ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: তদন্ত বলছে, হামাস পূর্ণাঙ্গ সংঘাতে আগ্রহী নয় এমন ধারণার ফলে সামরিক প্রস্তুতির অভাব দেখা দিয়েছে (Israel Army Probe)। সেই কারনেই ৭ তারিখের হামাসের আক্রমণ কোনওভাবেই প্রতিহত করা সম্ভব হয়নি ইজরায়েলের পক্ষে।
সেনাবাহিনীর স্বীকারোক্তি (Israel Army Probe)
ইজরায়েলি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে যে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলা প্রতিরোধে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে (Israel Army Probe)। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের পর বছর ধরে ইজরায়েলি বাহিনী হামাসের সামরিক ক্ষমতাকে অবমূল্যায়ন করেছে। ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, “অক্টোবর ৭ ছিল একটি সম্পূর্ণ ব্যর্থতা। আইডিএফ (ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) ইজরায়েলি নাগরিকদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “সেদিন অসংখ্য সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন এবং তাদের মনে একটাই প্রশ্ন ছিল, আইডিএফ কোথায়?”
প্রস্তুতির অভাব (Israel Army Probe)
তদন্তে উঠে এসেছে যে ইজরায়েল দীর্ঘদিন ধরে মনে করেছিল হামাস বড় ধরনের সংঘর্ষে আগ্রহী নয় এবং কোনো আক্রমণের আগে ইজরায়েলের কাছে যথেষ্ট সতর্কবার্তা থাকবে (Israel Army Probe)। এই ভুল ধারণার কারণে সেনাবাহিনী যথাযথ প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হয়। এছাড়া, ইজরায়েল হিজবুল্লাহসহ অন্যান্য ফ্রন্টে বেশি মনোযোগ দিয়েছিল এবং কেবল গোয়েন্দা তথ্য, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সীমান্ত প্রাচীরের ওপর নির্ভর করেছিল, যার ফলে তারা আক্রমণের সময়ে সম্পূর্ণভাবে বিস্মিত হয়েছিল।
নেতৃত্বের সমালোচনা ও পদত্যাগ
হামলার সময় ইজরায়েলে প্রায় ১,১৩৯ জন নিহত হন এবং এরপর গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৮,০০০-এর বেশি প্যালেস্তিনীয় মারা গেছেন। এছাড়া, হামাস ২০০-র বেশি মানুষকে বন্দি করে নিয়ে যায়। এই ঘটনার পর ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছে।
আরও পড়ুন: US Army: মার্কিন সেনাবাহিনী থেকে বাদ পড়তে পারেন ট্রান্সজেন্ডার সৈন্যরা
এরই মধ্যে ২০২৪ সালে ইজরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান আহারন হালিভা পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া, জানুয়ারিতে ইজরায়েলের সেনাপ্রধান হার্জি হালেভিও পদত্যাগ করেন। সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডার ইয়ারন ফিঙ্কেলম্যানও দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। পদত্যাগের সময় হালেভি বলেন, “আমি সম্পূর্ণ দায় স্বীকার করছি। অক্টোবর ৭-এ আমি সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলাম। এই ব্যর্থতার দায় আমার।”
তিনটি ধাপে হামাসের আক্রমণ
তদন্তে বলা হয়েছে, হামাস তিনটি ধাপে আক্রমণ চালিয়েছিল এবং এই সময় ৫,০০০-এর বেশি যোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ ইজরায়েলে প্রবেশ করেছিল। প্রথম ধাপে, হামাসের ১,০০০-এর বেশি নুখবা বাহিনীর যোদ্ধা ভারী গোলাবর্ষণের মধ্যে দিয়ে ইজরায়েলে প্রবেশ করে। তারা ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং কমান্ড সেন্টার ধ্বংস করে। ফলে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: Caro Quintero: ‘মাদক সম্রাট’ রাফায়েল ক্যারো কুইন্তেরো সহ ২৯ জনকে আমেরিকায় পাঠালো মেক্সিকো
দ্বিতীয় ধাপে, প্রায় ২,০০০ হামাস যোদ্ধা হামলায় অংশ নেয়। তৃতীয় ধাপে, আরও কয়েকশো যোদ্ধা ও হাজারো সাধারণ মানুষ ইসরায়েলে প্রবেশ করে। তবে, হামাস দাবি করেছে যে কয়েকশো যোদ্ধা এই হামলায় অংশ নিয়েছিল।
নিজেদের নাগরিকদের ওপর ইজরায়েলি সেনার গুলি?
ইজরায়েলি সংবাদমাধ্যম Haaretz-এর এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা হামাসের যোদ্ধাদের আটকাতে গিয়ে ভুলবশত নিজেদের নাগরিকদের ওপর গুলি চালিয়েছিল।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি
তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর, ইজরায়েলের বিরোধী নেতা ইয়াইর লাপিদ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে একটি সরকারিভাবে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ইজরায়েলি সেনাবাহিনী সাহস ও সততার সঙ্গে নিজেদের ভুল খতিয়ে দেখছে। কিন্তু সরকারের দুর্বল ও ব্যর্থ নেতৃত্ব নিজেদের দায় স্বীকার করতে চাইছে না।”