ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য ছিল প্রতিরক্ষা খাতে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন এবং রফতানি বৃদ্ধি (Indian Defence Exports)। সেই লক্ষ্যপূরণে ভারত দ্রুত এগিয়ে চলেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রকাশিত সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ভারত বিশ্ববাজারে ২৩,৬২২ কোটি টাকার অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রফতানি করেছে, যা গত অর্থবর্ষের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষা রফতানির পরিমাণ ছিল ২১,০৮৩ কোটি টাকা। যদিও ২০২০ সালে মোদী সরকারের ঘোষিত ‘প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও রফতানি নীতি’ (DPEPP)-তে নির্ধারিত ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৫,০০০ কোটি টাকা রফতানির লক্ষ্য এখনও পূরণ হয়নি, তবে বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার বলছে, ভারত দ্রুত সেই লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে।
প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানিতে রেকর্ড (Indian Defence Exports)
ভারতীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের চাহিদা ক্রমেই বিশ্ববাজারে বৃদ্ধি পাচ্ছে (Indian Defence Exports)। উচ্চমানের প্রযুক্তি, তুলনামূলকভাবে কম খরচে উৎপাদন এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কৌশলগত চুক্তি ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তথ্য বলছে, ভারতের অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম এখন ৮০টিরও বেশি দেশে রফতানি হচ্ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বনাম বেসরকারি সংস্থা (Indian Defence Exports)
ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রফতানির পরিমাণ বেড়েছে (Indian Defence Exports)।
- বেসরকারি সংস্থাগুলির অবদান: ১৫,২০৯ কোটি টাকা (মোট রফতানির ৬৪%)
- রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির অবদান: ৮,৩৮৯ কোটি টাকা
বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ার ফলে প্রতিযোগিতা বেড়েছে, যা উৎপাদনমান উন্নত করতে সাহায্য করছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির রফতানিও ৪২.৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় সামরিক সরঞ্জামের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।

আরও পড়ুন: US Tariff War : ‘মুক্তি দিবসে’ পাল্টা আমদানি শুল্ক ঘোষণা ট্রাম্পের! ভারতের উপর চাপলো ২৬ শতাংশ শুল্ক
বিশ্ববাজারে ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের চাহিদা (Indian Defence Exports)
বিশ্ববাজারে ভারতের প্রতিরক্ষা (Indian Defence Exports) রফতানির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১) ড্রোন ও মনুষ্যবিহীন এয়ারক্রাফট সিস্টেম (UAVs)
২) ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল
৩) আকাশ ও পিনাকা মিসাইল সিস্টেম
৪) Tejas হালকা যুদ্ধবিমান
৫) রাডার ও নজরদারি সরঞ্জাম
৬) বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম
এই সমস্ত পণ্য এখন ভারত থেকে বিদেশে রফতানি হচ্ছে, যা প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করছে।

আরও পড়ুন: Bimstec Summit : মোদী-ইউনূস বৈঠক নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ! জানিয়েছেন সে দেশের বিদেশ সচিব
ভারতের লক্ষ্যমাত্রা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা (Indian Defence Exports)
২০২০ সালে ঘোষিত প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও রফতানি নীতিতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৫,০০০ কোটি টাকার অস্ত্র রফতানির লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছিল (Indian Defence Exports)। যদিও এখন পর্যন্ত রফতানির অঙ্ক ২৩,৬২২ কোটিতে পৌঁছেছে, যা নির্ধারিত লক্ষ্যের তুলনায় ১১,৩৭৮ কোটি টাকা কম।বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার বজায় থাকে, তবে ২০২৭ সালের মধ্যে ভারত ৩৫,০০০ কোটি টাকার রফতানির লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। তবে সেই জন্য প্রয়োজন হবে—
১) প্রতিরক্ষা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আরও বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ।
২) নতুন প্রযুক্তির উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ।
৩) প্রতিরক্ষা শিল্পে গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া।
৪) আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর জন্য উচ্চমানের সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন।
রফতানিতে ভারতের অবস্থান (Indian Defence Exports)
বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, চীন এবং জার্মানি শীর্ষে রয়েছে। যদিও ভারত এখনো শীর্ষ রফতানিকারক দেশগুলোর তালিকায় পৌঁছায়নি, তবে বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার বজায় থাকলে ভবিষ্যতে ভারত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহকারী দেশে পরিণত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত যদি সামরিক প্রযুক্তির উন্নয়ন ও উত্পাদন বাড়াতে পারে, তবে আগামী পাঁচ বছরে ভারত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানিতে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দেশের তালিকায় জায়গা করে নিতে পারবে।
আত্মনির্ভরতায় ইতিবাচক ফলাফল (Indian Defence Exports)
প্রতিরক্ষা খাতে আত্মনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে ভারতীয় সরকার যেসব নীতি গ্রহণ করেছে, তার ইতিবাচক ফলাফল ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। বিশ্ববাজারে ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এখন সরকারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত গবেষণা ও উন্নয়নে আরও বিনিয়োগ করা, উৎপাদন খরচ কমানো এবং নতুন বাজারে প্রবেশের কৌশল তৈরি করা।যদি বর্তমান উন্নয়ন ও রফতানির ধারা বজায় থাকে, তবে ভারত প্রতিরক্ষা খাতে বিশ্বশক্তি হিসেবে দ্রুত আবির্ভূত হতে পারে।