ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে ফের ভারতকে সরাসরি হুমকি দিল পাকিস্তান (India Pakistan Tensions)। বৃহস্পতিবার পাক সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধরি এক সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বলেন, “আপনারা যদি আমাদের জল আটকে দেন, তা হলে আমরা আপনাদের নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেব।” এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে নয়াদিল্লিতে, যদিও সরকারিভাবে এখনো কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
পাক প্রশাসন ও জঙ্গিদের মধ্যে আঁতাঁত (India Pakistan Tensions)
বিশ্লেষকদের মতে, এই মন্তব্য শুধু একটি সামরিক হুমকি নয়, বরং তা পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও জঙ্গি শক্তির মধ্যে গভীর আঁতাঁতের ইঙ্গিতও বহন করে (India Pakistan Tensions)। কারণ, সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে লশকর-এ-ত্যায়বার প্রধান এবং মুম্বই হামলার মূল চক্রী হাফিজ সইদকে একই ভাষায় ভারতকে হুমকি দিতে দেখা গিয়েছে। যদিও ভিডিওটির সত্যতা যাচাই হয়নি, তথাপি পাক সেনা মুখপাত্রের বক্তব্য সেই হুমকির সঙ্গেই এক সুরে মিলে যাচ্ছে।
হিংসাত্মক মন্তব্য (India Pakistan Tensions)
এই পরিপ্রেক্ষিতে নয়াদিল্লির এক কূটনৈতিক সূত্র জানায়, “জলবণ্টন চুক্তিকে কেন্দ্র করে এ ধরনের হিংসাত্মক মন্তব্য স্পষ্টতই আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গ করছে(India Pakistan Tensions)। সিন্ধু চুক্তি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, যার নেপথ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতা। এই ধরনের মন্তব্য পাকিস্তানের জঙ্গি ও সামরিক শক্তির অন্তর্নিহিত সমন্বয়কেই তুলে ধরে।”প্রসঙ্গত, ১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের (Shehbaz Sharif) মধ্যে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু ও তার উপনদীগুলির জল দুই দেশের মধ্যে নির্দিষ্টভাবে ভাগ করা হয়। পাকিস্তান পায় সিন্ধু, ঝেলম ও চেনাব নদীর অধিকাংশ জল, আর ভারত পায় রবি, বিয়াস ও সতলজ। চুক্তি অনুসারে, দুই দেশ পরস্পরের সঙ্গে নিয়মিত তথ্য বিনিময় করবে এবং জলধারণ ও নিঃসরণের বিষয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখবে।
রক্ত ও জল একসঙ্গে বইতে পারে না (India Pakistan Tensions)
কিন্তু গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন ভারতীয় নাগরিক নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতির মোড় ঘুরে যায় (India Pakistan Tensions)। নয়াদিল্লি সরাসরি পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিদের এই হামলার জন্য দায়ী করে এবং এর পরেই সিন্ধু চুক্তি কার্যত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কেন্দ্রের ভাষায়, “রক্ত ও জল একসঙ্গে বইতে পারে না।” সেই থেকেই ইসলামাবাদ প্রবল চাপের মুখে রয়েছে। এই চুক্তি পুনরায় কার্যকর করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি ভারত।
আরও পড়ুন: Infiltration Foiled : ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরই ৫০ জঙ্গিকে অনুপ্রবেশের চেষ্টা পাকিস্তানের!
পাক সেনা মুখপাত্রের হুমকি (India Pakistan Tensions)
এমন অবস্থায় পাক সেনা মুখপাত্রের হুমকি এবং বিলাবল ভুট্টো জারদারির মতো নেতার পূর্ববর্তী মন্তব্য—“সিন্ধু দিয়ে জল না এলে, রক্ত বইবে”—দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলছে (India Pakistan Tensions)। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত এই মুহূর্তে ‘জল কূটনীতি’কে হাতিয়ার করে পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়াতে চায়। তবে, একই সঙ্গে এই কূটনৈতিক লড়াই যাতে সংঘর্ষে রূপ না নেয়, সেদিকেও সতর্ক নজর রাখতে হবে নয়াদিল্লিকে। সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তিকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের এক ভারসাম্য বজায় ছিল। কিন্তু জঙ্গি কার্যকলাপ এবং সামরিক নেতৃত্বের উসকানিমূলক ভাষ্য সেই ভারসাম্যকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এবার দেখার, ভারত এই সংকটের মোকাবিলায় কোন পথ বেছে নেয়—সংলাপ না কৌশলগত প্রতিরোধ।
