ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারত এবং চিনের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে (India China) । ২০২৫ সালে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ৭৫ বছরে পদার্পণ করেছে। এই উপলক্ষে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (Xi Jinping) ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে (Droupadi Murmu) একটি বিশেষ চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে দুই দেশের যৌথ সহযোগিতার গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তবে এই বার্তা এমন এক সময় এসেছে, যখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং ভূরাজনীতি নানা জটিলতার সম্মুখীন।
জিনপিংয়ের চিঠি (India China)
চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাঁর চিঠিতে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন (India China) । তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ‘‘ভারত ও চিনের সহযোগিতার সিদ্ধান্ত একেবারেই সঠিক, এবং দুই দেশের মানুষের স্বার্থেই ড্রাগন ও হাতির এক ছন্দে নাচা প্রয়োজন।’’ এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, চিন ভারতকে পাশে চাইছে এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্তরে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনের এই বার্তা শুধু সৌজন্যমূলক নয়, বরং একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। আমেরিকার সঙ্গে চলমান শুল্কযুদ্ধের আবহে চিন চাইছে ভারতকে আরও কাছাকাছি আনতে, যাতে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তারা শক্তিশালী অবস্থান বজায় রাখতে পারে।
শুল্কযুদ্ধ এবং ভারত-চিন সম্পর্ক (India China)
বর্তমানে আমেরিকা ও চিনের মধ্যে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে (India China)। ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) প্রশাসন ইতোমধ্যেই চিনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। ভারতীয় পণ্য আমদানি সম্পর্কেও একই ধরনের কড়াকড়ি আসতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলছে। এই পরিস্থিতিতে চিন ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে, যাতে তারা আমেরিকার চাপ কমাতে পারে।এর আগেও চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছিলেন, ভারত ও চিনকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে যৌথ অবস্থান নিতে হবে। এবার সেই বার্তাকেই আরও জোরালো করলেন প্রেসিডেন্ট জিনপিং।

সীমান্ত সমস্যা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক (India China)
ভারত ও চিনের সম্পর্কের ইতিহাস সীমান্ত সংঘর্ষের কারণে বহুবার উত্তপ্ত হয়েছে (India China) । ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পরও ২০১৭ সালের ডোকলাম সংকট এবং ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষ দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে বড় ফাটল তৈরি করেছিল। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা কিছুটা কমানো সম্ভব হয়েছে, তবু পুরোপুরি সমাধান এখনও হয়নি।শি জিনপিং তাঁর চিঠিতে সীমান্ত পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বার্তা দিয়েছেন, যা ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বার্তাটি মূলত কৌশলগত কারণেই দেওয়া হয়েছে, কারণ চিনের অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক স্বার্থ এতে জড়িত।

ভারতের প্রতিক্রিয়া (India China)
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও চিনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন (India China) । তিনি বলেছেন, ‘‘ভারত ও চিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইতিহাস দীর্ঘদিনের এবং এই সম্পর্ক ভবিষ্যতেও আরও শক্তিশালী হবে।’’ ভারত সরকারের পক্ষ থেকেও দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংও একে অপরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
ভারত চিন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ (India China)
চিন এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা থাকলেও কিছু বাস্তব চ্যালেঞ্জও রয়েছে (India China) ।
- সীমান্ত সমস্যা: সীমান্ত বিবাদের পুরোপুরি সমাধান না হলে, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বজায় থাকবে।
- অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা: ভারত এবং চিন উভয়ই বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছে। ফলে এই প্রতিযোগিতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
- বৈশ্বিক রাজনীতি: আমেরিকা, রাশিয়া এবং অন্যান্য শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। ভারতকে কৌশলগতভাবে সাবধানে এগোতে হবে, যাতে কোনো বিশেষ পক্ষের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীল না হয়ে পড়ে।
ভারত ও চিন সম্পর্কে নতুন মোড় (India China)
ভারত ও চিনের সম্পর্ক নতুন মোড় নিচ্ছে (India China) । প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বার্তা এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায় যে, দুই দেশই পারস্পরিক সহযোগিতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক কতটা মজবুত হবে, তা নির্ভর করবে সীমান্ত সমস্যা, বাণিজ্য নীতি এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ওপর। যদি দুই দেশ কৌশলগত দিক থেকে যৌথভাবে এগোতে পারে, তবে তারা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।