ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: দক্ষিণ গাজার রাফা অঞ্চলে যেন নেমে এসেছে পৃথিবীর শেষ দিন (Israel Gaza)। যত দূর চোখ যায়, বিস্তীর্ণ এলাকায় সারি সারি পোড়া, ভাঙা, কঙ্কালসার বাড়ি। এক সময়ের জনবহুল বসতি আজ শুধুই এক ভয়ানক স্মৃতি। ইজ়রায়েলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় রাফার প্রায় ৯০ শতাংশ বসতবাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ১২ হাজার বর্গমিটার এলাকা। হাজার হাজার মানুষ খোলা আকাশের নীচে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন—ত্রাণ নেই, খাবার নেই, জল নেই।
জলের ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে (Israel Gaza)
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কোনও রকম মানবিক সহায়তা ঢুকতে দেওয়া হয়নি ওই এলাকায় (Israel Gaza)। ২২টি ওয়াটার ওয়েল ধ্বংস করে দেওয়ায় পরিস্রুত জলের ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পাশাপাশি নিকাশি ব্যবস্থাও সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত, ফলে জমে উঠেছে আবর্জনা, পচাগলা মৃতদেহ এবং বর্জ্য। রোগব্যাধির আশঙ্কায় আশঙ্কিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি।
স্বাস্থ্য পরিষেবা শোচনীয় (Israel Gaza)
স্বাস্থ্য পরিষেবার অবস্থাও অত্যন্ত শোচনীয় (Israel Gaza)। রাফার ১২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটিও আর সচল নেই। সম্প্রতি ইজ়রায়েলি বাহিনী বিস্ফোরক রোবট ব্যবহার করে ধ্বংস করেছে ‘আবু ইউসেফ আল-নাজ়ার’ হাসপাতাল। শিক্ষা ক্ষেত্রেও ধস, রাফার আটটি স্কুল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত। শতাধিক মসজিদের বেশিরভাগই সম্পূর্ণ ধ্বংস বা অর্ধভগ্ন অবস্থায় রয়েছে।

আরও পড়ুন: US Tariff War : শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলছে ৫০টি দেশ! ভারত এগোচ্ছে কোন পথে?
জঙ্গি নির্মূল (Israel Gaza)
গাজ়ায় যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে ফের নতুন করে হামলা শুরু করেছে ইজ়রায়েল (Israel Gaza)। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু (Benjamin Netanyahu) স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, গাজ়া থেকে ‘জঙ্গি নির্মূল’ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। এই ঘোষণার পরেই ধ্বংসযজ্ঞ আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।

আরও পড়ুন: US Tariff War : মার্কিন শুল্ক নীতিতে বেসামাল এশিয়ার শেয়ার বাজার! ‘ওষুধ কাজে দিয়েছে’ বলছেন ট্রাম্প
নিহতের সংখ্যা (Israel Gaza)
স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ইজ়রায়েল-হামাস (Israel Gaza) যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৫০,৬৯৫ জন প্যালেস্টাইনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার মানুষ। ইজ়রায়েলের দাবি, নিহতদের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার ‘জঙ্গি’। এই মৃত্যু উপত্যকার চিত্র আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে রবিবার ভোররাতে খান ইউনিস শহরে চালানো একটি হানাদারি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একটি বসতবাড়ি এবং তার চারপাশের অস্থায়ী ছাউনিগুলিতে টার্গেট করে হামলা চালানো হয়। মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জনের—এদের মধ্যে ১০ জনই মহিলা ও শিশু। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন এক সাংবাদিকও।
রাফায় ধ্বংস যজ্ঞ
ঘটনার সাক্ষী খান ইউনিসের বাসিন্দা মহম্মদ আবু উদা জানান, ‘‘ভোরবেলা বিশাল বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভাঙে। দেখি পাশের বাড়ি আমাদের বাড়ির উপর ভেঙে পড়েছে। কোনও মতে বেঁচে ফিরি, কিন্তু প্রতিবেশীদের খুঁজতে গিয়ে শুধু দেহের টুকরো আর পুড়ে যাওয়া স্মৃতিই পেয়েছি।’’ এই নির্মম পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বহু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। কিন্তু যুদ্ধের কণ্ঠরোধে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। রাফা আজ শুধু ধ্বংস নয়, মানবতার ইতিহাসে এক গভীর ক্ষত হয়ে রয়ে গেল।