ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: শেষ পর্যন্ত যা আশঙ্কা করা হচ্ছিল, সেটাই বাস্তব হল। শুক্রবার সকালে ইরানের সামরিক ও পরমাণু ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালাল ইজরায়েল (Iran israel Conflict)। তেহরান-সহ একাধিক এলাকায় ইজরায়েলি আকাশসেনার হামলার খবর নিশ্চিত করেছে ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম। এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডের শীর্ষ কমান্ডার হোসেন সালামি-র। ইজরায়েল বলেছে, এই হামলার লক্ষ্য—ইরানের পরমাণু কার্যকলাপ এবং সামরিক দমনযন্ত্র।
‘অপারেশন রাইসিং লায়ন’ নতুন যুদ্ধের সূচনা? (Iran israel Conflict)
ইজরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল কাট্জ় ঘোষণা করেন, ‘অপারেশন রাইসিং লায়ন’ নামক সামরিক অভিযানে ইরানের বহু গোপন সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় আঘাত হানা হয়েছে (Iran israel Conflict)। এই অভিযানে ইরানের সেনা প্রধান মহম্মদ হোসেন বাগেরি-রও মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে, যদিও ইরান সরকারি ভাবে তা অস্বীকার করেছে। তেহরানের উপকণ্ঠে কালো ধোঁয়ার মেঘ দেখা গেছে। যদিও সেখানে পরমাণু কেন্দ্রের অস্তিত্ব নেই বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এপি জানিয়েছে। ইরান এখনও ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ বিবরণ দেয়নি, তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে অনুমান।
পাল্টা হামলার আশঙ্কা, ইজ়রায়েলে জরুরি অবস্থা (Iran israel Conflict)
ইরান থেকে পাল্টা জবাব আসতে পারে— এই আশঙ্কায় ইজরায়েলে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে(Iran israel Conflict)। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ প্রস্তুতিতে রাখা হয়েছে। ইজরায়েলের সামরিক কর্তারা বলছেন, “এই হামলা ছিল আত্মরক্ষার স্বার্থে।”
যুক্তরাষ্ট্র ‘নিরপেক্ষ’ থাকার বার্তা দিলেও (Iran israel Conflict)
এই সংঘাতে জড়াতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র (Iran israel Conflict)। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিয়ো স্পষ্ট করেছেন, “ইজরায়েল নিজস্ব সিদ্ধান্তে পদক্ষেপ করেছে, আমেরিকা এই হামলার সঙ্গে যুক্ত নয়।” তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald J. Trump
) জানিয়েছেন, মার্কিন বাহিনীর সুরক্ষায় সমস্ত রকম প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। পেন্টাগন-এর তরফে ইরানকে সতর্ক করে বলা হয়েছে— “আমেরিকার স্বার্থে হামলা চালানো হলে, তার যথাযথ জবাব দেওয়া হবে।”

ছায়া যুদ্ধ থেকে সরাসরি সংঘাতের পথে? (Iran israel Conflict)
গত কয়েক মাস ধরেই ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে। ছায়া যুদ্ধের মতো সাইবার হামলা, গুপ্তচরবৃত্তি, সীমান্ত সংঘর্ষ চললেও তা সরাসরি যুদ্ধের দিকে গড়ায়নি (Iran israel Conflict)। কিন্তু এ দিনের বিমানহানা সেই পরিস্থিতিকে বদলে দিল।
পরমাণু চুক্তি কার্যত ভেঙে পড়েছে (Iran israel Conflict)
ইরান ও আমেরিকার মধ্যে পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবনের ষষ্ঠ দফার আলোচনাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে । ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে জানিয়েছেন, “যদি আলোচনা ব্যর্থ হয় বা সংঘাত শুরু হয়, তবে আঞ্চলিক মার্কিন ঘাঁটিগুলো ইরানের নিশানা হবে।”

আরও পড়ুন: UK On Bangladesh :স্টার্মারের সঙ্গে ইউনূসের সাক্ষাৎ অনিশ্চিত! বৈঠকে অনাগ্রহ ব্রিটেনের
মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ যুদ্ধের পূর্বাভাস? (Iran israel Conflict)
এই মুহূর্তে ইরান ও ইজরায়েলের সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া মানেই পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যেও বিভাজন তৈরি হওয়া। সৌদি আরব, ওমান, কাতার, আমিরশাহি, এমনকি তুরস্ক— সবাই উদ্বিগ্ন। আমেরিকা ইতিমধ্যে ওয়েস্ট এশিয়া থেকে কূটনীতিকদের সরিয়ে নিচ্ছে। বিশ্বজুড়ে তেল বাজার চরম অস্থির। ইউরোপ, চিন ও রাশিয়াও নজর রাখছে এই সংঘাতে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি যত দ্রুত শান্ত না হবে, ততই বিশ্ব রাজনীতিতে বড়সড় বিপর্যয়ের সম্ভাবনা বাড়বে। ইজরায়েল-ইরান সংঘাত এখন আর শুধু আঞ্চলিক ব্যাপার নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক যুদ্ধের প্রেক্ষাপট। পরমাণু অস্ত্র, সামরিক কূটনীতি ও ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব— এই তিনের ত্রিভুজে দাঁড়িয়ে আছে গোটা পৃথিবী। আজ যা শুরু হল, তা কতদূর গড়ায়, এখন সেটাই দেখার।