চিত করে দেন অক্ষর প্যাটেল। ১২০ বলে ৭ বাউন্ডারির সাহায্যে ৮১ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন কিউই অধিনায়ক। তখন নিউজিল্যান্ডের রান ৭ উইকেটে ১৬৯। তখনও জয়ের জন্য দরকার ৮১ রান। এরপর স্যান্টনার (২৮) কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতে ম্যাচের ফলাফল বদলায়নি। তাঁকে ও হেনরিকেও (২) ফেরান বরুণ। শেষে কুলদীপের বলে ও’রুক (১) বোল্ড হতেই গ্রুপ শীর্ষ থেকে ভারতের সেমিফাইনালে পৌঁছনোয় সিলমোহর পড়ে যায়। ৯ রান করে অপরাজিত থেকে যান জেমিসন। বরুণ ৫ উইকেট নিলেও কুলদীপ যাদব দু’টি এবং হার্দিক, অক্ষর ও জাদেজা পেয়েছেন একটি করে উইকেট।
আরও পড়ুন : Jose Mourinho: চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা হোসে মোরিনহোর উপর! কেন?
সেমিফাইনালে হর্ষিত রানা না বরুণ চক্রবর্তী ?
আগামী ৪ তারিখ এই দুবাইয়ের ২২ গজেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে নামবে ভারত। তার আগে চূড়ান্ত একাদশ বাছাই এখন কঠিন হয়ে দাঁড়ালো রোহিত শর্মা, গৌতম গম্ভীরের কাছে। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে হর্ষিত রানা না বরুণ চক্রবর্তী- কে জায়গা করে নেবেন এটা নির্ধারণ করাই এখন সব থেকে কঠিন হয়ে গেল। আর প্রথম সুযোগেই ৫ উইকেট নিয়ে সেটা কঠিন করে দিলেন বরুণ নিজেই।