ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ২০২৫ অর্থবর্ষে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে (Indo-Pak One-Sided Trade), কিন্তু লাভগুলি একতরফা। ভারত থেকে আমদানি বেড়ে ২২০ মিলিয়নে ডলারে পৌঁছেছে, যেখানে রফতানি প্রায় নগণ্য রয়ে গেছে। ইতিমধ্যে, চীন পাকিস্তানে রফতানিতে ২০ শতাংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবধান আরও বাড়িয়েছে। যদিও চীনে পাকিস্তানের নিজস্ব রফতানি হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে দেখা গিয়েছে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি।
ভারতে রফতানি প্রায় নেই, কিন্তু ভারত থেকে আমদানিতে রেকর্ড পাকিস্তানের (Indo-Pak One-Sided Trade)
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার কূটনৈতিক সম্পর্ক গত কয়েক বছরে তলানিতে ঠেকেছে (Indo-Pak One-Sided Trade)। কিন্তু সেই আবহেও বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সেই বাণিজ্য সম্পূর্ণ একমুখী। ভারত থেকে আমদানি করলেও, পাকিস্তানের রফতানি কার্যত নেই। পাকিস্তানের জাতীয় দৈনিক ডন-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ভারত থেকে আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২০.৫৮ মিলিয়ন ডলারে। এর আগের বছর এই পরিমাণ ছিল ২০৬.৮৯ মিলিয়ন ডলার। উল্লেখ্য, জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্যিক কার্যকলাপ স্থগিত রেখেছে।
পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ভারত থেকে আমদানি ৬.৬২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ২০৬.৮৯ মিলিয়ন ডলারে, যেখানে ২০২২-২৩ সালে তা ছিল ১৯০.০৪ মিলিয়ন ডলার। বিপরীতে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ভারতে পাকিস্তানের রফতানি দাঁড়িয়েছে মাত্র ১.৪৩ মিলিয়ন ডলারে। আগের বছর এই রফতানি ছিল ৩.৬৬৯ মিলিয়ন ডলার, তারও আগের বছরে মাত্র ০.৩২৯ মিলিয়ন।
আরও পড়ুন: Thailand-Cambodia Clash: রণক্ষেত্র থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্ত, বিমান হানায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি
এই পরিসংখ্যান দেখায় যে, সামগ্রিকভাবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়লেও, বাণিজ্য ভারসাম্য ভারতের পক্ষে আরও তীব্র হয়েছে। পাকিস্তান ভারতে যা রফতানি করেছে, তার তুলনায় ভারত থেকে অনেক বেশি আমদানি করেছে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি ২০০ মিলিয়নেরও বেশি।
চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে (Indo-Pak One-Sided Trade)
ভারত ছাড়াও, পাকিস্তান চিনের থেকেও বিপুল পরিমাণে আমদানি করছে (Indo-Pak One-Sided Trade)। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে চিন থেকে আমদানি ২০.৭৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৬.৩১২ বিলিয়ন ডলারে। এর আগের বছর তা ছিল ১৩.৫০৪ বিলিয়ন। তারও আগে ২০২২-২৩ সালে চিন থেকে আমদানির বৃদ্ধি ছিল ৩৯.৭৮ শতাংশ যা ৯.৬৬২ বিলিয়ন থেকে এক লাফে ১৩.৫০৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের রফতানি কমেছে চিনে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে চিনে রফতানি ৮.৬ শতাংশ হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ২.৪৭৬ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরে ছিল ২.৭০৯ বিলিয়ন।
আরও পড়ুন: Russian Plane Missing: রাশিয়ায় ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা, খোঁজ মিলল ধ্বংসাবশেষের!
প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গেও বাড়ছে আমদানি, কিন্তু রফতানিতে ভাটা
আফগানিস্তান, চিন, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভারত, ইরান, নেপাল, ভূটান ও মালদ্বীপ এই নয় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সামগ্রিক রফতানি ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে সামান্য ১.৪৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৪০১ বিলিয়ন ডলারে। আগের বছর এটি ছিল ৪.৩৩৬ বিলিয়ন। তবে এই দেশগুলির থেকে আমদানি ২০.৬৬ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ১৬.৬৯৮ বিলিয়ন ডলারে, যেখানে আগের বছর তা ছিল ১৩.৮৩৮ বিলিয়ন।
বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি, উদ্বেগে অর্থনীতি
পাকিস্তানের এই একতরফা আমদানি নির্ভরতা, বিশেষত ভারত ও চিনের মতো আঞ্চলিক শক্তিধর দেশগুলির উপর নির্ভরতা, দেশটির বাণিজ্য ভারসাম্যকে আরও সমস্যায় ফেলেছে। রফতানি বৃদ্ধির অভাব, উৎপাদনে স্থবিরতা এবং কূটনৈতিক টানাপোড়েন— এই তিন সমস্যা মিলিয়ে পাকিস্তানের উপর ক্রমেই চাপ বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের রফতানি ক্ষেত্রকে বৈচিত্র্যময় করা, দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য নীতিতে নতুন করে ভাবনা-চিন্তা করা এখন অত্যন্ত জরুরি।