Last Updated on [modified_date_only] by Debu Das
ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : ভারতীয় সেনা বিশ্বের অন্যতম সাহসী ও সুসংগঠিত সেনাবাহিনী হিসেবে স্বীকৃত(Indian Army Top 5 Operation)। স্বাধীনতার পরে থেকে আজ পর্যন্ত একাধিক সন্ত্রাসবাদ দমন অভিযান, সীমান্ত সংঘাত ও বিশেষ সামরিক পদক্ষেপে ভারতীয় সেনার দুঃসাহসিক ভূমিকা দেশের জনগণকে গর্বিত করেছে। এখানে তুলে ধরা হল ভারতীয় সেনার (INDIAN ARMY) ৫টি নির্ভীক অভিযান, যা শুধু সামরিক ইতিহাস নয়, গোটা জাতির গর্বের অংশ।
১. অপারেশন বিজয় (Indian Army Top 5 Operation)
কারগিল যুদ্ধ ছিল ভারতের সামরিক ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়(Indian Army Top 5 Operation)। পাকিস্তানি সেনা ও জঙ্গিরা গোপনে লাদাখের কারগিল সেক্টরের পাহাড়ি এলাকাগুলি দখল করে নেয়। এ সময় ভারতীয় সেনা অপারেশন বিজয় শুরু করে।
ভারতের সৈন্যরা প্রায় ১৮,০০০ ফুট উচ্চতায় প্রতিকূল পরিবেশে লড়াই করে পাকিস্তানি সেনাদের পিছনে ঠেলে দেয়। তুষার, শূন্যের নীচে তাপমাত্রা ও অক্সিজেনের স্বল্পতা সত্ত্বেও ভারতীয় সেনারা অসামান্য সাহসের পরিচয় দেন।
বিশেষ করে টলোলিং, টাইগার হিল এবং বাদামী পোস্ট দখলের লড়াই আজও ইতিহাসে অমর। এই যুদ্ধে ৫০০-এর বেশি ভারতীয় সেনা শহিদ হন, কিন্তু দেশের মাটিতে পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের একেবারে হটিয়ে দেওয়া হয়। কারগিল যুদ্ধ ভারতের সামরিক শক্তি, কৌশল ও অদম্য মানসিকতার প্রতীক হয়ে রয়েছে।
২. অপারেশন মেঘদূত (Indian Army Top 5 Operation)
১৯৮৪ সালে ভারত প্রথমবার বিশ্বের সর্বোচ্চ যুদ্ধক্ষেত্র সিয়াচেন হিমবাহে অভিযান চালায়(Indian Army Top 5 Operation)। পাকিস্তান গোপনে সিয়াচেনে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিল। ভারতীয় গোয়েন্দারা খবর পেয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয় এবং অপারেশন মেঘদূত শুরু হয়।
১৩,০০০ থেকে ২২,০০০ ফুট উচ্চতায়, হাড় কাঁপানো ঠান্ডা আর শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যেও ভারতীয় সেনা সিয়াচেন দখল করতে সক্ষম হয়। এরপর থেকে সিয়াচেন হিমবাহ ভারতীয় সেনার নিয়ন্ত্রণে আছে।
এই অভিযানকে ইতিহাসবিদরা “পাহাড় জয়ের ইতিহাস” বলে অভিহিত করেছেন। শুধু পাকিস্তানের অনুপ্রবেশ রোখাই নয়, সেনাদের জন্য এটি ছিল মানসিক ও শারীরিক সহনশীলতারও এক অনন্য পরীক্ষা।
৩. অপারেশন ব্লু স্টার (Indian Army Top 5 Operation)
১৯৮৪ সালে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির কমপ্লেক্স দখল করে বসেছিল জারনাইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালের নেতৃত্বাধীন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী(Indian Army Top 5 Operation)। তাদের সরানোর দায়িত্ব পড়ে ভারতীয় সেনার উপর।
অপারেশন ব্লু স্টার ছিল এক কঠিন সিদ্ধান্ত, কারণ স্বর্ণমন্দির শিখ ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র স্থান। সেনারা সর্বোচ্চ সতর্কতা ও কৌশল নিয়ে অভিযান শুরু করে। প্রবল প্রতিরোধ সত্ত্বেও জঙ্গিদের খতম করা হয় এবং মন্দির প্রাঙ্গণ মুক্ত হয়।
যদিও এই অভিযানে বহু সেনা ও সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান, তবু দেশের ঐক্য ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এই অভিযানকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

আরও পড়ুন : Kim Jung Un : চিন সফরেও বাহন কিমের ‘সবুজ বুলেটপ্রুফ ট্রেন’! কী কী ব্যবস্থা রয়েছে?
৪. সার্জিক্যাল স্ট্রাইক (Indian Army Top 5 Operation)
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে জম্মু ও কাশ্মীরের উরি সেনা শিবিরে সন্ত্রাসী হামলায় ১৯ জন ভারতীয় সেনা শহিদ হন। এর পাল্টা জবাবে ভারতীয় সেনা “সার্জিক্যাল স্ট্রাইক” চালায়।
ভারতের বিশেষ বাহিনী পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে (PoK) সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে প্রবেশ করে। রাতে পরিচালিত এই অভিযান প্রায় কয়েক ঘন্টা ধরে চলে এবং একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়।
ভারতের ইতিহাসে এই প্রথমবার সরকার প্রকাশ্যে স্বীকার করে যে, তারা সীমান্ত পেরিয়ে সামরিক অভিযান চালিয়েছে। এতে ভারতের আন্তর্জাতিক মানমর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং সেনার মনোবল চাঙা হয়। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ছিল ভারতের দৃঢ় বার্তা – দেশের মাটিতে রক্ত ঝরলে তার জবাব দেওয়া হবেই।
আরও পড়ুন : Israel Hamas Conflict : প্যালেস্টাইনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি, ফ্রান্স ব্রিটেনের পর ঘোষণা বেলজিয়ামের
৫. বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক(Indian Army Top 5 Operation)
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান শহিদ হন(Indian Army Top 5 Operation)। তার কিছু দিনের মধ্যেই ভারত প্রতিশোধ নেয়। ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের বালাকোটে জইশ-এ-মোহাম্মদের প্রশিক্ষণ শিবিরে এয়ার স্ট্রাইক চালায়।
মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে এই আক্রমণে একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস হয়ে যায়। বালাকোট স্ট্রাইক ছিল ভারতের সামরিক ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব পদক্ষেপ, কারণ এটি ছিল নিয়ন্ত্রণরেখার বহু বাইরে পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে সরাসরি আঘাত।
এই অভিযানের মাধ্যমে ভারত স্পষ্ট করে দেয় যে, সন্ত্রাসবাদ রুখতে প্রয়োজনে সীমান্ত পেরিয়ে আঘাত হানতেও দ্বিধা করবে না।
দেশের সুরক্ষার জন্য সর্বদা প্রস্তুত (Indian Army Top 5 Operation)
ভারতীয় সেনার এই পাঁচটি অভিযানই প্রমাণ করে যে, দেশের সুরক্ষার জন্য তারা সর্বদা প্রস্তুত এবং প্রয়োজনে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে দ্বিধা করে না(Indian Army Top 5 Operation)। কারগিল যুদ্ধের পাহাড় চূড়া হোক বা সিয়াচেনের হিমবাহ, কিংবা সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদ দমন অভিযান— ভারতীয় সেনা বারবার প্রমাণ করেছে তাদের নির্ভীকতা, কৌশল এবং দৃঢ় সংকল্পের শক্তি।
এই অভিযানগুলি শুধু সামরিক কাহিনি নয়, এগুলি ভারতের জনগণের আত্মবিশ্বাস ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। ভারতীয় সেনার এই দুঃসাহসিক পদক্ষেপ ভবিষ্যত প্রজন্মকেও প্রেরণা জোগাবে এবং দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার শিক্ষা দেবে।