Last Updated on [modified_date_only] by Debu Das
ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: গাজা ভূখণ্ডে চলমান সংঘাতের মধ্যে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) একের পর এক আবাসিক এলাকা ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ উঠেছে(Israel Hamas Conflict)। হামাসকে দমন করার অজুহাতে সাধারণ গৃহস্থদের ঘরবাড়ি ধ্বংসের যে ভয়াবহ চিত্র দেখা যাচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মহলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে একাধিক উপগ্রহচিত্রের বিশ্লেষণ। তাতে দেখা গিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফা শহর এবং তার আশপাশের এলাকার অধিকাংশ ভবন বুলডোজার ও বিস্ফোরণের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। গত এপ্রিল থেকে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা আরও তীব্রতর হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে।
মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের ক্ষোভ (Israel Hamas Conflict)
বিবিসির প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন বিশেষজ্ঞদের দাবি, ইজরায়েলের (Benjamin Netanyahu) এই কর্মকাণ্ড স্পষ্টতই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের সমান(Israel Hamas Conflict)। জেনেভা কনভেনশনের ৫৩ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতেও সাধারণ মানুষের জীবন, সম্পত্তি এবং আশ্রয়স্থল ধ্বংস করা যাবে না, যদি না সামরিক প্রয়োজনের কারণে তা সম্পূর্ণ অনিবার্য হয়।
আইন বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন—“গাজায় যে ভাবে নিরীহ নাগরিকদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হচ্ছে, তা কেবল অমানবিকই নয়, বরং যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্যযোগ্য(Israel Hamas Conflict)। এর ফলে নিরস্ত্র নারী-শিশুরা গৃহহীন হচ্ছে এবং মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।”
ইজরায়েলের যুক্তি,‘হামাসের অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস’ (Israel Hamas Conflict)
ইজরায়েল অবশ্য নিজেদের কর্মকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলছে, হামাস সন্ত্রাসী সংগঠনটি সাধারণ মানুষের বাড়িঘরকে অস্ত্র ও গোলাবারুদের গোপন ভাণ্ডার হিসেবে ব্যবহার করছে। এই দাবির ভিত্তিতে ইজ়রায়েলি সেনারা বহু বাড়ি নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে(Israel Hamas Conflict)।

আরও পড়ুন: Martian Meteorite : সাহারার বুকে পাওয়া মঙ্গলগ্রহের উল্কাপিণ্ডের নিলাম, বিক্রি হল ৫৩ লক্ষ ডলারে!
গত জুলাই মাসে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল কাট্জ ঘোষণা করেছিলেন, “রাফা-সহ গাজার বহু শহরে নতুন ‘মানবিক শহর’ গড়ে তোলা হবে। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে সেখানে পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি করে ৬ লক্ষ প্যালেস্টাইনি নাগরিককে আশ্রয় দেওয়া হবে।” কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল ইজরায়েলের এই দাবিকে ‘সাজানো প্রচার’ বলে কটাক্ষ করছে। ইজরায়েলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট পর্যন্ত বলেছেন,“মানবিক শহরের নামে নতুন বন্দিশিবির তৈরি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্যালেস্টাইনিদের নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা চলছে।”

গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকট(Israel Hamas Conflict)
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষের পর থেকে গাজা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে(Israel Hamas Conflict)। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা জানিয়েছে,
- লক্ষাধিক ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস হয়েছে।
- ২৩ লক্ষ মানুষের অর্ধেকেরও বেশি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।
- খাদ্য ও পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
- স্বাস্থ্য পরিকাঠামো প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসা পরিষেবা অচল।
রাফা, খান ইউনুস, দেইর আল-বালাহের মতো শহরগুলির অধিকাংশ এলাকা এখন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের মতে, “গাজার বর্তমান অবস্থা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের ধ্বংসস্তূপের সঙ্গে তুলনীয়।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও তদন্তের দাবি (Israel Hamas Conflict)
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা (ইউএনএইচআরসি) ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ইজরায়েলের কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেছেন,“সাধারণ নাগরিকের জীবন এবং বসতি ধ্বংস করা যুদ্ধের নীতি বিরোধী। ইজরায়েলকে অবিলম্বে এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে(Israel Hamas Conflict)।” ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-তে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন তদন্তের দাবি তুলেছেন মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
পরিস্থিতি কোন পথে? (Israel Hamas Conflict)
মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্লেষকদের মতে, গাজার ওপর ইজরায়েলের বর্তমান নীতি একটি দীর্ঘমেয়াদি ভূরাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ(Israel Hamas Conflict)। গাজার জনসংখ্যাকে ছত্রভঙ্গ করা এবং হামাসকে সামরিকভাবে দুর্বল করার পাশাপাশি গাজা ও ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কৌশল চলছে বলে অভিযোগ।