ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: শুক্রবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তার আগের রাতেই বাংলাদেশকে কার্যত ‘ভাষাহীন’ করে দিলেন শুভমন গিল, মহম্মদ শামিরা। বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ট্রফিতে (Champions Trophy 2025) অভিযান শুরু করল ভারত। গত কয়েক মাসে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে অবনতি হওয়ার পর ভারতের কাছে এই ম্যাচটা ছিল ‘প্রেস্টিজ ফাইট’। তাতে ‘টাইগারদের’ হারিয়ে সসম্মানেই উত্তীর্ণ মেন ইন ব্লু।
বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। যদিও সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠলেও ২২৮ রানেই অলআউট হয়ে যায় পদ্মা পাড়ের দেশ। একটা সময় ৩৫ রানেই ৫ উইকেট পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। ম্যাচের প্রথম ওভারের শেষ বলেই ওপেনার সৌম্য সরকারকে (০) ফিরিয়ে দেন মহম্মদ শামি। রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাংলাদেশের ওপেনার। তারপরের ওভারেই হর্ষিত রানার বলে বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত (০)।
আরও পড়ুন: Bangladesh Breaks Record: জাকার-হৃদয়ের জোড়া রেকর্ড, ১৯ বছরের পুরনো নজির ভাঙল বাংলাদেশ
ভারত-পাক মহারণের আগে দুরন্ত ফর্মে টিম ইন্ডিয়া (Champions Trophy 2025)
সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মেহেদী হাসান মিরাজকে (৫) ফিরিয়ে তৃতীয় ধাক্কাটি দেন সেই শামি। এখানেই শেষ নয় (Champions Trophy 2025)। নবম ওভারে প্রথম বল করতে এসেই জোড়া ধাক্কা দেন অক্ষর প্যাটেল। ওভারের দ্বিতীয় বলে ওপেনার তানজিদ হাসান (২৫) এবং তার পরের বলেই মুশফিকুর রহিমকে (০) ফেরান অক্ষর। হ্যাটট্রিকের সুযোগও চলে এসেছিল অক্ষরের কাছে। তার পরের বলেই শূন্য রানে ব্যাট করা জাকির আলির ক্যাচ স্লিপে ফেলে দেন রোহিত। শুধু তাই নয়, ১৯.৫ ওভারে কুলদীপ যাদবের বলে তৌহিদ হৃদয়ের সহজ ক্যাচ মিস করেন হার্দিক পান্ডিয়া। তৌহিদ তখন ২৩ রানে ব্যাট করছিলেন। বাংলাদেশের রান তখন ৭৮। আবার রবীন্দ্র জাদেজার ২৩তম ওভারে প্রথম বলে ২৪ রানে ব্যাট করা জাকিরের সহজতম স্ট্যাম্প মিস করেন কেএল রাহুল।

ভারতের দেওয়া এই তিন উপহারেই ২০০ রানের গণ্ডি পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। না হলে বাংলাদেশের ইনিংস আরও অনেক আগেই শেষ হয়ে যেতে পারত। আর জীবন ফিরে পাওয়া জাকির আলি ও তৌহিদ হৃদয়ের ষষ্ঠ উইকেটে ২১০ বলে ১৫৪ রানের পার্টনারশিপের সৌজন্যে ২২৮ রান তোলে বাংলাদেশ (Champions Trophy 2025)। সেঞ্চুরি করেন হৃদয়। হাফ সেঞ্চুরি করে তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দেন জাকির। শেষে ৪৩ তম ওভারে ১৮৯ রানের মাথায় জাকিরকে ফিরিয়ে পার্টনারশিপ ভাঙেন শামি। ১১৪ বলে ৬৮ রান করে বিরাটের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জাকির।
আরও পড়ুন: Manchester City: ম্যানচেস্টার সিটির বিদায়! “পুনর্গঠনের দরকার” জানালেন গুয়ার্দিওলা
তারপর হৃদয় সেঞ্চুরি করলেও বাংলাদেশের রান আর বেশিদূর এগোয়নি। রাসিদ হোসেনকে (১৮) ফেরান হর্ষিত। তানজিম হাসান শাকিব (০), তাসকিন আহমেদকে (৩) দ্রুত ফেরান শামি। শেষে হর্ষিতের বলে শামির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হৃদয়। তার আগে নিজের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বাংলাদেশি ব্যাটার। ১১৮ বলে ৬ বাউন্ডারি ও ২ ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ১০০ রান করেন হৃদয়। ৪৯.৪ ওভারে ২২৮ রানেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
শামির পঞ্চবাণ (Champions Trophy 2025)
চোট সারিয়ে দুরন্ত কামব্যাক করলেন মহম্মদ শামি। ১০ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে একাই নিলেন ৫ উইকেট। আন্তর্জাতিক একদিনের ক্রিকেটে ২০০ উইকেটের ক্লাবেও ঢুকে পড়লেন শামি। তিনটি উইকেট নিলেন হর্ষিত রানা এবং দু’টি উইকেট নিলেন অক্ষর প্যাটেল। তবে এদিন বল হাতে ব্যর্থ কুলদীপ যাদব। সুযোগের সদব্যবহার করতে পারলেন না ভারতের এই বাঁহাতি স্পিনার। ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৪৩ রান দিয়ে উইকেটহীন রয়ে গেলেন (Champions Trophy 2025)। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে দুরন্ত বল করা বরুণ চক্রবর্তীকে প্রথম একাদশে কেন কোচ গৌতম গম্ভীর রাখলেন না, তা সকলেরই অজানা। তবে, জশপ্রীত বুমরার অভাব দুরন্ত কামব্যাকে পূরণ করে দিলেন শামি। পেস অ্যাটাকে ভরসা যোগালেন হর্ষিতও।
গিলের সেঞ্চুরিতে বাংলার বাঘ বধ (Champions Trophy 2025)
জবাবে সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৪৬.৩ ওভারে ২১ বল বাকি থাকতেই চার উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় ভারত। ভারতের হয়ে সেঞ্চুরি করলেন ম্যাচের সেরা শুভমন গিল। ১২৯ বলে ৯ বাউন্ডারি ও জোড়া ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ১০১ রান করে অপরাজিত থেকে ভারতকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন রোহিত শর্মার ডেপুটি (Champions Trophy 2025)। গিলের সঙ্গে ৪৭ বলে ৪১ রান করে অপরাজিত থেকে ভারতের জয় আরও মসৃণ করলেন কেএল রাহুল। এদিন শুরুটা ভালোই করেছিলেন রোহিত শর্মা ও গিল। ৩৬ বলে ৭ বাউন্ডারির সাহায্যে ৪১ রান করেন রোহিত। অযথা তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে তাসকিন আহমেদের বলে রিসাদ হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ভারত অধিনায়ক। তাঁর জায়গায় ব্যাট করতে নামা বিরাট কোহলি আবারও ব্যর্থ। ৩৮ বলে ২২ রান করে ফিরলেন বিরাট।

আরও পড়ুন: Pak Air Show in Karachi: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে পাক এয়ার শো! ভয়ে কাঁটা নিউজিল্যান্ড দল
রিসাদের বলে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিলেন। রান পেলেন না শ্রেয়স আইয়ার (১৫) ও অক্ষর প্যাটেলও (৮)। শ্রেয়সকে ফেরালেন মুস্তাফিজুর। আর অক্ষরকে ফেরালেন রিসাদ। তখন ৩০.১ ওভারে ভারতের রান ৪ উইকেটে ১৪৪। দ্রুত ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ায় ভারতীয় ড্রেসিংরুমও কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছিল। উইকেট মন্থর হয়ে যাওয়ায় ব্যাট করাটা তখন একটু কঠিনও হয়ে গিয়েছিল। ব্যাটে বল থেমে আসছিল। (Champions Trophy 2025) কিন্তু ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করে স্কোরবোর্ডকে সচল রেখে ভারতকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে গেলেন গিল ও রাহুল। পঞ্চম উইকেটে দু’জনের ৮৭ রানের পার্টনারশিপই ভারতের জয় নিশ্চিত করে দেয়। এদিন দু’জনের ব্যাটিংই প্রশংসাযোগ্য। বিশেষ করে গিলের। যেভাবে ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করে একা হাতে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন, তা তারিফযোগ্য। দু’জনের কাঁধে ভর করেই ৪৬.৩ ওভারেই ৬ উইকেটে জয় তুলে নেয় ভারত।
তবে, ১৬৬ রানের মাথায় তাসকিনের ৩৭ ওভারের দ্বিতীয় বলে ডিপ মিডঅনে ৯ রানে ব্যাট করা রাহুলের সহজ ক্যাচ জাকির আলি মিস না করলে ভারতের জয় যে আরও কিছুটা কঠিন হতো, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। জাকির ক্যাচ ফস্কাতেই রোহিত শর্মাকে আঙ্গুল দেখিয়ে উচ্ছ্বাস করতেও দেখা গেল। অনেকটা শোধ-বোধের মতো। কারণ এই জাকিরেরই ক্যাচ ফেলেছিল তিনি। আর তার সুবাদেই বাংলাদেশ এত রান করতে পারে।
আরও পড়ুন: East Bengal: মিনি ডার্বিতে মশাল জ্বালিয়ে সুপার সিক্সের আশা জিইয়ে রাখল ইস্টবেঙ্গল
তবে, শেষ ভালো যার সব ভালো তার। আর গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রান করে দলের জয়ে অবদানে রাখতে পারায় তাঁর ফর্ম নিয়ে চলা সমালোচনাতেও কিছুটা জল ঢালতে পারলেন রাহুল। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন গম্ভীরও। কারণ, ঋষভ পন্থকে বসিয়ে রাহুলকে প্রথম একাদশে রাখায় দলের মধ্যেই অসন্তোষের মুখে পড়েছিলেন গম্ভীর। এক সম্মানের ম্যাচ জেতার সঙ্গে সঙ্গেই এবার ভারতীয় ড্রেসিং রুমে ঢুকে পড়ল পাকিস্তান ম্যাচ (Champions Trophy 2025)। আগামী রবিবার এই দুবাইয়েই প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারা বাবর আজাম, শাহিন আফ্রিদিদের মুখোমুখি হবে রোহিত ব্রিগেড। এবার সেই ম্যাচের দিকেই মুখিয়ে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব।