ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: রথ এলেই আসে উৎসবের আবহ, ভক্তির ঢেউ। কিন্তু সেই রথযাত্রার দিনে কেউ কেউ শুধু দর্শক হয়ে থাকেন — শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে নয়, বরং এক অন্যতর গভীরতায় তারা হয়ে ওঠেন রথের সত্যিকারের রথী। তেমনই একজন মানুষ, পূর্ব বর্ধমানের(Purba Bardhaman) আউসগ্রাম-১ ব্লকের বেলেডি গ্রামের জগন্নাথ বাউরী(Jagannath Bauri)।
এ এক অন্য জগন্নাথের কাহিনি!(Jagannath Bauri)
জন্ম থেকেই দুই হাত নেই তাঁর। তবুও জগন্নাথবাবু(Jagannath Bauri) থেমে থাকেননি। দু’হাতে নেই স্পর্শ করার সাধ্য, তবুও জগৎকে টেনে নেন নিজের ইচ্ছার রথে। তিনি নিজেই দৃষ্টান্ত — শারীরিক সীমাবদ্ধতা কোনও বাধা নয়, যদি লক্ষ্য থাকে স্থির। আজ সেই জগন্নাথই হয়ে উঠেছেন মানুষ তৈরির কারিগর। নিজের প্রতিটি পদক্ষেপে অনুপ্রেরণা জোগান অসংখ্য হৃদয়ে। জগন্নাথ মানেই বিশ্বাস। জগন্নাথ মানেই লড়াই করে এগিয়ে চলা। জীবন সংগ্রামে, শিক্ষা-সাধনায়, আর মনোবলের জোরে তিনিই আজ বহু মানুষের অনুপ্রেরণা। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি থেকে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত তিনি। বর্তমানে তিনি জয়কৃষ্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক — আর তার চেয়েও বড় পরিচয়, তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক।

পায়ে লিখেই গড়ছেন অগণিত ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ(Jagannath Bauri)
নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জগন্নাথবাবু(Jagannath Bauri)বলেন, “জন্ম থেকেই আমার দুটো হাত নেই। কিন্তু আমি অসুবিধা বলতে কিছু বুঝি না। মনোবলই আমার ঈশ্বর।”তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়েছিলেন শিক্ষক ভূতনাথ পাল। তিনিই প্রথম জগন্নাথকে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে স্কুলে ভর্তি করান, পায়ের আঙুল দিয়ে লেখা শেখান। সেই শুরুর পথচলা আজ পরিণত হয়েছে এক দীপ্ত শিক্ষাগত যাত্রায়।
রথযাত্রা নিয়ে আবেগঘন ‘জগন্নাথ'(Jagannath Bauri)
রথযাত্রা নিয়ে আবেগঘন কণ্ঠে তিনি বলেন, “বাবা জগন্নাথেরও তো দুটো হাত নেই, আমারও নেই। রথ টানতে বড় ইচ্ছে করে, কিন্তু ভগবান আমায় হাত দেননি, রথ আমি টানবো কিভাবে!” তবে বাস্তবে তিনিই টেনে নিয়ে চলেছেন অগণিত ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ। জগন্নাথ বোঝান — বিশ্বাস, অধ্যবসায়, আর আত্মশক্তির উপর ভরসা থাকলে কোনো প্রতিবন্ধকতাই জীবনকে থামিয়ে দিতে পারে না।
আরও পড়ুন: Calcutta High Court: আলিপুর চিড়িয়াখানার জমি বিক্রির অভিযোগ, আদালতে দায়ের জনস্বার্থ মামলা
জগন্নাথবাবুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলেই
শিশুদের সঙ্গে জগন্নাথবাবুর(Jagannath Bauri) সম্পর্ক এক অন্য মাত্রার। বিদ্যালয়ের সহকর্মী ও এলাকাবাসীরা জগন্নাথ স্যারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। রথযাত্রা যে কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং এক অদম্য মনোবলের প্রতীক — জগন্নাথ বাউরীর জীবন তারই এক উজ্জ্বল উদাহরণ। যতই প্রতিবন্ধকতা থাকুক, দৃঢ় আত্মপ্রত্যয় এবং আন্তরিক চেষ্টায় জগন্নাথবাবু হয়ে উঠেছেন অপরাজেয়। শুধু শিক্ষকতা নয়, তিনি সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছেই দৃষ্টান্ত।