Last Updated on [modified_date_only] by Debu Das
ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা এবং তার বদলা হিসেবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এর মাধ্যমে পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিয়েছিল ভারত(IND VS PAK Asia Cup)। এবার ক্রিকেটের বাইশ গজেও বদলা নিল ভারত। রবিবার এশিয়া কাপের হাইভোল্টেজ ম্যাচে পাকিস্তানকে কার্যত ছেলেখেলা করে ২৫ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেটে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে সুপার ফোর-এ পৌঁছে গেল সূর্যকুমার যাদবরা। একপেশে ম্যাচের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দাপট দেখালেন ভারতের ব্যাটার ও বোলাররা। হরভজন সিং-সহ একাধিক প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং দেশের একাংশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই ম্যাচ বয়কটের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু, তা না হলেও, রবিবার দুবাই ক্রিকেট ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে কুলদীপ, সূর্যকুমাররা যেভাবে পাকিস্তানকে দুরমুশ করল, তাতে কেউই আর অখুশি থাকবেন বলে মনে হয় না।
প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের (IND VS PAK Asia Cup)
দুবাইয়ের স্লো টার্নিং উইকেটের কথা মাথায় রেখে এবং চাপহীন থাকতে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পাক অধিনায়ক সলমন আলি আঘা(IND VS PAK Asia Cup)। পহেলগাঁওয়ের আঁচ রবিবার ম্যাচে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখা গেল। টসে জিতে সঞ্চালকের সঙ্গে কথা বলেই মাঠ থেকে বেরিয়ে যান পাক অধিনায়ক আঘা। সৌজন্যতা দেখিয়ে বিপক্ষ অধিনায়কের সঙ্গে করমর্দন করার আগ্রহই দেখালেন না ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। আবার ম্যাচ শেষে পাক ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত না মিলিয়েই সাজঘরে ফিরে গেলেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা।
গত ইউএই ম্যাচের দলই অপরিবর্তিত রেখেছিল ভারত। এবং গত ম্যাচের ছকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শুরু করে গৌতম গম্ভীরের দল। প্রথম চার-পাঁচ ওভার পেসারদের দিয়ে করিয়ে বাকিটা স্পিন অস্ত্রে বিপক্ষকে ঘায়েল করা(IND VS PAK Asia Cup)। ভারত যে এই ছকেই খেলবে, তা খুব ভালো করেই জানতো পাকিস্তান। তবুও চেনা ছকেও কুপোকাত পাক ব্যাটাররা। যাকে বলে, দারুণ পড়াশুনা করেও পরীক্ষায় ফেল করা।
পাক ব্যাটিং লাইনআপ পরাস্ত (IND VS PAK Asia Cup)
ম্যাচের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই পাক ওপেনার সাইম আয়ুবকে (০) খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরত পাঠান হার্দিক পান্ডিয়া(IND VS PAK Asia Cup)। দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে দ্বিতীয় বলেই পাকিস্তান শিবিরে দ্বিতীয় ধাক্কাটি দেন জসপ্রিত বুমরা। আয়ুবের জায়গায় নামা মহম্মদ হ্যারিসকে (৩) ফিরিয়ে দেন ভারতের একমাত্র পেসার। শুরুতেই ৮ বলে মাত্র ছয় রানে দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। সেখান থেকে অপর ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান এবং অভিজ্ঞ ফকর জমান জুটি বেঁধে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টা সুদূরপ্রসারী হয়নি। তৃতীয় উইকেটে দু’জনে মিলে ৩৯ রানের পার্টনারশিপ করলেন(IND VS PAK Asia Cup)। কিন্তু দলকে বিপদমুক্ত করার জন্য সেটা যথেষ্ট ছিল না। অষ্টম ওভারের চতুর্থ বলে ফকরকে (১৭) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন অক্ষর প্যাটেল। সেখানেই পাকিস্তানের বড় রান তোলার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। রক্তের স্বাদ পেয়ে যাওয়া ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব (Suryakumar Yadav) পাক ব্যাটিং লাইনআপকে ধ্বংস করতে তিন স্পিনার নিয়ে আক্রমণ শানান। ভারতের স্পিন ত্রিফলাই এদিন কার্যত শেষ করে দিল পাকিস্তানকে।
দিশেহারা হয়ে আত্মসমর্পণ পাকিস্তানের(IND VS PAK Asia Cup)
এদিন ভারতীয় বোলারদের সামনে কার্যত দিশেহারা হয়ে অসহায় আত্মসমর্পণ করল পাক ব্যাটাররা(IND VS PAK Asia Cup)। আয়ুব থেকে ফারহান সকলেই যেন ভুল শট খেলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। বিশেষ করে তিন স্পিনার কুলদীপ যাদব, অক্ষর প্যাটেল এবং বরুণ চক্রবর্তীই পাকিস্তানকে ধ্বংস করার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। পাক ব্যাটাররা ভারতীয় স্পিন ত্রিফলার চাপে যেভাবে প্রতিটা রানের জন্য কষ্ট করলেন, তাতে মনে হচ্ছিল যে তারা টি-টোয়েন্টি নয় টেস্ট খেলতে নেমেছিল।
গোটা ইনিংসে পাক ব্যাটারা মাত্র ৭টি করে বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি মারতে সক্ষম হয়েছেন। একটা সময় ৬৪ রানের মধ্যে ৬ উইকেট খুইয়ে বসে পাকিস্তান(IND VS PAK Asia Cup)। অধিনায়ক সলমন আঘা (৩) এদিনও দলের বিপদে রান করতে ব্যর্থ। তাঁকে ফেরালেন অক্ষর প্যাটেল। এরপর ১৩তম ওভারে জোড়া ঝটকা দেন সেই কুলদীপ। চতুর্থ ও পঞ্চম বলে হাসান নওয়াজ (৫) ও মহম্মদ নওয়াজকে (০) ফিরিয়ে দেন বাঁহাতি স্পিনার।

আরও পড়ুন: North Korea : বিদেশি সিনেমা দেখলেই মৃত্যুদণ্ড, বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাব রুখতে কিমের কড়া পদক্ষেপ
দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে কামব্যাক করে ২২ গজে উইকেটের ফুলঝুরি ফোটাচ্ছেন কুলদীপ। গত ইউএই ম্যাচে নিয়েছিলেন চার উইকেট। রবিবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও করলেন দুরন্ত বোলিং। ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা পুরস্কার জিতে নিলেন।
ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন শাহীন শাহ আফ্রিদি(IND VS PAK Asia Cup)
১৩ ওভারে মাত্র ৬৪ রানের মধ্যে ছয় উইকেট পড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের কোমরই ভেঙে গিয়েছিল(IND VS PAK Asia Cup)। তবুও একদিকে উইকেট কামড়ে পড়ে থেকে একা কুম্ভ হয়ে দুর্গরক্ষার চেষ্টা করেছিলেন সাহিবজাদা ফারহান। কিন্তু কুলদীপের কাছে তিনিও পরাস্ত হলেন। ৪৪ বলে এক বাউন্ডারি ও তিন ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৪০ রান করে হার্দিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
৮৩ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তান যে একশোর গণ্ডি টপকাতে পারবেনা, তা সকলে যখন ধরেই নিয়েছে, তখনই শেষ বেলায় ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন শাহীন শাহ আফ্রিদি(IND VS PAK Asia Cup)। শেষে ১৬ বলে ৪ বিরাট ছক্কা হাঁকিয়ে ৩৩ রান করে অপরাজিত থেকে দলের রান তিন অক্ষরের গণ্ডি পার করিয়ে চরম লজ্জার হাত থেকে বাঁচান। মাঝে ফাহিম আসরফ (১১) রান করেন। তাঁকে ফেরান বরুণ চক্রবর্তী। এবং সুফিয়ান মুকিম করেন ১০ রান। তাঁকে ফেরান বুমরা। সেই দৌলতে ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৭ রান তোলে পাকিস্তান। কুলদীপ যাদব তিনটি ছাড়াও, অক্ষর প্যাটেল ও বুমরা দু’টি করে এবং হার্দিক ও বরুণ একটি করে উইকেট পেলেন। ন’টির মধ্যে ৬টি উইকেটই নিলেন স্পিনাররা।
২৮ রানের টার্গেট(IND VS PAK Asia Cup)
টি-টোয়েন্টিতে ১২৮ রানের টার্গেট ভারতের মতো দলের কাছে নস্যি। আর সেটাই হল। বোলাররা যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই ব্যাট হাতে পাক নিধন শুরু করেন ভারতের দুই ওপেনার অভিষেক শর্মা এবং শুভমন গিল। শাহীন আফ্রিদির ইনিংসের প্রথম ওভারের প্রথম ও দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি মেরে রণংদেহি মেজাজে শুরু করেন অভিষেক। ভারতীয় স্পিনারদের সাফল্য দেখে পরের ওভারেই আয়ুবকে নিয়ে আসেন পাক অধিনায়ক আঘা। চতুর্থ ও পঞ্চম বল বাউন্ডারিতে পাঠালেও দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে শুভমন গিলকে বোকা বানান আয়ুব।
পাক স্পিনারের বলটা একটু বেশিই টার্ন করায় মিস করেন শুভমন (১০)(IND VS PAK Asia Cup)। পা বাইরে থাকায় সহজেই তাঁকে স্ট্যাম্প আউট করেন পাক উইকেটকিপার হ্যারিস। দ্রুত সতীর্থকে হারালেও থেমে থাকেনি অভিষেকের ব্যাট। একের পর এক বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারি বেরোতে থাকে তাঁর ব্যাট থেকে। অভিষেকের ব্যাটে ওঠা ক্ষণিকের মরুঝরে লন্ডভন্ড হয়ে যায় পাক বোলিং অ্যাটাক। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। চতুর্থ ওভারে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা অভিষেককে ফেরান সেই আয়ুব।
মাত্র ১৩ বলে ৪ বাউন্ডারি ও জোড়া ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৩১ রানের চিত্তাকর্ষক ইনিংস খেলে লংঅফে ফাহিম আসরফের হাতে ধরা পড়েন ভারতীয় ব্যাটিংয়ের রাইজিং স্টার। আর তাতেই ভারতের জয় অনেকটা সহজ হয়ে যায়। অভিষেক যখন আউট হন তখন ভারতের রান ৩.৪ ওভারে ২ উইকেটে ৪১।
৫৬ রানের পার্টনারশিপ
অভিষেক ফিরে গেলেও বাকি কাজটা ঠান্ডা মাথায় সামলে দেন অধিনায়ক সূর্য এবং তিলক ভর্মা। তৃতীয় উইকেটে তাঁদের ৫৬ রানের পার্টনারশিপ ভারতকে জয়ের আরও কাছে পৌঁছে দেয়(IND VS PAK Asia Cup)। যেভাবে দু’জনে ব্যাট করছিলেন, মনে হচ্ছিল জিতিয়েই মাঠ ছাড়বেন তাঁরা। কিন্তু জুটি ভাঙ্গেন সেই আয়ুব। ৩১ বলে জোড়া বাউন্ডারি এবং এক ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৩১ রান করে আউট হন তিলক। ততক্ষণে ম্যাচ ভারতের হাতের মুঠোয়। তিলক যখন আউট হন তখন ভারতের রান ১২.২ ওভারে তিন উইকেটে ৯৭। এই অল্প পুঁজি নিয়ে ভারতের মতো দলকে ঠেকানো কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না পাক বোলারদের। পাকিস্তানের একমাত্র সফল বোলার সাইম আয়ুব। ৪ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে তিনটি শিকারই তাঁর।
তিলক ফিরে গেলেও ঠান্ডা মাথায় অধিনায়কচিত ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করলেন অধিনায়ক সূর্য। ৩৭ বলে পাঁচ বাউন্ডারি এবং এক ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৪৭ রান করে অপরাজিত থেকে যান তিনি। তিলকের জায়গায় নামা শিবম দুবকে সঙ্গে নিয়ে ১৫.৫ ওভারেই দলের জয়ের পাশাপাশি সুপার ফোরে ওঠা নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়লেন ভারত অধিনায়ক। মুকিমকে ছক্কা হাঁকিয়ে রাজকীয় ঢঙেই পাক বধ সারলেন সূর্য। ৭ বলে ১০ রান করে অপরাজিত থেকে যান শিবম দুবে। আগামী ১৯ তারিখ দুর্বল ওমানের বিরুদ্ধে নিয়ম রক্ষার ম্যাচে নামবে ভারত। ক্লিনশিট রেখেই পরের রাউন্ডে ওঠাই এখন একমাত্র লক্ষ্য টিম গম্ভীরের।