ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: গাজ়ায় ইজ়রায়েল ও হামাসের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ যখন সপ্তম মাসে পা দিয়েছে, তখন ফের নতুন একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এসেছে মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় (Israel Hamas Conflict)। ইজ়রায়েলের এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজ়া-অধ্যুষিত এলাকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে ৪৫ দিনের জন্য—তবে তার বিনিময়ে হামাসকে মুক্তি দিতে হবে ১১ জন ইজ়রায়েলি পণবন্দিকে এবং… অস্ত্রত্যাগ করতে হবে। এই শর্ত ঘিরেই ফের নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
অস্ত্রসমর্পণ নয়, লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প (Israel Hamas Conflict)
ইজ়রায়েলের এই শর্তকে ‘অসম্মানজনক’ ও ‘বাস্তবতা-বর্জিত’ বলে কড়া ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস (Israel Hamas Conflict)। সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতা সামি আবু জ়ুহরি বলেন, “আমাদের অস্ত্র মানে আমাদের আত্মরক্ষা। ইজ়রায়েলের অব্যাহত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এটাই আমাদের একমাত্র উপায়। অস্ত্রত্যাগ মানেই আত্মসমর্পণ—এটা কখনই হতে পারে না।”তিনি আরও বলেন, পণবন্দিদের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে, তবে তা হতে হবে সামগ্রিক যুদ্ধবিরতির শর্তের মধ্যে, যেখানে গাজ়া থেকে সেনা প্রত্যাহার, অবরোধ প্রত্যাহার ও খাদ্য-ওষুধ সরবরাহের অবাধ প্রবেশাধিকার থাকবে।
মৃত্যুর মিছিল ৫১ হাজার ছুঁই ছুঁই (Israel Hamas Conflict)
ইজ়রায়েলের সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন বলে দাবি স্থানীয় প্রশাসনের। নিহতদের বড় অংশই নারী ও শিশু। ধ্বংস হয়েছে হাজার হাজার বাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ ও সরকারি ভবন। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা গাজ়ার মানবিক পরিস্থিতিকে “বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে গভীর মানবিক সংকট” বলে আখ্যা দিয়েছে।

অবরুদ্ধ গাজ়া (Israel Hamas Conflict)
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে অবরুদ্ধ গাজ়া অঞ্চলে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের প্রবেশ একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলিতে বিদ্যুৎ নেই, অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম নেই, এবং আহতদের চিকিৎসা করার মতো পর্যাপ্ত ডাক্তারও নেই। যুদ্ধ যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে মানবিক বিপর্যয়ের গভীরতা।
আন্তর্জাতিক চাপ ও মধ্যস্থতার চেষ্টা (Israel Hamas Conflict)
মিশর ও কাতার বহু দিন ধরেই ইজ়রায়েল ও হামাসের মধ্যে সমঝোতার সেতুবন্ধন তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে (Israel Hamas Conflict)। এই নতুন যুদ্ধবিরতির খসড়াও সেই প্রয়াসেরই ফল। তবে এই খসড়ায় ইজ়রায়েলের পক্ষ থেকে ‘অস্ত্রসমর্পণ’কে মূল শর্ত হিসেবে জুড়ে দেওয়া, প্রক্রিয়াকে নতুন করে জটিল করে তুলেছে।বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধ থামাতে চাইলে দুই পক্ষকেই কিছুটা নমনীয় হতে হবে। ইজ়রায়েলের প্রস্তাবকে হামাস আত্মসমর্পণের বার্তা হিসেবে দেখছে। আর হামাসের অস্ত্রধারিতা ইজ়রায়েল ও তার মিত্রদের চোখে ভবিষ্যতের সন্ত্রাসের উৎস।
‘হামাসের সম্পূর্ণ নির্মূল’? (Israel Hamas Conflict)
ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু (Benjamin Netanyahu) বহুবার বলেছেন, “এই লড়াই থামবে না,(Israel Hamas Conflict) যতক্ষণ না আমরা হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে পারছি।” এর অর্থ হামাসের সামরিক পরিকাঠামো, অস্ত্রভাণ্ডার, রাজনৈতিক কাঠামো ও নেতৃত্ব—সবকিছুর সমাপ্তি।ইজ়রায়েলের এই অবস্থানকে সমর্থন করছে তার প্রধান মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদিও হোয়াইট হাউস থেকে কিছুটা সংযত সুরে ‘নাগরিক প্রাণহানি কমানোর আহ্বান’ জানানো হয়েছে, তবে যুদ্ধ বন্ধে চাপ প্রয়োগ এখনও দেখা যাচ্ছে না।
অস্ত্র না রাখলে হামাসের ভবিষ্যৎ কী? (Israel Hamas Conflict)
হামাসের অস্তিত্ব ও জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ হলো ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা(Israel Hamas Conflict)। অস্ত্রত্যাগের মানে হবে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসা, যা বহু ফিলিস্তিনির চোখে বিশ্বাসঘাতকতা বলেই মনে হবেরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজ়ায় অস্ত্রহীন হামাস মানে গাজ়ায় ইজ়রায়েলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম। এই শর্ত শুধু হামাস নয়, গাজ়ার বহু সাধারণ মানুষের কাছেও মেনে নেওয়া অসম্ভব।
সমাধান কোথায়? (Israel Hamas Conflict)
গাজ়া যুদ্ধ ক্রমশ আরও জটিল, আরও নিষ্ঠুর হয়ে উঠছে। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা, ধ্বংসের পরিমাণ এবং ঘৃণার গভীরতা (Israel Hamas Conflict)। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব যতই আসুক না কেন, তা সফল হতে পারে একমাত্র তখনই, যখন দুই পক্ষই বাস্তববাদী ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি বিবেচনা করবে।ইজ়রায়েল যদি সত্যিই শান্তি চায়, তবে অস্ত্রত্যাগের একপাক্ষিক শর্ত চাপিয়ে না দিয়ে সমতা ভিত্তিক আলোচনায় আসা জরুরি। আর হামাসের পক্ষেও শুধুই প্রতিরোধের কথা না বলে রাজনৈতিক সমাধানের পথ খোলা রাখা প্রয়োজন।এত প্রাণহানি ও ধ্বংসের পর, গাজ়ার মাটি আজও অপেক্ষায়—একটি টেকসই, সম্মানজনক ও মানবিক যুদ্ধবিরতির।