ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়াল ইরান। সোমবার গভীর রাতে কাতারের রাজধানী দোহার উপকণ্ঠে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ‘আল উদেইদ’-এ ইরান ছুঁড়ে দেয় একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র (Iran Attack On Qatar)। এই হামলার পর গোটা দোহায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। বিকট বিস্ফোরণের শব্দ এবং আকাশে আলোর ঝলক দৃষ্টিগোচর হয় বহু বাসিন্দার। সামরিক ঘাঁটির ওপর এই হামলার ফলে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত নতুন মোড় নিল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
‘আল উদেইদ’ ঘাঁটিতে ইরানের হামলা (Iran Attack On Qatar)
‘আল উদেইদ’ ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতির কেন্দ্রস্থল। এখানে প্রায় ৮,০০০ মার্কিন সেনা এবং কিছু সংখ্যক ব্রিটিশ সামরিক কর্মী অবস্থান করেন (Iran Attack On Qatar)। কাতার সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওই ঘাঁটিতে আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও (Donald J. Trump) জানিয়েছেন, “হামলার আগে ইরান যে সতর্কতা দিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। আমাদের কোনো সেনা হতাহত হয়নি এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও নগণ্য।”
কাতারের আকাশসীমা বন্ধ সাময়িক ভাবে (Iran Attack On Qatar)
সূত্র অনুযায়ী, ইরান মোট ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, যার মধ্যে ১৩টি সফলভাবে প্রতিহত করা হয় এবং একটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পড়ে(Iran Attack On Qatar)। এই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই কাতার সাময়িকভাবে তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য নিজেদের নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার নির্দেশ দেয়। ফলে অনেকেই হামলার সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরেছিলেন। একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম হামলার আগে ঘাঁটিতে “বিশ্বাসযোগ্য হুমকি” চিহ্নিত হওয়ার খবরও প্রকাশ করেছিল।

আরও পড়ুন: Dilip Doshi : ভারতীয় ক্রিকেটে ইন্দ্রপতন! প্রয়াত কিংবদন্তি প্রাক্তন বাঁহাতি স্পিনার দিলীপ দোশী
হামলার দায় স্বীকার করেছে ইরান (Iran Attack On Qatar)
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ডস(Iran Attack On Qatar)। তাদের তরফে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “ইরানের উপর আঘাত এলে আমরা নিরুত্তর থাকব না। মার্কিন ঘাঁটিগুলো তাদের শক্তি নয়, বরং দুর্বলতা।” জানা গেছে, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র ইরানের একাধিক পরমাণু স্থাপনাগুলিতে গোপনে হামলা চালিয়েছে বলেই এই জবাবি পদক্ষেপ নিয়েছে তেহরান।
বিমান চলাচলে ব্যাপক পরিবর্তন (Iran Attack On Qatar)
আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও এই ঘটনার ফলে চরম সতর্কতায় রয়েছে(Iran Attack On Qatar)। কাতারের হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা বিশ্বের ব্যস্ততম বিমানবন্দরগুলির মধ্যে অন্যতম, সেখান থেকে প্রায় ১০০টি ফ্লাইট অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ‘ফ্লাইটরাডার২৪’-এর তথ্যে দেখা গেছে, ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ঠিক আগে বিমান চলাচলে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। একইসঙ্গে বাহরাইন, কুয়েত-সহ একাধিক উপসাগরীয় দেশ তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়।

আরও পড়ুন: Iran Israel Conflict : ফোরডোর ক্ষত শুকোনোর আগেই ফের হামলা! এ বার নিশানায় ইজরায়েলের বোমা
প্রতীকী শক্তি প্রদর্শন ইরানের (Iran Attack On Qatar)
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা ইরানের তরফে একটি রাজনৈতিক বার্তা (Iran Attack On Qatar)। সরাসরি যুদ্ধ নয়, বরং প্রতীকী শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে ইরান জানিয়ে দিল, তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা পিছিয়ে থাকবে না। তবে এর পরিণাম কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও এই মুহূর্তে কূটনৈতিক স্তরে উত্তেজনা প্রশমনের উদ্যোগ চলছে, তবুও সামান্য ভুল বোঝাবুঝিও ভয়াবহ সংঘাতে রূপ নিতে পারে।বর্তমানে মার্কিন প্রশাসন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ভবিষ্যতের কৌশলগত পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে ইরানও জানিয়েছে, প্রয়োজনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে তারা প্রস্তুত। ফলে মধ্যপ্রাচ্য যে ফের এক অগ্নিগর্ভ সময়ের মুখোমুখি, তা স্পষ্ট।