ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারতের কঠোর পদক্ষেপের পাল্টা হিসেবে পাকিস্তান সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ এবং আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা করেছিল (India vs Pakistan)। তবে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি নতুন মোড় নিল। এবার, সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে উত্তেজনা চড়েছে এবং এটি একটি নতুন ‘ফ্ল্যাশপয়েন্ট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের পক্ষে সিন্ধু নদীর জল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত যদি কার্যকর হয়, তবে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের কৃষি অর্থনীতি চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে, যা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে আরও উত্তপ্ত করতে পারে।
সিন্ধু জলচুক্তি (India vs Pakistan)
১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহরু ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আয়ুব খানের মধ্যে সিন্ধু জলচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় (India vs Pakistan)। এই চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু নদ এবং তার শাখা নদীগুলির জল ব্যবহারের অধিকার দুই দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। চুক্তি অনুযায়ী, ভারতকে পূর্ব দিকের তিনটি নদী (বিপাশা, ইরাবতী ও শতদ্রু) ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, আর পাকিস্তানকে পশ্চিম দিকের তিনটি নদী (সিন্ধু, চন্দ্রভাগা, বিতস্তা) ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তান পানির ৭০ শতাংশ এবং ভারত ৩০ শতাংশ ব্যবহার করে, যা এই চুক্তির মূল কাঠামো।
অর্থনীতি ও কৃষিতে বিপর্যয় (India vs Pakistan)
পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের কৃষি সম্পূর্ণভাবে সিন্ধু জলচুক্তির ওপর নির্ভরশীল (India vs Pakistan)। সেচের ৮০ শতাংশ জলের যোগান সিন্ধু নদীর শাখাগুলির মাধ্যমে আসে। ভারত যদি এই জল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে পাকিস্তানের কৃষি ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতি পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে, যেহেতু পঞ্জাব প্রদেশের কৃষিই পাকিস্তানের খাদ্য নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির মেরুদণ্ড।

আরও পড়ুন: Pahalgam Attack : বৈসরনে পৌছোতে বিশেষ মোবাইল অ্যাপের ব্যবহার জঙ্গিদের! ঘন জঙ্গলে হেঁটেছিল ২০ কিমি পথ
চুক্তি স্থগিতের পদক্ষেপ (India vs Pakistan)
পহেলগাঁও হামলার পর ভারত সরকার সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় (India vs Pakistan)। ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানকে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করেছে, এবং ইসলামাবাদ (Shehbaz Sharif) তা যুদ্ধের হুমকির সাথে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। পাকিস্তান স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, ভারত যদি সিন্ধু জলচুক্তি ভাঙে, তাহলে এটি একটি যুদ্ধের কারণ হতে পারে। পাকিস্তান দাবি করেছে, জল না পাওয়ার কারণে তাদের কৃষি এবং জীবনযাত্রায় বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।

আরও পড়ুন: Sikkim Landslide : বৃষ্টি ও ধসে বিপর্যস্ত উত্তর সিকিম! ভয়াবহ দুর্যোগে আটকে বহু পর্যটক
আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি (India vs Pakistan)
বিশ্বব্যাংক ১৯৬০ সালে চুক্তির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ছিল, তবে বর্তমানে ভারত(Narendra Modi) অভিযোগ করছে যে, বিশ্বব্যাংক চুক্তির শর্তের পরিবর্তন বিষয়ক সিদ্ধান্তে কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। ভারত এই চুক্তির শর্তাবলী পুনর্মূল্যায়ন করার প্রস্তাব রেখেছে, কিন্তু পাকিস্তান এখনও এ বিষয়ে সাড়া দেয়নি। ২০২৩ সালে ভারত প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে সিন্ধু চুক্তি নিয়ে নোটিস পাঠায়, এবং গত বছর দ্বিতীয় নোটিসও দেওয়া হয়।
সিন্ধু চুক্তি স্থগিতে যুদ্ধের সম্ভাবনা (India vs Pakistan)
সিন্ধু জলচুক্তি ভেঙে দিলে ১৯৪৭-৪৮ সালের যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যা নদীর জল নিয়ে হয়েছিল। এর ফলে, পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে যেকোনো সময় যুদ্ধ শুরু হতে পারে। বিশেষত, পাকিস্তান এর আগে জানিয়েছিল যে, সীমান্ত-সন্ত্রাসের কারণে চুক্তির শর্ত বদলানো উচিত।
ভারতের প্রস্তুতি (India vs Pakistan)
যদিও পাকিস্তান জলবণ্টন নিয়ে কঠোর হুমকি দিয়েছে, ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তির ভঙ্গ হলে ভারত কোন বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। শিমলা চুক্তি, যা ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর সই হয়েছিল, ভারতে সম্পূর্ণভাবে স্থির হয়েছে, এবং সেখান থেকে কোনো বৃহৎ বিপদ হতে পারে না। এমনকি পাকিস্তান চুক্তি স্থগিত করার কথা বললেও, ভারত এতে তেমন কোনো সমস্যা দেখছে না। বর্তমানে সিন্ধু জলচুক্তি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং এর মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের চরম পরীক্ষার সময় এসেছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, যেকোনো মুহূর্তে এই সংকট আরও গম্ভীর হতে পারে।