ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: হিন্দুধর্মে অধিকাংশ দেব-দেবীর (Jagannath Deb) মূর্তি পাথর বা ধাতু দিয়ে নির্মাণ করা হলেও, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে দেখা যায় এক সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী চিত্র। এখানে ভগবান জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি তৈরি হয়েছে কাঠ দিয়ে, তাও আবার অসম্পূর্ণভাবে। বিশেষ করে জগন্নাথদেবের দুই হাত নেই। এই অদ্ভুত এবং অভিনব রূপের পিছনে রয়েছে এক প্রাচীন ও অলৌকিক কাহিনি।
পুরাণ অনুসারে…(Jagannath Deb)
পুরাণ অনুসারে, কলিঙ্গ রাজ্যের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর (Jagannath Deb) একনিষ্ঠ ভক্ত। তিনি ইচ্ছা করেন, এমন এক মন্দির নির্মাণ করতে, যেখানে বিষ্ণুর এক বিশেষ রূপে পূজা হবে। এই ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি শুরু করেন পুরীর জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের কাজ। কিন্তু মূর্তি নির্মাণের ক্ষেত্রে তিনি দ্বিধায় পড়েন পাথর দিয়ে না ধাতু দিয়ে তৈরি হবে?
কাঠ দিয়েই মূর্তি তৈরির সিদ্ধান্ত (Jagannath Deb)
ঠিক সেই সময়েই সমুদ্রে ভেসে আসে এক বিশাল (Jagannath Deb) নিমগাছের গুঁড়ি। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন বুঝতে পারেন, এটি সাধারণ কাঠ নয় এটি ভগবানের ইচ্ছায় আগত। তিনি সেই কাঠ দিয়েই মূর্তি তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কাঠ দিয়ে মূর্তি তৈরি করা সহজ কাজ নয়। তখনই ঘটল অলৌকিক ঘটনা। স্বয়ং বিশ্বকর্মা দেবতা ছদ্মবেশে রাজদরবারে হাজির হন। তিনি বলেন, তিনিই তৈরি করবেন জগন্নাথের বিগ্রহ, তবে কিছু শর্তে।
বিশ্বকর্মার শর্ত
বিশ্বকর্মার একমাত্র শর্ত ছিল মূর্তি তৈরির সময় যেন কেউ তাকে বিরক্ত না করে। কাজ চলাকালীন দরজা একেবারে বন্ধ থাকবে এবং কেউ ভেতরে ঢুকবে না। রাজা শর্ত মেনে নেন। বিশ্বকর্মা শুরু করেন তার গোপন শিল্পকর্ম। দিনের পর দিন কেটে যায়, কিন্তু ভেতর থেকে কোনো শব্দ আসে না। কৌতূহলী রাজা অবশেষে ধৈর্য হারিয়ে দরজা খুলে ফেলেন। এবং তাতেই ঘটে বিপত্তি।

অসম্পূর্ণ মূর্তি
ভিতরে গিয়ে রাজা দেখতে পান, মূর্তিগুলি অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। জগন্নাথের হাত নেই, মুখের রেখাও অসম্পূর্ণ। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হওয়ায় বিশ্বকর্মা সেই মুহূর্তে কাজ বন্ধ করে মন্দির ত্যাগ করেন। রাজা তখন অনুতপ্ত হয়ে পড়েন। তার এবং তার স্ত্রীর গভীর তপস্যার পর, ভগবান বিষ্ণু স্বয়ং দর্শন দেন ও বলেন, এই রূপেই তিনি পুজিত হতে চান।
আরও পড়ুন: Jagannath Bhog: মায়াপুরে জগন্নাথদেবকে ৩০০ পদের ভোগ, মহোৎসবে মেতেছে ইসকন
এই রূপের একটি দার্শনিক ব্যাখ্যাও আছে জগন্নাথ হচ্ছেন ‘জগতের নাথ’, তাঁর কোনও নির্দিষ্ট সীমা নেই। তাই তিনি হাতহীন রূপে পুজিত হন, যা প্রতীক মানবিক সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে ঈশ্বরের সর্বব্যাপী রূপের। এইভাবেই আজও পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে কাঠের তৈরি অসম্পূর্ণ মূর্তি হাতহীন রূপে পূজিত হন জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রা। ইতিহাস, বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য মেলবন্ধন এই মূর্তিগুলির আকার ও গঠন।