ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারত-পাক উত্তেজনার মধ্যেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) আজ পাকিস্তানের জন্য নতুন করে দুইটি বড় ঋণ কর্মসূচি পর্যালোচনা করেছে(IMF Approves Fund for Pakistan)। এর মধ্যে রয়েছে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (EFF) এবং ১.৩ বিলিয়ন ডলারের রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (RSF)। এই আলোচনার সময় ভারত পাকিস্তানের প্রতি আইএমএফ-এর ধারাবাহিক ঋণ প্রদানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। পাশাপাশি, ভারতের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে সতর্ক করা হয় যে, এই ধরনের ঋণ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নয় বরং রাষ্ট্রীয় মদতে পরিচালিত সীমান্ত পারাপার সন্ত্রাসে ব্যয়িত হওয়ার ঝুঁকি রাখে।
পাকিস্তানের দীর্ঘকালীন ঋণ নির্ভরতা ও দুর্বল রেকর্ড (IMF Approves Fund for Pakistan)
ভারতের প্রতিনিধি পরিষ্কার ভাষায় বলেন, “পাকিস্তানের আর্থিক ব্যবস্থাপনার অতীত বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, গত ৩৫ বছরে ২৮ বছরই তারা আইএমএফ থেকে কোনও না কোনও ঋণ কর্মসূচির আওতায় থেকেছে(IMF Approves Fund for Pakistan)। এমনকি মাত্র গত পাঁচ বছরেই তারা চারবার আইএমএফ-এর দ্বারস্থ হয়েছে।”ভারতের মতে, পাকিস্তান যদি পূর্ববর্তী আইএমএফ কর্মসূচিগুলির শর্ত পূরণ করে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলতে পারত, তবে আজ নতুন করে সাহায্য চাওয়ার প্রয়োজন পড়ত না। এই ধারাবাহিক ঋণ নির্ভরতা IMF-এর কার্যকারিতা, কর্মসূচির ডিজাইন এবং বাস্তবায়নের উপর বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে ধরে।
সামরিক হস্তক্ষেপ ও অর্থনীতিতে নিয়ন্ত্রণের দৃষ্টান্ত(IMF Approves Fund for Pakistan)
ভারত তুলে ধরে, পাকিস্তানের অর্থনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব অত্যন্ত গভীর(IMF Approves Fund for Pakistan)। এমনকি বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকলেও সামরিক বাহিনী অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রবলভাবে সক্রিয়। পাকিস্তানের ‘স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিল’-এ সেনাবাহিনী সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছে। একটি জাতিসংঘের ২০২১ সালের রিপোর্টে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সামরিক-বানিজ্যিক সংস্থাগুলি দেশটির সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক কনগ্লোমারেট।এই পরিস্থিতিতে সেনা দ্বারা পরিচালিত অর্থনৈতিক নীতিমালায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা বাহ্যিক কার্যকলাপের জন্য তহবিল সরানোর আশঙ্কা প্রবল হয়ে ওঠে, যা IMF-এর মত প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

ঋণের সম্ভাব্য অপব্যবহার এবং সন্ত্রাসবাদের আশঙ্কা(IMF Approves Fund for Pakistan)
ভারতের সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ ছিল এই ঋণগুলির ‘ফাংজিবিলিটি’ বা বহুবিধ ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে(IMF Approves Fund for Pakistan)। ভারতের দাবি, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তহবিল, যেগুলি মূলত সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের উদ্দেশ্যে বরাদ্দ করা হয়, সেগুলি পাকিস্তানের মতো দেশে অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।ভারতের বক্তব্য, “এই তহবিলগুলি গোপনে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় মদতে পরিচালিত সীমান্তপারে সন্ত্রাসবাদে ব্যবহৃত হতে পারে। এটি শুধু ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বরং আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা ও মূল্যবোধের জন্যও হুমকি।”ভারত হুঁশিয়ারি দেয়, এই ধরনের তহবিল ব্যবহার বৈশ্বিক মূল্যবোধের প্রতি একপ্রকার তামাশা। পাশাপাশি এতে আইএমএফ ও অন্যান্য দাতা সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতাও বিপন্ন হতে পারে।

আরও পড়ুন: Operation Sindoor : পাকিস্তানে বাজছে সাইরেন,বাতিল ট্রেন! উত্তেজনার মুহূর্তে ধস পাক শেয়ার বাজারেও
আইএমএফ-এর নিজস্ব রিপোর্টের উল্লেখ(IMF Approves Fund for Pakistan)
ভারতের প্রতিনিধি উল্লেখ করেন আইএমএফ-এর নিজস্ব একটি মূল্যায়ন রিপোর্ট— “Evaluation of Prolonged Use of IMF Resources”— যেখানে পাকিস্তান সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, রাজনৈতিক বিবেচনার কারণে দেশটিকে বারবার সাহায্য করা হচ্ছে, যদিও তাদের আর্থিক সংস্কার প্রয়াস যথেষ্ট দুর্বল(IMF Approves Fund for Pakistan)।এই রিপোর্টে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে “অর্থনৈতিক যুক্তির চেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনা বেশি কাজ করে।” ভারতের মতে, এটি একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা, যেখানে একটি দেশের ঋণ নীতি বারবার ব্যর্থ হলেও তাকে রেহাই দেওয়া হচ্ছে।
IMF-এর সীমাবদ্ধ প্রতিক্রিয়া এবং ভারতের অবস্থান(IMF Approves Fund for Pakistan)
IMF ভারতের বক্তব্য গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করলেও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে যে, তাদের নিজস্ব নীতিমালায় “প্রক্রিয়াগত ও কারিগরি সীমাবদ্ধতা” রয়েছে, যার ফলে এই ধরণের অভিযোগে তারা সরাসরি পদক্ষেপ নিতে পারে না।অবশেষে ভারত ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকে একটি কূটনৈতিক বার্তা দেয়— আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব শুধু অর্থায়ন নয়, নৈতিকতা রক্ষা করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যৎ ইঙ্গিত(IMF Approves Fund for Pakistan)
সূত্রের খবর অনুযায়ী, ভারতের এই বক্তব্য একাধিক সদস্য দেশের সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ ছিল(IMF Approves Fund for Pakistan)। বিশেষ করে যারা দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে উদ্বিগ্ন, তারা ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেছে।এখন প্রশ্ন উঠছে— IMF কি ভবিষ্যতে পাকিস্তানের মতো দেশগুলির ঋণ প্রক্রিয়ায় নৈতিক দিকগুলিকে আরও গুরুত্ব দেবে? নাকি শুধুই অর্থনৈতিক সূচক আর টেকনিক্যাল রিপোর্টে ভরসা করে আর্থিক সহায়তা চালিয়ে যাবে?পাকিস্তানের অর্থনীতিকে ঘিরে ভারত যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তা কেবল দ্বিপাক্ষিক বিরোধের সীমায় আটকে নেই। বরং এটি একটি বড় প্রশ্ন তুলছে: আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলির দায়িত্ব কি কেবল ঋণ দেওয়া, নাকি তারা বৈশ্বিক শান্তি ও নৈতিকতার সাথেও দায়বদ্ধ? ভারতের সরব ভূমিকা এই বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে।