ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও সম্প্রতি এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে যা ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারাই বদলে দিতে পারে (Indian Laser Weapon)। ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুলে অবস্থিত ন্যাশনাল ওপেন এয়ার রেঞ্জ-এ সফলভাবে পরীক্ষা চালানো হয়েছে ভারতের প্রথম উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ডিরেক্ট এনার্জি ওয়েপন সিস্টেম (DEW) – ‘এমকে-টু(এ) লেজ়ার’।
সেন্সর ও রাডার ব্যবস্থা ধ্বংস (Indian Laser Weapon)
এই অস্ত্রটি তৈরি করেছে ডিআরডিওর (DRDO) অধীনে থাকা সেন্টার ফর হাই এনার্জি সিস্টেমস অ্যান্ড সায়েন্সেস (CHESS)। এটি এমন এক লেজ়ার প্রযুক্তি, যা চোখের পলকে আকাশে ওড়া ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র কিংবা শত্রুর নজরদারি সেন্সর ও রাডার ব্যবস্থা ধ্বংস করতে সক্ষম।
অস্ত্রের বৈশিষ্ট্য ও কার্যকারিতা (Indian Laser Weapon)
‘এমকে-টু(এ) লেজ়ার’ একটি ৩০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন লেজার অস্ত্র (Indian Laser Weapon)। ট্রাক আকৃতির গাড়ির উপর এটি বসানো হয়েছে, ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে এটি সহজেই মোতায়েনযোগ্য। এই DEW-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, এটি কার্যত নামমাত্র খরচে ব্যবহার করা সম্ভব। এক-দু’ লিটার পেট্রোলের দামে কয়েক সেকেন্ডের জন্য লেজ়ার রশ্মি ছোড়া যায়, যা প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অপেক্ষা বহুগুণ সস্তা।ডিআরডিওর দাবি, একাধিক ড্রোনকে একসঙ্গে নিশানা করে ধ্বংস করতে সক্ষম এই হাতিয়ার, যার ফলে ভবিষ্যতে সীমান্তে পাকিস্তান ও চিনের ড্রোন চোরাচালান বা আক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস পাবে।

আরও পড়ুন: US China Tariff War : চিনা পোশাক পরায় বিতর্কে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট
বিশ্ব দরবারে ভারতের অবস্থান (Indian Laser Weapon)
বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকটি দেশের কাছেই ডিরেক্ট এনার্জি ওয়েপন রয়েছে—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইজ়রায়েল ও চিনের মতো সামরিক শক্তিধর দেশগুলির পাশে এবার নাম লেখাল ভারতও (Indian Laser Weapon)। রাশিয়ার ‘Peresvet’, ইজ়রায়েলের ‘Iron Beam’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘Leonidas System’ ইতিমধ্যেই DEW ব্যবহারে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। তবে কম খরচে উচ্চ কার্যক্ষমতার দিক থেকে ভারতের এই প্রযুক্তিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

‘সূর্য’ প্রকল্পের ছায়ায় এই সাফল্য? (Indian Laser Weapon)
কিছুদিন আগেই ডিআরডিও ‘সূর্য’ নামক একটি আরও শক্তিশালী DEW তৈরির গবেষণায় নিযুক্ত হয়েছে বলে জানা যায়। সেই অস্ত্রটি শুধু লেজ়ার নয়, মাইক্রোওয়েভ এবং পার্টিকল বিমও ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। যদিও ‘এমকে-টু(এ)’ ও ‘সূর্য’ প্রকল্পের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক নিয়ে কিছু জানানো হয়নি, তবে বোঝা যাচ্ছে, ভারত এখন DEW প্রযুক্তিকে ভবিষ্যতের যুদ্ধের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে ভাবছে।

আরও পড়ুন: Balochistan Blast : বালোচিস্তানে ফের রক্তাক্ত হামলা! বোমা বিস্ফোরণে মৃত ৩ পুলিশকর্মী, আহত অন্তত ১৬
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ (Indian Laser Weapon)
তবে DEW ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে (Indian Laser Weapon)। এই ধরনের অস্ত্র কার্যকরভাবে চালাতে প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যদি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে এই অস্ত্র ব্যবহারে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এছাড়া কুয়াশা, বৃষ্টি বা ধূলিঝড়ের মতো পরিবেশগত পরিস্থিতিও লেজ়ারের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।তবুও, ডিআরডিও-র ‘এমকে-টু(এ) লেজ়ার’ নিঃসন্দেহে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল। আকাশ প্রতিরক্ষা থেকে সীমান্ত সুরক্ষা—সবক্ষেত্রেই এই DEW হয়ে উঠতে পারে অমূল্য সম্পদ। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কবে এই অস্ত্র যুক্ত হবে তা এখনও নির্দিষ্ট নয়, তবে প্রযুক্তিগতভাবে ভারত যে নতুন যুগে প্রবেশ করল, তা বলাই বাহুল্য।