ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: নতুন চাকরির সুযোগ সবসময়ই রোমাঞ্চকর। ভালো বেতন, নতুন চ্যালেঞ্জ, এবং দায়িত্বের পরিবর্তন কর্মজীবনে এক নতুন অধ্যায় নিয়ে আসে (Income Tax on Notice Period)। তবে এই উত্তেজনার সঙ্গেই আসে কিছু চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন হল পুরোনো চাকরির নোটিশ পিরিয়ড পূরণ করা। অনেক কর্মীর কাছে সমাধান সহজ মনে হয়, নোটিশ পিরিয়ডে কাজ না করে কোম্পানিকে জরিমানার টাকা কাটতে দেওয়া. বিশেষ করে যদি নতুন কোম্পানি সেই টাকা ফেরত দিতে রাজি হয়। কিন্তু বিষয়টি এত সহজ নয়। এই সমাধান অপ্রত্যাশিত করের বোঝা তৈরি করতে পারে, যেখানে কর্মীরা এমন আয়ের উপর কর দিতে বাধ্য হন যা তারা কখনও পাননি।
নোটিশ পিরিয়ড এড়িয়ে যাওয়ার দ্বিগুণ করের ফাঁদ (Income Tax on Notice Period)
নোটিশ পিরিয়ড ছেড়ে দেওয়ার অর্থ শুধুমাত্র বেতন হারানো নয়, বরং এটি দ্বিগুণ করের সমস্যাও তৈরি করতে পারে। কর্মীরা কর দেন তাদের পুরোনো কোম্পানির কাটা বেতনের ওপর এবং নতুন কোম্পানির দেওয়া ক্ষতিপূরণের ওপর। এটি একধরনের করের ফাঁদ (Income Tax on Notice Period), যা অনেককে বিস্মিত করে।
একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝানো যাক (Income Tax on Notice Period)। ধরুন, কোন ব্যক্তি প্রতি মাসে ১ লক্ষ টাকা বেতন পান। চাকরি ছাড়ার সময় তিনি দুই মাসের নোটিশ পিরিয়ডে কাজ করতে রাজি হলেননা। এর ফলে তার কোম্পানি ২ লক্ষ টাকা কেটে নিল, যাকে তারা নোটিশ পিরিয়ড রিকভারি হিসাবে গণ্য করে। অই ব্যক্তি এই কাটা নিয়ে চিন্তিত নন, কারণ তার নতুন কোম্পানি তাকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু তিনি হতবাক হয়ে যাবেন যখন দেখবেন, তার পুরোনো কোম্পানি তার পুরো ১২ মাসের বেতনের উপর কর কেটে নিয়েছে। পাশাপাশি, নতুন কোম্পানি থেকে পাওয়া ২ লক্ষ টাকাও তাঁর করযোগ্য আয়ের মধ্যে পড়ে। এর ফলে, তিনি মোট ১৪ লক্ষের উপর কর দেবেন, যদিও তার প্রকৃত আয় মাত্র ১২ লক্ষ টাকা।
চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা এই ঘটনার ব্যাখ্যা করে বলেন, যদি কোনও কর্মীর বেতন থেকে নোটিশ পিরিয়ড না দেওয়ার কারণে টাকা কাটা হয়, তবে পুরো মোট বেতন (যার থেকে কাটা হয়েছে) করযোগ্য আয় হিসাবে গণ্য হয়। অর্থাৎ, কর্মী এমন আয়ের ওপর কর দেন যা তিনি কখনও পাননি। অন্যদিকে, যদি নতুন কোম্পানি কর্মীকে ক্ষতিপূরণ দেয়, তবে সেটিও তার করযোগ্য আয়ের মধ্যে পড়ে (Income Tax)।
কেন এমন হয়? (Income Tax on Notice Period)
আয়ের উপর কর আরোপের পদ্ধতি অনুযায়ী (Income Tax on Notice Period), এটি “দেওয়া বা পাওয়ার সময়” ভিত্তিক হয়। অ্যাকাউন্টেন্টরা মনে করেন, আয়কর আইনের ধারা ১৫ অনুসারে, বেতন পাওয়ার যোগ্য হলেই কর আরোপ হয়, তা আসলে দেওয়া হোক বা না হোক।
এই আইনে তিন ধরনের বেতন থেকে ছাড় (Income Tax on Notice Period) দেওয়া হয়। সেগুলি হল স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন, এন্টারটেইনমেন্ট অ্যালাউয়েন্সের জন্য ছাড় এবং প্রফেশনাল ট্যাক্স ছাড়। কিন্তু এমন বেতনের উপর কর ছাড়ের কোনো সুবিধা নেই, যা কর্মী কখনও পাননি। অন্যদিকে, ব্যবসায়িক সংস্থাগুলি তাদের ক্ষতিপূরণ বা লোকসানের জন্য কর ছাড় পায়। এই ব্যবধান কর্মীদের জন্য অসুবিধা তৈরি করে এবং তাদের এমন আয়ের উপর কর দিতে বাধ্য করে, যা তারা পাননি।
আরও পড়ুন: Spices Vastu Tips: রান্নাঘরের মশলা ফেরাতে পারে ভাগ্য, জানুন টোটকা
এই সমস্যার সমাধান কীভাবে সম্ভব?
এই কর সমস্যা সমাধান করা ২০২৫ সালের বাজেটে অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
অ্যাকাউন্টেন্টরা প্রস্তাব দেন যে, আয়কর আইনের ধারা ১৬-তে একটি সংশোধনী আনা উচিত, যা নোটিশ পিরিয়ড রিকভারি বাবদ কাটা টাকার জন্য কর্মীদের কর ছাড়ের সুযোগ দেবে। এর ফলে কর্মীদের এমন আয়ের উপর কর দিতে হবে না, যা তারা পাননি। এই প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করতে, কোম্পানিগুলিকে ফর্ম ১৬-এ পৃথকভাবে কাটা টাকার উল্লেখ করতে হবে, যাতে কর্মীদের প্রকৃত আয় সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়।
এছাড়া, দ্বিগুণ কর আরোপ প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যদি নোটিশ পিরিয়ডে কাটা টাকা কোম্পানির আয়ের অংশ হিসাবে ধরা হয়, তবে একইসঙ্গে সেটি কর্মীর আয়ের মধ্যে কর হিসেবে আরোপ করা উচিত নয়।
অ্যাকাউন্টেন্টরা আরও বলেন, এই কর ব্যবস্থাটি অত্যন্ত অন্যায্য। কর্মী এমন আয়ের উপর কর দেন যা তিনি পাননি, আর কোম্পানি সেই কাটা টাকার উপর কর দেয় জা আসলে তার আয়ের অংশ।
আরও পড়ুন: Banarasi Sari: বিয়ের মরশুম, জানুন বাহারি সব বেনারসির কথা
বাজেট ২০২৫-এর প্রত্যাশা
২০২৫ সালের বাজেটে, অর্থ মন্ত্রকের উচিত এই সমস্যাটি সমাধান করা। নোটিশ পিরিয়ড রিকভারি বাবদ কাটা টাকাকে কর্মীদের করযোগ্য আয় থেকে বাদ দেওয়ার একটি বিধান চালু করা উচিত। এটি কর্মীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় স্বস্তি দেবে এবং কর ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।
আনন্দ যেন ফাঁদ না হয়
নতুন চাকরির আনন্দ করের ফাঁদে বাধাপ্রাপ্ত হওয়া উচিত নয়। বর্তমান কর ব্যবস্থায় নোটিশ পিরিয়ড সংক্রান্ত এই অসামঞ্জস্য দূর করা প্রয়োজন। একটি সুষম কর ব্যবস্থা তৈরি করতে এবং কর্মীদের প্রকৃত আয় করযোগ্য করার জন্য ২০২৫ সালের বাজেটে অর্থ মন্ত্রকের সংশোধনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।