ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: পশ্চিম এশিয়ায় চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আবহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা নতুন মোড় আনলেও বাস্তব পরিস্থিতি এখনও জটিল এবং অনিশ্চিত(Iran Israel Ceasefire)। সোমবার গভীর রাতে (ভারতীয় সময় অনুযায়ী রাত ৩.৩০ নাগাদ) সমাজমাধ্যমে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইরান ও ইজরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে তাঁর এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দেয়—তারা কোনও ধরনের সমঝোতায় পৌঁছায়নি।
কাতারে মার্কিন বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা (Iran Israel Ceasefire)
এই ঘোষণার কিছু ঘণ্টা আগেই পরিস্থিতি ছিল একেবারে উল্টো মেরুতে। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ কাতারে অবস্থিত মার্কিন বায়ুসেনা ঘাঁটি আল উদেইদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান(Iran Israel Ceasefire)। ইরান জানায়, আমেরিকার পরমাণু স্থাপনায় হামলার ‘উপযুক্ত জবাব’ দিতেই তারা এই হামলা চালিয়েছে। ওই ঘটনার পর গোটা দোহা অঞ্চলজুড়ে চরম সতর্কতা জারি করা হয়। পশ্চিম এশিয়ার বহু দেশ, যেমন সৌদি আরব ও লেবানন, ইরানের এই হামলার তীব্র নিন্দা জানায়।
ইরান ও ইজরায়েল যুদ্ধবিরতিতে রাজি, ট্রাম্পের পোস্ট (Iran Israel Ceasefire)
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম প্রতিক্রিয়া আসে রাত ১টা নাগাদ (ভারতীয় সময়)। ট্রাম্প বলেন, “ইরানের হামলা দুর্বল ছিল। তারা ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, যার মধ্যে ১৩টি ধ্বংস করা হয়েছে(Iran Israel Ceasefire)। আর একটি ফাঁকা এলাকায় পড়েছে।” একইসঙ্গে তিনি ইরানকে ‘ধন্যবাদ’ জানান এই বলে যে, ইরান হামলার আগে সতর্ক করেছিল—ফলে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।এই বক্তব্যের প্রায় দু’ঘণ্টা পরেই আসে ট্রাম্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট—যেখানে তিনি বলেন, “ইরান ও ইজরায়েল যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। প্রথমে ইরান, পরে ইজরায়েল হামলা বন্ধ করবে।” তাঁর দাবি অনুযায়ী, কাতার এই সমঝোতা বাস্তবায়নে মধ্যস্থতা করেছে এবং আমেরিকার তরফ থেকে কাতারকে অনুরোধ করা হয়েছিল ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে(Iran Israel Ceasefire)।

যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হইনি ইরান, দাবি আরাগচির (Iran Israel Ceasefire)
তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্যে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, “আমরা কোনও যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হইনি(Iran Israel Ceasefire)। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সামরিক বাহিনী। যদি ইজরায়েল হামলা বন্ধ রাখে, আমরাও সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে চাই।” অর্থাৎ, যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার দরজা খোলা থাকলেও ইরান ট্রাম্পের (Donald J. Trump) দাবি সরাসরি খণ্ডন করেছে।এই জটিল আবহে ইজরায়েলের প্রতিক্রিয়া ছিল একেবারে বিপরীত। দেশটির সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তারা ট্রাম্পের প্রস্তাব মেনে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানান, “ইরানের বিরুদ্ধে অভিযানে আমাদের কৌশলগত লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। আমরা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঝুঁকি সফলভাবে রুখে দিয়েছি(Iran Israel Ceasefire)।”

ইজরায়েলের হামলায় নিহত ৯ ইরানি নাগরিক
তবে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সংঘর্ষ পুরোপুরি থামেনি(Iran Israel Ceasefire)। ইরান অভিযোগ করে, ইজরায়েলের হামলায় তাদের ৯ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইজরায়েল জানায়, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের চারজন নিহত হন। অর্থাৎ, বাস্তবে যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা নিয়ে গভীর সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে রাজনৈতিকভাবে ‘শান্তির পুরস্কার’ নিতে চাইলেও বাস্তবে পরিস্থিতি এখনও সেই জায়গায় পৌঁছায়নি। কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কাতারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, তবে চূড়ান্ত সাফল্য নির্ভর করছে ইরান ও ইজরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপের উপর।বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহল তাকিয়ে আছে—তেহরান শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং সংঘর্ষ সত্যিই থেমে যায় কি না, সেই দিকেই। শান্তির বার্তা দেওয়া যত সহজ, বাস্তব রণক্ষেত্রে তা কার্যকর করা ঠিক ততটাই কঠিন(Iran Israel Ceasefire)।