ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: চিনের দোরগোড়ায় কৌশলগত উপস্থিতি বাড়িয়ে রবিবার থেকে বিতর্কিত দক্ষিণ চিন সাগরে শুরু হয়েছে ভারতীয় নৌসেনা ও ফিলিপিন্স নৌবাহিনীর যৌথ যুদ্ধমহড়া(India Philippines Naval Dril)। আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সমুদ্রপথের স্বাধীনতা রক্ষায় এই মহড়ার তাৎপর্য বিশাল, বিশেষত যখন চিনের সঙ্গে ফিলিপিন্সের সীমান্ত বিরোধ চরমে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই মহড়া? (India Philippines Naval Dril)
দক্ষিণ চিন সাগর দীর্ঘদিন ধরেই ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্র(India Philippines Naval Dril)। বেজিং দাবি করে, প্রায় সমগ্র জলসীমাই তাদের অধিকারভুক্ত। এই দাবি নিয়ে ফিলিপিন্স, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ব্রুনেইয়ের মতো দেশগুলির সঙ্গে চিনের দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ চলছে। ভারতের (IN) এই যৌথ মহড়া সেই বিরোধের আবহে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ নয়াদিল্লি প্রথমবার নয়, আবারও দক্ষিণ চিন সাগরে কৌশলগত বার্তা দিচ্ছে।
ফিলিপিন্সের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ রোমিও ব্রাউনার জানিয়েছেন, মহড়া তাদের এক্সক্লুসিভ ইকনমিক জোন (EEZ)-এর মধ্যে হচ্ছে। তবে একই সময়ে মহড়ার এলাকা থেকে মাত্র ২৫ নটিক্যাল মাইল দূরে চিনা নৌবাহিনীর দুটি ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ডেস্ট্রয়ার জাহাজ দেখা গিয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও স্পর্শকাতর করে তুলেছে।
চিন-ফিলিপিন্স বিরোধের ইতিহাস (India Philippines Naval Dril)
ফিলিপিন্সের সঙ্গে চিনের বিরোধের অন্যতম কেন্দ্র সেকেন্ড থমাস শোল(India Philippines Naval Dril)। ১৯৯৯ সালে ফিলিপিন্স নৌবাহিনী একটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন জাহাজকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার শুরু করে। পরে ২০১২ সালে স্কারবোরো শোলের নিয়ন্ত্রণ নেয় চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি, যা দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল।
দক্ষিণ চিন সাগরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব (India Philippines Naval Dril)
২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের মোট বাণিজ্য পণ্যের ২১% পরিবহণ হয় এই সাগরপথে। বর্তমান সময়ে সেই পরিমাণ আরও বেড়েছে। ফলে এই জলসীমার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিযোগিতা তীব্রতর হয়েছে। চিন তার দখলদারি কৌশল জোরদার করেছে, আর আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ফিলিপিন্সের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা বেজিংয়ের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

আরও পড়ুন: Russia China Navy Dril : জাপান সাগরে রাশিয়া-চিনের যৌথ ডুবোজাহাজবিরোধী মহড়া!
কোয়াড এবং ভারতের কৌশল (India Philippines Naval Dril)
দক্ষিণ চিন সাগরে ভারতের সক্রিয়তা নতুন নয়। পূর্ব লাদাখে চিনা সেনার অনুপ্রবেশের সময়ও ভারতীয় নৌসেনার যুদ্ধজাহাজ সেখানে মোতায়েন করা হয়েছিল। এখন কোয়াড জোটের (আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত) পাশাপাশি ফিলিপিন্সের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সামরিক সহযোগিতা এই অঞ্চলে নয়াদিল্লির কৌশলগত অবস্থানকে শক্তিশালী করছে।
ভারত মহাসাগরেও চিনের তৎপরতা (India Philippines Naval Dril)
দক্ষিণ চিন সাগরের পাশাপাশি ভারত মহাসাগরেও বেজিং তার উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে চিনা গবেষণা জাহাজের আনাগোনা এর প্রমাণ। গত বছরের মার্চে অন্তত চারটি চিনা জাহাজ—শিয়াং ইয়াং হং-০১, শিয়াং ইয়াং হং-০৩, ইউয়ান ওয়াং-০৩ এবং ডা ইয়াং হাও—ভারত মহাসাগরে দেখা গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে ভারতের কৌশলগত উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে।

বার্তা পরিষ্কার (India Philippines Naval Dril)
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মহড়া শুধু প্রতীকী পদক্ষেপ নয়, বরং ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির বাস্তব রূপ। সমুদ্রপথের স্বাধীনতা রক্ষার প্রশ্নে নয়াদিল্লি আপস করবে না—এটাই মূল বার্তা।