ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ইরানের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও গাজায় সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইজরায়েল (Israel Hamas Conflict)। মঙ্গলবার ভোর থেকে একাধিক হামলায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪৩ জন প্যালেস্টাইনির, যাঁদের মধ্যে ২০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন শুধুমাত্র খাবার বা ত্রাণ নিতে গিয়ে। গাজার রাফা, খান ইউনিস এবং দেইর আল-বালাহ এলাকায় এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য প্রশাসন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, খাবারের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর ইজরায়েলি ড্রোন ও কামান থেকে হামলা চালানো হয়। এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ (United Nations) এই হামলাকে “মানবিকতার চরম লঙ্ঘন” বলে নিন্দা করেছে।
ত্রাণ শিবিরে মৃত্যু-ফাঁদ? (Israel Hamas Conflict)
গাজায় বর্তমানে ত্রাণ বিতরণের কাজ চালাচ্ছে আমেরিকা ও ইজরায়েল-সমর্থিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)। কিন্তু এই সংস্থার ত্রাণ শিবির নিয়েই উঠেছে গুরুতর প্রশ্ন। স্থানীয় প্রশাসন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলির অভিযোগ, GHF-এর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলিতে ইজরায়েলি সেনা ভিড় নিয়ন্ত্রণের নামে বেপরোয়া গুলি চালাচ্ছে(Israel Hamas Conflict)। ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হচ্ছেন সাধারণ প্যালেস্টাইনিরা। সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ শিবিরে হামলায় ৪০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও হাজারের বেশি। রাফা অঞ্চলে এই হামলার সংখ্যা এবং তীব্রতা সবচেয়ে বেশি।
ইজরায়েলি অবস্থান (Israel Hamas Conflict)
ইজরায়েল এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে। সেনাবাহিনী দাবি করেছে, “জঙ্গিদের গোপন ডেরা” গুলিকেই তারা নিশানা করেছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যম এবং মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের মতে, ওই অঞ্চলগুলিতে কোনো জঙ্গি উপস্থিতির প্রমাণ মেলেনি। বরং, হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

ত্রাণ সংকট তীব্র, গাজাবাসী কার্যত অনাহারে (Israel Hamas Conflict)
ইজরায়েলি অবরোধে বহুদিন ধরে গাজার খাদ্য, ওষুধ ও মানবিক সাহায্যের প্রবেশ রুদ্ধ ছিল(Israel Hamas Conflict)। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক চাপে কিছুটা শিথিলতা আনলেও, পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ। প্রতি দিন দু’বেলা খাবার জোগাড় করাই কঠিন হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের জন্য। গাজার বাজারে চাল, ডাল, তেল, পানীয় জল—সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া। রোজগার নেই, পকেটে টান। ফলে ত্রাণ শিবিরের উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে অধিকাংশ বাসিন্দাকে।
ইরান-ইজরায়েল সংঘর্ষের ছায়া (Israel Hamas Conflict)
এই মানবিক সংকটের মধ্যেই চলছে ইরান ও ইজরায়েলের সরাসরি সামরিক সংঘাত(Israel Hamas Conflict)। গত ১২ দিন ধরে দুই দেশ পাল্টাপাল্টি হামলায় লিপ্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এই যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। সোমবার কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা এবং তারপর ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা—সব মিলিয়ে পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এই পরিস্থিতিতে গাজায় চলা ইজরায়েলি হামলাকে রাষ্ট্রপুঞ্জ বলছে,“যুদ্ধের বাইরেও আর এক যুদ্ধ”।মানবাধিকার সংগঠনগুলি প্রশ্ন তুলছে, ত্রাণের নাম করে GHF আদতে “মৃত্যু-ফাঁদ” তৈরি করছে কি না।

আরও পড়ুন: Iran Israel Ceasefire : যুদ্ধবিরতিতে আনুষ্ঠানিক সম্মতি নেই, তবু সংঘর্ষে ইতি পড়ার ইঙ্গিত তেহরানের!
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া (Israel Hamas Conflict)
সৌদি আরব, তুরস্ক ও মিশরের মতো দেশগুলি ইজরায়েলের গাজা অভিযানের কড়া সমালোচনা করেছে(Israel Hamas Conflict)। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ত্রাণ নিতে গিয়ে যদি মানুষের মৃত্যু হয়, তা হলে সেটি যুদ্ধাপরাধের শামিল।” এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখ গাজার দিকে—ত্রাণ সরবরাহ নিরাপদ হবে কি না, এবং ইজরায়েল এই মানবিক সংকট থেকে সরে দাঁড়াবে কি না, তা-ই দেখার। কিন্তু প্রতিদিন যেভাবে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে মানবতার আর কতটা অবশিষ্ট থাকছে, সেই প্রশ্নটাই এখন সবচেয়ে বড়।