ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জল-কূটনীতির পথ আরও এক ধাপ কঠোর করল ভারত (Indus Water Treaty Suspension)। সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার পর এ বার চন্দ্রভাগা নদীর উপর নির্মিত ‘রণবীর খাল’ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্র। সরকারের (Narendra Modi) এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে, পশ্চিমমুখী এই নদীর উপর ভারতের নিয়ন্ত্রণ ও জল ব্যবহারের পরিসর উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়বে।
রণবীর খালটির দৈর্ঘ্য বাড়ানো হবে (Indus Water Treaty Suspension)
সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক শীর্ষ সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন, বর্তমান সময়ে চন্দ্রভাগা নদীর জল ভারত সামান্য পরিমাণে ব্যবহার করতে পারে, যা মূলত সেচের জন্য ব্যবহার হয় (Indus Water Treaty Suspension)। কিন্তু সিন্ধু চুক্তি স্থগিত হওয়ার পর এ বার এই নদীর জল বিদ্যুৎ উৎপাদন সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারের জন্য কাজে লাগাতে উদ্যোগী হয়েছে নয়াদিল্লি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, রণবীর খালটির দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ানো হবে, যাতে আরও বেশি জল ভারতে প্রবেশ করানো যায়।
জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা (Indus Water Treaty Suspension)
এই খাল সম্প্রসারণের কাজ শুধুমাত্র একটি প্রকল্প নয়, বরং এটি বৃহত্তর একটি কৌশলগত পদক্ষেপের অংশ (Indus Water Treaty Suspension)। সরকারের দাবি, চন্দ্রভাগা-সহ পাকিস্তান-নির্ভর আরও কয়েকটি নদীর জল ব্যবহারের মাধ্যমে ৩০০০ মেগাওয়াট অতিরিক্ত জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। সরকারি সূত্রের মতে, খাল সম্প্রসারণের পাশাপাশি অন্যান্য নদী ও খালেও সংস্কারের কাজ চলছে। কাঠুয়া, রবি এবং পরাগওয়াল অঞ্চলে পলি সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে ওই জলপথগুলির জলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং তা দীর্ঘমেয়াদে ভারতের কৃষি ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে উপকৃত করবে।

কেন এই সিদ্ধান্ত? (Indus Water Treaty Suspension)
এই সিদ্ধান্তের পেছনে পটভূমি রয়েছে ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলা, যেখানে ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের মৃত্যু হয় (Indus Water Treaty Suspension)। ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দোষারোপ করে এবং তার প্রতিক্রিয়ায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে প্রতিআক্রমণ চালায়। ওই অভিযানে পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপরেই নয়াদিল্লি সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়।

বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় সিন্ধু চুক্তি (Indus Water Treaty Suspension)
১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই চুক্তি হয়েছিল (Indus Water Treaty Suspension)। তাতে নির্ধারিত হয়েছিল, সিন্ধু, বিতস্তা (জেলম) এবং চন্দ্রভাগা (চেনাব) নদীর জল পাকিস্তান ব্যবহার করবে, এবং ভারত ব্যবহার করবে শতদ্রু, বিপাশা ও ইরাবতী নদীর জল। পাকিস্তানের কৃষি উৎপাদনের প্রায় ৮০ শতাংশ এই পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর উপর নির্ভর করে। ফলে ভারত যদি এই জল নিয়ন্ত্রণে আনে, তবে তা কূটনৈতিক ও আর্থিক দিক থেকে পাকিস্তানের পক্ষে এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের ইঙ্গিত (Indus Water Treaty Suspension)
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই পদক্ষেপ কেবল প্রতিক্রিয়ামূলক নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের ইঙ্গিত। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর কূটনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে আরও চাপে রাখতেই জলের মতো সংবেদনশীল একটি ইস্যুতে চাপ সৃষ্টি করছে নয়াদিল্লি। রণবীর খাল সম্প্রসারণ ভারত-পাক জল-বিতর্কে এক নতুন মোড় আনতে চলেছে, যার প্রভাব আঞ্চলিক কূটনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।