ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: নদীর জল নিয়ে ভারতের সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি (Indus Water Treaty) স্থগিতের ফলে পাকিস্তান গভীর সঙ্কটে পড়েছে। সিন্ধু নদী এবং তার দুটি প্রধান উপনদী—চন্দ্রভাগা ও বিতস্তা—পাকিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কৃষি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তিন নদীর জলেই পাকিস্তানের সেচব্যবস্থা ও অর্থনীতির গণ্ডি জড়িত, যেখানে প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষিকাজ নির্ভরশীল। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে জলবণ্টনে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় ওই অঞ্চলের জলপ্রবাহ ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
জলস্তর হঠাৎ কমে গেছে (Indus Water Treaty)
ইন্ডাস রিভার সিস্টেম অথরিটি (আইআরএসএ) সম্প্রতি একটি বিবৃতিতে (Indus Water Treaty) জানিয়েছে, বিতস্তা নদীর উপর অবস্থিত মংলা জলাধার এবং সিন্ধুর তারবেলা জলাধারে জলস্তর হঠাৎ কমে প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এছাড়া, চন্দ্রভাগা নদীর জলপ্রবাহও বেশ হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে সার্বিক জলপ্রবাহ প্রায় ২১ শতাংশ কমে গিয়েছে। এ পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে পাকিস্তানের পঞ্জাব ও সিন্ধ প্রদেশের কৃষি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর। কারণ, এই দুই অঞ্চল সেচের জন্য মূলত এই জলাধারের জলের উপর নির্ভরশীল।
পাকিস্তানে গ্রীষ্মকালীন বীজ বপনের মৌসুম চলছে (Indus Water Treaty)
বর্তমান সময়ে পাকিস্তানে গ্রীষ্মকালীন বীজ বপনের মৌসুম চলছে, যা জলপ্রাপ্যতার জন্য অত্যন্ত (Indus Water Treaty) স্পর্শকাতর। তাই ভারতের জলবণ্টন স্থগিতের সিদ্ধান্তকে আইআরএসএ উদ্বেগের বিষয় বলে উল্লেখ করেছে। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জল ব্যবহারে সতর্ক ও সংযত থাকার পরামর্শ দিয়েছে। পাকিস্তানের ‘জল এবং বিদ্যুৎ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (ডব্লিউপিডিএ) জানিয়েছে, মাত্র দু’দিনে চন্দ্রভাগার জলপ্রবাহ ৯১ হাজার কিউসেক কমেছে, যা ভারতের সিন্ধু চুক্তি স্থগিতকরণের প্রভাব বলে তারা দাবি করেছে।
আন্তর্জাতিক জলবণ্টন নীতির লঙ্ঘন
পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের সেচ বিভাগের এক কর্মকর্তা ভারতকে সরাসরি অভিযুক্ত করে বলেছেন, ভারত চন্দ্রভাগা নদীর জল নিজেদের বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে আটকে রেখেছে, যা অন্যায় এবং আন্তর্জাতিক জলবণ্টন নীতির লঙ্ঘন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফও বারবার সিন্ধু চুক্তির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছেন, সিন্ধু ও তার উপনদীর জলবণ্টন নিয়ে ২৪ কোটি পাকিস্তানির জীবন নির্ভরশীল। তার ভাষায়, ভারতের এই সিদ্ধান্ত ‘একতরফা’ এবং ‘বেআইনি’।
উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মংলা জলাধারের ধারণক্ষমতা ৫৯ লক্ষ একর-ফুট হলেও বর্তমানে সেখানে মাত্র ২৭ লক্ষ একর-ফুট জল রয়েছে, যা অর্ধেকেরও কম। তারবেলা জলাধারে থাকার কথা ছিল ১.১৬ কোটি একর-ফুট জল, সেখানে বর্তমানে আছে মাত্র ৬০ লক্ষ একর-ফুট, যা সামান্য অর্ধেকের বেশি। যদিও বর্ষাকাল শুরু হলে পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তার জন্য আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি
১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যা দুই দেশের মধ্যে জলবণ্টন নিশ্চিত করেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে এই চুক্তি স্থগিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “জল এবং রক্ত পাশাপাশি বইতে পারে না।” যদিও পাকিস্তান এই হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে এবং নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছে।
আরও পড়ুন: Pistachio Benefit: পেস্তা বাদাম, সুস্বাস্থ্যের এক ছোট কিন্তু শক্তিশালী সঙ্গী!
যদিও ১০ মে থেকে সংঘর্ষবিরতির ঘোষণা দেয় দুই দেশ, তারপরও সীমান্তে গোলাবর্ষণের অভিযোগ ও পাল্টা পাল্টি উত্তেজনা রয়েছে। ভারত-পাকিস্তানের এই জলবণ্টন সংকট পুরো অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা এবং কূটনৈতিক উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান কঠিন বলে মনে হচ্ছে।