ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া নৃশংস জঙ্গি হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে (India Pakistan Relations)। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, এই হামলা এক ঐতিহাসিক মোড় এনে দিতে পারে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চুক্তিগুলোর ভবিষ্যতের ওপর। নয়াদিল্লি ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছে, পাকিস্তানের প্রতি কূটনৈতিক সহনশীলতা কমিয়ে, এবার আরও কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে সিন্ধু জলচুক্তি। ১৯৬০ সালে বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত এই চুক্তি অনুসারে, সিন্ধু নদব্যবস্থার অন্তর্গত বিতস্তা ও চন্দ্রভাগার জলপ্রবাহের অধিকাংশই—প্রায় ৮০ শতাংশ—পাকিস্তান ব্যবহার করে থাকে। ভারতের হাতে থাকে মাত্র ২০ শতাংশের ব্যবহারাধিকারের সুযোগ। তবে এই সীমিত অধিকার থাকা সত্ত্বেও, ভারত চুক্তি মেনে নদীর জল আটকে রাখতে পারে না।
বাতিলের পথে সিন্ধু জলচুক্তি (India Pakistan Relations)
কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই নয়াদিল্লির অভিযোগ, ইসলামাবাদ সীমান্ত পারের জঙ্গিদের আশ্রয় দিচ্ছে এবং সিন্ধু চুক্তিকে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে ব্যবহার করছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত পাকিস্তানকে একটি কড়া নোটিস পাঠিয়েছিল, যেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছিল—চুক্তির শর্ত পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে।
আরও পড়ুন: Udhampur Search Operation: পহেলগাঁও হামলার পর জোরদার জঙ্গি দমন অভিযান, উধমপুরে শহিদ এক জওয়ান…
এবার পহেলগাঁওয়ে হামলার ঘটনার পর, ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি ঘোষণা করেছেন, সীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সিন্ধু জলচুক্তি কার্যকর থাকবে না (India Pakistan Relations)। অর্থাৎ, কার্যত চুক্তি থেকে সরে আসার পথে এগোচ্ছে ভারত।

এমন পরিস্থিতিতে চুক্তি বাতিল হলে তার সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে পাকিস্তানের কৃষি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা। পাকিস্তানের কৃষিকাজে ব্যবহৃত জলের ৮০-৯০ শতাংশই আসে সিন্ধু নদ থেকে। করাচি, লাহোর, মুলতানের মতো শহরগুলির পানীয় জল এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনও নির্ভর করে এই নদীর ওপর। দেশের জিডিপির প্রায় এক-চতুর্থাংশ নির্ভর করে এই নদীর জলের সরবরাহের উপরেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলচুক্তি কার্যকর না থাকলে পাকিস্তানে তীব্র জলসংকট দেখা দেবে এবং অর্থনৈতিক পরিকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে (India Pakistan Relations)। ভারত, এইভাবে চুক্তি বাতিল করে, কূটনৈতিক ভাষায় নয়—বাস্তব দুনিয়ায় ‘ভাতে মারা’র কৌশল প্রয়োগ করতে পারে।
সব মিলিয়ে, পহেলগাঁও হামলার প্রতিক্রিয়ায় নয়াদিল্লির কড়া বার্তা স্পষ্ট—সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিলে, তার কূটনৈতিক ও বাস্তবিক মূল্য চুকাতেই হবে।