ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমী দেশগুলির কড়া অবস্থান সত্ত্বেও ভারত নিজের সিদ্ধান্তে অনড়(India US Tarif War)। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন— রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনে তা পুনরায় খোলা বাজারে বিক্রি করা হলে তার পরিণতি গুরুতর হবে। ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক আরও বাড়ানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের সরাসরি হুঁশিয়ারি (India US Tarif War)
ভারতীয় সময় অনুযায়ী সোমবার রাত ৮টা ২০ মিনিট নাগাদ ট্রাম্প (Donald J. Trump) তাঁর সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে লিখেছেন,“ভারত যে শুধু রাশিয়ার থেকে বিপুল পরিমাণে তেল কিনছে তা নয়, বরং মুনাফার জন্য সেই তেল খোলা বাজারে বিক্রিও করছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ হাজার হাজার মানুষের প্রাণ নিচ্ছে, অথচ ভারত তা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করছে না। এই কারণেই আমি ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক আরও বৃদ্ধি করব।”
ট্রাম্প ঠিক কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন, তা স্পষ্ট না হলেও গত সপ্তাহেই তিনি ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন। সঙ্গে ছিল রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার জন্য একটি ‘জরিমানা’ আরোপের হুমকি। যদিও জরিমানার অঙ্ক এখনও প্রকাশ্যে আসেনি(India US Tarif War)।
রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ হয়নি (India US Tarif War)
ট্রাম্পের এই হুমকির মাঝেই রয়টার্স-এর একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়(India US Tarif War), ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি সংস্থা—
- ইন্ডিয়ান অয়েল
- হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম
- ভারত পেট্রোলিয়াম
- ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস
গত সপ্তাহে রাশিয়া থেকে তেল কেনা সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছে। তবে ভারত সরকার এই দাবিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল স্পষ্ট করেছেন,
“বাজারের পরিস্থিতি এবং আমাদের জাতীয় স্বার্থ মাথায় রেখেই আমরা জ্বালানি আমদানি করি। তেল আমদানির ক্ষেত্রে ভারত সবসময় নিজের প্রয়োজনকেই অগ্রাধিকার দেবে।”
অর্থাৎ, ওয়াশিংটনের চাপ সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে তেল কেনার নীতি অবিকৃত থাকছে। সরকারি সূত্রগুলিও জানাচ্ছে, এখনই রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি বাণিজ্য বন্ধের কোনও পরিকল্পনা নেই।

কেন রাশিয়ার তেল ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ? (India US Tarif War)
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়া ভারতকে বড় ধরনের ছাড় দিয়ে তেল বিক্রি করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম বেড়ে গিয়েছিল, তখনও রাশিয়া থেকে আমদানিকৃত ডিসকাউন্টেড তেল ভারতের অর্থনীতিকে স্বস্তি দেয়(India US Tarif War)। বর্তমানে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ, এবং জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য বহুমুখী সরবরাহ নিশ্চিত করাই নীতি।
পাশাপাশি, তেল কেনার মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কও মজবুত হচ্ছে, যা ওয়াশিংটনের অস্বস্তির বড় কারণ।
আমেরিকার অভিযোগ কী? (India US Tarif War)
ওয়াশিংটনের অভিযোগ, ভারত কেবল রাশিয়া থেকে তেল কিনছে না, বরং রিফাইনিংয়ের পর সেই তেল আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করছে, এমনকি ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারেও সেই পণ্য পৌঁছচ্ছে। এর ফলে রাশিয়ার অর্থনীতির উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কমে যাচ্ছে। এই কারণেই ট্রাম্প ভারতের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শুল্ক এবং অর্থনৈতিক চাপের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন।

কূটনৈতিক সমীকরণে নতুন টানাপোড়েন (India US Tarif War)
গত কয়েক বছরে ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক গভীর হয়েছে। কোয়াড (QUAD)-এর মতো কৌশলগত জোটে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তবু রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং জ্বালানি নির্ভরতা আমেরিকার অস্বস্তি বাড়াচ্ছে।
ভারত অবশ্য সবসময় বলেছে,“আমরা গ্লোবাল সাউথ-এর স্বার্থে সুলভ জ্বালানি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। নিষেধাজ্ঞা জাতিসংঘ অনুমোদিত না হলে তা মানার বাধ্যবাধকতা আমাদের নেই।”
এই অবস্থানেই ভারত অনড়।
আগামী দিনে কী হতে পারে? (India US Tarif War)
- আমেরিকা শুল্ক বৃদ্ধি করলে ভারতীয় রপ্তানি খাতে বড় ধাক্কা লাগতে পারে, বিশেষ করে টেক্সটাইল, স্টিল, কেমিক্যাল এবং ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরে।
- ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমায়, তবে অর্থনৈতিক প্রভাব এবং জ্বালানি সংকট দেখা দিতে পারে।
- ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমেরিকা-ভারত সম্পর্কে নতুন উত্তেজনার সম্ভাবনা, যা কোয়াড ও ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলকে প্রভাবিত করতে পারে।
রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিয়ে ভারত যে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে, তা স্পষ্ট(India US Tarif War)। কিন্তু আমেরিকার চাপ এবং শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি আগামী দিনে দুই দেশের সম্পর্ককে পরীক্ষা করবে। একদিকে ভারত অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও জ্বালানি নিরাপত্তা, অন্যদিকে ওয়াশিংটনের ভূ-রাজনৈতিক চাপ— এই দ্বন্দ্ব কতদিন চলবে, সেটাই এখন প্রশ্ন।