ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক ছায়া ঘনিয়ে আসতেই এবার শান্তির পথ খুঁজতে বসছে আন্তর্জাতিক মহল(Israel Iran conflict)। ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের আবহে শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বৈঠকে মুখোমুখি হতে চলেছে ইরান ও ইউরোপের তিন শক্তিধর দেশ — যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য, যুদ্ধের আগুন যাতে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে না পড়ে,তা নিশ্চিত করা এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ঘিরে ফের আলোচনার টেবিলে ফেরা।
ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক (Israel Iran conflict)
ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি (Seyed Abbas Araghchi) রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা IRNA-কে দেওয়া বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “শুক্রবার জেনেভায় ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হবে(Israel Iran conflict)।” ইউরোপীয় কূটনীতিকরাও বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন ফ্রান্সের বিদেশমন্ত্রী জঁ-নোয়েল ব্যারো, ব্রিটেনের বিদেশসচিব ডেভিড ল্যামি, জার্মানির বিদেশমন্ত্রী ইয়োহান ওয়াডেফুল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া কাল্লাস। তাঁরা সম্প্রতি আরাঘচির সঙ্গে আলোচনায় বসে সরাসরি বৈঠকে সম্মত হন।
পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলার (Israel Iran conflict)
ইজরায়েলের “অপারেশন রাইজিং লায়ন” অভিযানে ইরানের একাধিক পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলার পর উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে(Israel Iran conflict)। নিহত হয়েছেন ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা। মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ইরানে অন্তত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৬৩ জনই সাধারণ নাগরিক। আহতের সংখ্যা ১৩০০-রও বেশি। পাল্টা হামলায় ইজরায়েলে নিহত হয়েছেন ২৪ জন।

সংঘাত নয়, সমাধানের খোজে মধ্যপ্রাচ্য (Israel Iran conflict)
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকঁ বলেন, “সংঘাত নয়, আলোচনাই সমাধান(Israel Iran conflict)। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে বলা হয়েছে, ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে একটি শান্তিপূর্ণ প্রস্তাব তৈরি করতে।” তাঁর নির্দেশেই ব্যারো বৃহস্পতিবার জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদির সঙ্গে আলোচনার পর জানান, “আমরা ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত।”ব্রিটেনের ডেভিড ল্যামি জানিয়েছেন, “আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, ইরান যেন কোনও দিন পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন না করতে পারে। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে কূটনৈতিক সমাধানের একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে।”

আমেরিকা নামবে সরাসরি সংঘাতে? (Israel Iran conflict)
এদিকে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের জানান, তিনি এখনও ঠিক করেননি, আমেরিকা সরাসরি সংঘাতে জড়াবে কি না(Israel Iran conflict)। তবে তাঁর মতে, কূটনৈতিক আলোচনার একটি “উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা” তৈরি হয়েছে।ট্রাম্প ২০১৮ সালে একতরফাভাবে ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন, যদিও ইউরোপীয় শক্তিগুলি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছিল। বর্তমানে ইরান যেসব ফোর্ডো পরমাণু কেন্দ্রে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, সেগুলি পাহাড়ের নিচে অবস্থিত এবং শুধুমাত্র আমেরিকার “বাংকার বাস্টার” বোমা দিয়েই তা ধ্বংস সম্ভব।
ট্রাম্পের পাশে নেতানিয়াহু (Israel Iran conflict)
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের পাশে আছেন বলে জানান(Israel Iran conflict)। “আমি জানি, তিনি আমেরিকার স্বার্থেই সিদ্ধান্ত নেবেন। ইতিমধ্যেই তারা আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করছে।” ২০১৩ সালে জেনেভাতেই ইরান এবং বিশ্বশক্তিগুলির মধ্যে প্রথম পরমাণু আলোচনার সূচনা হয়েছিল। তাই আবার সেই শহরে আলোচনার ডাক নিঃসন্দেহে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি — শান্তির শেষ আশার আলো কি এখান থেকেই ছড়াবে? শুক্রবারের বৈঠক এখন বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে উঠেছে।