ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতের সঙ্গে আমেরিকার আসন্ন বাণিজ্যচুক্তির জল্পনার মাঝেই উদ্বেগ প্রকাশ করল চিন। কোনও দেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্যচুক্তিতে চিনের স্বার্থ বিঘ্নিত হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে— এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছে শি জিনপিংয়ের (Xi Jinping) প্রশাসন(India US Trade Talks)। যদিও নির্দিষ্ট করে ভারতের নাম নেয়নি বেজিং, তবে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল মনে করছে, এই মন্তব্য ভারতের দিকেই সরাসরি ইঙ্গিতবাহী।
‘বৈধ অধিকার রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ’ (India US Trade Talks)
চিনের বাণিজ্য মন্ত্রকের তরফে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা আমেরিকার সঙ্গে অন্যান্য দেশের বাণিজ্যিক বোঝাপড়াকে স্বাগত জানাই(India US Trade Talks)। তবে সেই বোঝাপড়ায় যদি চিনের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়, তবে চিন চুপ করে থাকবে না। নিজেদের বৈধ অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনে কড়া পদক্ষেপ করব।” চিনা সংবাদমাধ্যম South China Morning Post সূত্রে এই বার্তা আরও গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “বহুপাক্ষিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিধি যেন মানা হয়, তা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। কোনওরকম অসাম্য বা পক্ষপাত যদি দেখা যায়, তার বিরুদ্ধেও আমরা সোচ্চার হব।”
ভারত-আমেরিকা চুক্তিতে কোন বিষয়ে মতভেদ? (India US Trade Talks)
বর্তমানে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ১০.৭৩ শতাংশ(India US Trade Talks)। ভারতের রফতানির ১৮ শতাংশ যায় আমেরিকায়, যা মোদী সরকারের কাছে যথেষ্ট কৌশলগত গুরুত্ব রাখে। কিন্তু গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইস্পাত এবং কৃষিজাত পণ্যের উপর শুল্ক নিয়ে দু’দেশের মধ্যে এখনও মতবিরোধ রয়ে গেছে। সূত্রের খবর, ভারত চাইছে সময় নিয়ে পরিপূর্ণ চুক্তি করতে, তাড়াহুড়ো নয়। তবে হোয়াইট হাউস চাইছে ৯ জুলাইয়ের মধ্যে চুক্তির রূপরেখা তৈরি হোক। ভারতের প্রতিনিধিদল ইতিমধ্যেই ওয়াশিংটনে আলোচনায় ব্যস্ত।

আরও পড়ুন: Russia Ukraine War : ইউক্রেনে রাশিয়ার ভয়াবহ বিমান হামলা, ধ্বংস এফ-১৬, নিহত পাইলট
চুক্তি না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন কারা? (India US Trade Talks)
চুক্তি চূড়ান্ত না হলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে ভারতীয় চিংড়ি, কার্পেট, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং সোনার গহনা রফতানিকারকদের উপর(India US Trade Talks)। এই পণ্যগুলি বর্তমানে আমেরিকায় প্রতিযোগিতামূলক দামে প্রবেশ করলেও নতুন শুল্কনীতি এলে দাম বাড়বে, এবং ভারতীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারেন।

চিনের উদ্বেগ শুধুই বাণিজ্য নাকি ভূকৌশল? (India US Trade Talks)
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চিনের এই বিবৃতির পিছনে শুধু বাণিজ্যিক নয়, ভূরাজনৈতিক অস্বস্তিও কাজ করছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত প্রভাব, QUAD-এর সক্রিয়তা, এবং আমেরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা— এই সব কিছুর পটভূমিতে চিন চাইছে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে।বিশেষত, বাণিজ্যের মোড়কে যদি কোনও দেশ তাদের পণ্য বা প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়, যা চিনা বাণিজ্যিক স্বার্থে আঘাত করে— তা তারা মেনে নিতে প্রস্তুত নয়(India US Trade Talks)।
ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি ঘিরে আলোচনা যতই এগোচ্ছে, ততই উদ্বেগ বাড়ছে বেজিংয়ে। শি প্রশাসনের সাম্প্রতিক হুঁশিয়ারি স্পষ্ট করে দিচ্ছে, আগামী দিনে বাণিজ্য শুধু আর ‘অর্থনীতি’র প্রশ্ন থাকবে না, বরং ‘কূটনীতি’ ও ‘প্রভাব বিস্তারের’ হাতিয়ার হয়ে উঠবে। এখন দেখার, নয়াদিল্লি কীভাবে ভারসাম্য বজায় রাখে— ওয়াশিংটনের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করে, নাকি বেজিংয়ের চাপকে উপেক্ষা করে নিজের কৌশলেই এগোয়।