ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: গাজ়া ভূখণ্ডের অবস্থা ক্রমশই ভয়াবহ হয়ে উঠছে (Israel Palestine Conflict)। হামাস-এর বিরুদ্ধে ইজ়রায়েলের সামরিক অভিযান একদিকে যেমন বোমাবর্ষণের মাধ্যমে তীব্র হয়ে উঠেছে, তেমনি অন্যদিকে অঞ্চলটিতে ব্যাপক খাদ্য সঙ্কট এবং মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে। ইজ়রায়েল যখন গাজ়ায় হামলা চালাচ্ছে, তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে সেই রাষ্ট্রগুলি, যারা আগে ইজ়রায়েলের সমর্থক ছিল।
ইজ়রায়েলের আন্তর্জাতিক বন্ধুরাষ্ট্রগুলির বিরোধিতা (Israel Palestine Conflict)
ইজ়রায়েল, যা সাধারণত পশ্চিমের অনেক দেশ থেকে সামরিক এবং রাজনৈতিক সমর্থন পায়, তা এবার গাজ়া নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েছে (Israel Palestine Conflict)। সোমবার, ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নিজেই এ কথা স্বীকার করেছেন যে, ইজ়রায়েলের বন্ধুরাষ্ট্রগুলি গাজ়ার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তাদের আর কোনোভাবেই ইজ়রায়েলকে সমর্থন করতে সক্ষম নয়। এর মধ্যে ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং কানাডা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, যদি ইজ়রায়েল গাজ়ায় সামরিক অভিযান বন্ধ না করে এবং মানবিক সাহায্য প্রবাহে বাধা দেয়, তবে তারা কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এই আন্তর্জাতিক চাপের ফলে, ইজ়রায়েল শেষ পর্যন্ত সীমিত পরিমাণে খাদ্য এবং মানবিক সাহায্য গাজ়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যদিও তার সামরিক অভিযান থেমে যায়নি। নেতানিয়াহু (Benjamin Netanyahu) স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, হামাস যদি বন্দিচুক্তি মেনে না চলে, তবে গাজ়া ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয়া ইজ়রায়েলের জন্য “অবশ্যক” হয়ে দাঁড়াবে এবং হামলা আরও বাড়বে (Israel Palestine Conflict)।
খাদ্য সাহায্য এবং কড়া হুঁশিয়ারি (Israel Palestine Conflict)
রবিবার, ইজ়রায়েল গাজ়ায় সীমিত পরিমাণে খাদ্য এবং মানবিক সাহায্য পাঠানোর ঘোষণা করেছে (Israel Palestine Conflict)। তবে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ টম ফ্লেচার জানিয়েছেন, এই ত্রাণ সরবরাহ ছিল “সীমিত” এবং “অত্যাবশক চাহিদার সমুদ্রে এক বিন্দুমাত্র”। গাজ়ায় ত্রাণ পৌঁছানোর পর, পাঁচটি ত্রাণবোঝাই ট্রাক সেখানে প্রবেশ করেছে, যা কিছুটা হলেও সেখানে খাদ্য সঙ্কটের পরিমাণ কিছুটা কমাতে সহায়তা করতে পারে। তবে এই ত্রাণের পরিমাণ সম্পূর্ণভাবে অপর্যাপ্ত, এবং গাজ়ার জনগণের বৃহৎ অংশকে সহায়তা দিতে এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়।একদিকে, ইজ়রায়েল মানবিক সাহায্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অন্যদিকে নেতানিয়াহু আবারও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন যে, যদি হামাস বন্দিচুক্তি মেনে না চলে, তবে গাজ়া ভূখণ্ডের সামরিক অভিযান তীব্রতর হবে এবং পুরো গাজ়া নিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করা হতে পারে (Israel Palestine Conflict)।

আরও পড়ুন : India Pakistan Tensions : পাক ‘পরমাণু হুমকি’ নিয়ে সংসদীয় কমিটিকে কী বিবৃতি দিলেন বিক্রম মিস্রী?
আন্তর্জাতিক স্তরে চাপ বাড়ছে (Israel Palestine Conflict)
ব্রিটেন, ফ্রান্স, এবং কানাডার হুঁশিয়ারি থেকে স্পষ্ট যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন গাজ়ায় সামরিক অভিযান এবং মানবিক সহায়তার প্রবাহে বাধার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত (Israel Palestine Conflict)। অনেক পশ্চিমা দেশই ইজ়রায়েলকে “মানবাধিকার লঙ্ঘন” এবং “যুদ্ধাপরাধ” এর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। এই ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ইজ়রায়েলকে বৈশ্বিক স্তরে আরো কোণঠাসা করে ফেলেছে।

আরও পড়ুন: Hunger Crisis In Gaza : চাপে পড়ে গাজ়ায় ত্রাণ পাঠালো ইজ়রায়েল! কোন চাপে বাধ্য হল নেতানিয়াহু ?
গাজ়ায় মানবিক বিপর্যয় (Israel Palestine Conflict)
গাজ়ায় চলমান সামরিক অভিযানে শুধু ভৌত ধ্বংস নয়, বরং মানবিক বিপর্যয় এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। সশস্ত্র সংঘাতের পাশাপাশি খাদ্য সঙ্কট, পানির সংকট, চিকিৎসা সেবা বন্ধ এবং অসুস্থতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে (Israel Palestine Conflict)। জাতিসংঘের মতে, গাজ়ায় ত্রাণ ও খাদ্য সরবরাহ অত্যন্ত সীমিত এবং পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে।গাজ়া অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ও শিশুদের জন্য এই সংকট আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, এবং তাদের জীবনের মান অত্যন্ত খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলির মতে, বিশ্বের কোনো দেশই এত দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকটকে নির্বিচারে অবহেলা করতে পারে না। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে, ইজ়রায়েলকে হয়তো তার সামরিক পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
সামরিক অভিযানের তীব্রতা ও প্রতিবাদ (Israel Palestine Conflict)
২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর হামাস-এর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে, ইজ়রায়েল গাজ়ার ওপর একাধিক বোমাবর্ষণ চালিয়েছে। কাতার, আমেরিকা, এবং মিশরের মধ্যস্থতায় ১৫ জানুয়ারি সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়েছিল, তবে মার্চের শুরুর দিকে তা ভেঙে যায় এবং আবার গাজ়ায় ইজ়রায়েলের সামরিক অভিযানের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।
ইজ়রায়েলের কঠোর নিষেধাজ্ঞা (Israel Palestine Conflict)
গাজ়া ভূখণ্ডের ওপর ইজ়রায়েলের কঠোর নিষেধাজ্ঞা এবং ত্রাণ সহায়তা বন্ধ করার প্রেক্ষাপটে, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলি আরও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। তবে, এভাবে চলতে থাকলে গাজ়ায় আসন্ন বিপর্যয় এবং বিশাল মানবিক সংকটের জন্য দায়ী থাকবে ইজ়রায়েল এবং তার সমর্থক দেশগুলি। গাজ়ার বর্তমান পরিস্থিতি একটি মানবিক দুঃখ এবং রাজনৈতিক সংকটের প্রতিফলন। আন্তর্জাতিক চাপ এবং মানবিক সহায়তার সীমাবদ্ধতা, এই সংকটের সমাধান খুঁজে বের করার জন্য আরও দায়িত্বশীল এবং দ্রুত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করছে। যুদ্ধের অবসান ও শান্তিপূর্ণ সমাধান অনুসন্ধানের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায় যদি একজোট হয়ে ইজ়রায়েলকে বাধ্য না করে, তবে গাজ়ায় পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যেতে পারে।