ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ইরানের তেল উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নিষেধাজ্ঞাগুলি ক্রমশ অকার্যকর হয়েছে (Iran oil industry booms)। সেগুলি “কেবল কাগজে কলমে” রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞরা দ্বিধাবিভক্ত।
নিষেধাজ্ঞার শীর্ষে থেকেও উল্টো চিত্র (Iran oil industry booms)
ইরান বিশ্বের অন্যতম বেশি নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশ (Iran oil industry booms)। তবুও দেশটির অর্থনীতি ফুলে-ফেঁপে উঠছে। বিশেষ করে তেল ও জ্বালানি খাতে ইরান নজরকাড়া সাফল্য দেখিয়েছে। এই সপ্তাহের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি চক্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যারা ইরানের তেলকে ইরাকি তেল হিসেবে চোরাচালান করছিল। একইসঙ্গে হিজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে বাস্তবতা বলছে, নিষেধাজ্ঞাগুলো কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। কারণ ইরানের তেল উৎপাদন ও রফতানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।
বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞরা এই নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নিয়ে দ্বিধায়। বই Backfire: How Sanctions Reshape the World Against U.S. Interests-এর লেখিকা আগাথে দেমারায় বলেছেন, “নিষেধাজ্ঞা কখনও কাজ করে, কখনও করে না—এবং কখন কাজ করবে তা আগাম বলা কঠিন।” ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রাশিয়া ইরানকে ছাপিয়ে গেলেও, জ্বালানি খাতে তেহরানের উত্থান এক ভিন্ন ছবি তুলে ধরছে।
সংখ্যার ভাষায় সাফল্য (Iran oil industry booms)
আমেরিকার নেতৃত্বে দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ২০২৪ সালে ইরানের তেল উৎপাদন ৪৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে (Iran oil industry booms)। ২০২৫ সালে তা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২৪ সালে ইরানের জ্বালানি রফতানি থেকে আয় দাঁড়ায় ৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালের মাত্র ১৮ বিলিয়ন ডলার থেকে অনেক বেশি। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে মার্কিন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, ইরানের নিজস্ব কৌশলী উদ্যোগ এবং চীনের বাড়তে থাকা প্রভাব। অনেক সময়, তেলের দাম কম রাখতে এবং মার্কিন অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি ঠেকাতে আমেরিকা ইরানের তেল নিয়ে চোখ বন্ধ রেখেছে। অন্য সময়, ইরান ও চীন মিলে নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটানোর পথ বের করেছে।
চালাক কৌশলে নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটানো (Iran oil industry booms)
ইরান শুধু তেলেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তারা কনডেনসেটস ও প্রাকৃতিক গ্যাস তরলের উৎপাদন বাড়িয়েছে—যেমন ইথেন, বিউটেন, প্রোপেন। এইসব পণ্য এখন বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় উৎস। প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদের দিক দিয়ে ইরান বিশ্বে দ্বিতীয়, উৎপাদনে তৃতীয় (রাশিয়া ও আমেরিকার পরে)। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্স’ ইরানের বুশেহর প্রদেশে অবস্থিত। এটি কাতারের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবহৃত, কাতারে এর নাম ‘নর্থ ফিল্ড’। এই ক্ষেত্র থেকে ইরানের গ্যাস উৎপাদনের ৬৬ শতাংশ আসে।
সেনাবাহিনীর অবদান
ইরানের ইসলামি রেভলিউশনারি গার্ডস কোর (IRGC) দেশের অভ্যন্তরীণ পরিকাঠামো গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা রেখেছে। এতে বিদেশি অংশীদারের প্রয়োজন হয়নি।
প্রধান ক্রেতা চীন
চীন এখন ইরানের তেলের প্রধান ক্রেতা। মোট রফতানির ৯০ শতাংশই চীন নেয়। এই সরবরাহ চেইন এমনভাবে গড়া হয়েছে, যাতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়া যায়। চীন ইরানের তেল কিনছে ছাড়ের দামে, বহু বছর ধরেই। এই ব্যবসা চালাতে তারা জটিল ট্রান্সশিপমেন্ট ও ডলারের বাইরে ইউয়ানে লেনদেন করে। চীনা শুল্ক দফতর ২০২২ সালের পর থেকে ইরানের কাছ থেকে তেল আমদানির কথা স্বীকার না করলেও, শিপ ট্র্যাকিং সংস্থা Kpler-এর তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে চীনে ইরানি তেল আমদানি ১৭.৮ মিলিয়ন ব্যারেল পার ডে হয়ে গেছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
যুদ্ধও থামাতে পারেনি উৎপাদন
সম্প্রতি ইরান-ইজরায়েল উত্তেজনার মতো ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ইরানের তেল উৎপাদনে প্রভাব ফেলেনি। কোথাও হামলা হলেও দ্রুত মেরামত করা হয়েছে। জ্বালানি খাতে উত্তেজনা না বাড়াতে আমেরিকাও অনেক সময় হস্তক্ষেপ করেছে।
নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা সামলে শক্তিশালী ইরান
এই বাস্তবতা দেখায়, ইরানের তেল শিল্প আগের চেয়ে অনেক বেশি মজবুত। পশ্চিমি নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তেহরান সরকারও একটি স্থায়ী পেট্রো-ডলার প্রবাহ নিশ্চিত করতে পেরেছে।