Last Updated on [modified_date_only] by Debu Das
ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : ইজরায়েলের সাম্প্রতিক কাতার হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) কড়া প্রতিক্রিয়া ঘিরে ভারতে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে(India On Qatar Strike)। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—ভারত কি তবে ঐতিহ্যগত মিত্র ইজরায়েল থেকে দূরে সরে গিয়ে ইসলামী বিশ্ব, বিশেষত উপসাগরীয় দেশগুলির দিকে কূটনৈতিক ঝুঁক নিচ্ছে? বাস্তব চিত্র অবশ্য অনেক বেশি জটিল।
কাতারে আসলে কী ঘটেছিল? (India On Qatar Strike)
৭ই সেপ্টেম্বর ইজরায়েল “Summit of Fire” নামে অভিযানের অংশ হিসেবে দোহায় বিমান হামলা চালায়(India On Qatar Strike)। লক্ষ্য ছিল হামাস নেতারা, কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে কাতারের কাতারা জেলায় একটি আবাসিক কমপ্লেক্সে। এতে নিহত হন পাঁচ হামাস সদস্য, এক কাতারি নিরাপত্তা আধিকারিক এবং কয়েকজন সাধারণ নাগরিক।
ইজরায়েল দাবি করে, হামাস নেতারা সেখানে বসে নতুন হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল এই আক্রমণকে কাতারের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া(India On Qatar Strike)
৯ই সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী মোদি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন(India On Qatar Strike)। ভারত সরাসরি আক্রমণটিকে “ভ্রাতৃপ্রতীম কাতারের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত” বলে নিন্দা জানায়। কাতারের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মোদি একে “cowardly attack” বলে উল্লেখ করেছেন এবং আঞ্চলিক শান্তি ও আন্তর্জাতিক আইন রক্ষার পক্ষে ভারতের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি কাতারের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানান এবং জ্বালানি, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
ভারতের অবস্থান ভারসাম্য রক্ষা(India On Qatar Strike)
সমালোচকরা বলছেন—ভারত নিজে পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসবিরোধী বিমান হামলা চালিয়েছে, অথচ ইজরায়েলকে কাতারে একই ধরনের পদক্ষেপের জন্য দায়ী করছে।
তবে দুই ঘটনার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।(India On Qatar Strike)সমালোচকরা বলছেন—ভারত নিজে পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসবিরোধী বিমান হামলা চালিয়েছে, অথচ ইজরায়েলকে কাতারে একই ধরনের পদক্ষেপের জন্য দায়ী করছে।
তবে দুই ঘটনার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।
- ভারতের হামলা (অপারেশন সিন্দূর): জম্মু–কাশ্মীরের পাহালগামে ২৬ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হওয়ার পর পাকিস্তান থেকে উৎসারিত সন্ত্রাসবাদ দমনে আত্মরক্ষার অধিকার (জাতিসংঘ চার্টারের ৫১ অনুচ্ছেদ) প্রয়োগ করে।
- ইজরায়েলের হামলা: একটি নিরপেক্ষ দেশ কাতারে তাদের অনুমতি ছাড়াই বিমান হামলা চালানো হয়। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এটিকে সরাসরি সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন ধরা হচ্ছে।
অতএব ভারত মনে করছে, নিজের নিরাপত্তা রক্ষায় পাকিস্তানে হামলা যুক্তিসঙ্গত, কিন্তু কাতারে ইজরায়েলের পদক্ষেপ অযৌক্তিক ও বিপজ্জনক।

আরও পড়ুন : SC On India Pak Match : সুপ্রিম কোর্টে খারিজ জনস্বার্থ মামলা, সময় মতোই হবে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ
ভারতের দ্বিমুখী কূটনীতি না কি কৌশলগত ভারসাম্য?
ভারতের পশ্চিম এশিয়া নীতি বরাবরই “সামঞ্জস্যপূর্ণ”(India On Qatar Strike)।
- ইজরায়েল: প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি, গোয়েন্দা সহযোগিতা ও কৃষি উদ্ভাবনে ভারতের প্রধান অংশীদার।
- কাতার: ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১.৬৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। প্রায় সাত লাখ ভারতীয় কাতারে কর্মরত, যারা দেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান।
এই বাস্তবতায় ভারত একপাক্ষিক হতে পারে না। কূটনৈতিক ভারসাম্যই তার প্রধান হাতিয়ার।
আরও পড়ুন : Nepal Gen Z Protest : কে হবেন নেপালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান? মতভেদ আন্দোলনকারীদের মধ্যেই
সার্বভৌমত্ব প্রসঙ্গে ভারতের অবস্থান(India On Qatar Strike)
আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সার্বভৌমত্বের নীতি সবসময় একরকম প্রয়োগ হয় না। জাতীয় নিরাপত্তার তাগিদে একদেশ যেখানে সীমান্তপারের হামলা ন্যায্যতা দেয়, অন্যদেশের ক্ষেত্রেই সেই যুক্তি দুর্বল মনে হয়(India On Qatar Strike)।
ভারতের ক্ষেত্রেও তাই—
- পাকিস্তানে হামলা জাতীয় স্বার্থ রক্ষার উপায়,
- কাতারে ইজ়রায়েলের হামলা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্টকারী পদক্ষেপ।
এটাই ভারতের কৌশলগত বার্তা।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া(India On Qatar Strike)
ইজরায়েলের কাতার হামলায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানিয়েছেন—যা অভূতপূর্ব(India On Qatar Strike)। ফলে এই ঘটনায় ইজরায়েলের কূটনৈতিক অবস্থান আরও কঠিন হতে পারে। ভারত সেই শূন্যস্থান ব্যবহার করে আরব বিশ্বে নিজের প্রভাব বাড়াতে চাইছে বলেই বিশ্লেষকদের মত।
ভারতের ইজরায়েল নিন্দা করা মানেই যে সম্পর্ক ছিন্ন করা নয়, সেটিই মূল বিষয়। বরং এটি ভারতের বহুমুখী কূটনীতির নিখুঁত উদাহরণ। একদিকে ইজরায়েলের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অটুট থাকবে, অন্যদিকে উপসাগরীয় দেশগুলির সঙ্গে অর্থনৈতিক ও প্রবাসী-সংক্রান্ত স্বার্থ রক্ষা হবে।
অর্থাৎ, ভারত কোনও একপক্ষ বেছে নিচ্ছে না—বরং সমান্তরালভাবে দুই পক্ষকেই সামলাচ্ছে। বাস্তবতা হলো, বর্তমান ভূরাজনীতির অস্থিরতায় এটাই ভারতের সবচেয়ে কার্যকর কৌশল।