ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : কামারহাটির জয়ন্ত সিংয়ের বাড়ি ভাঙার ২৯ মে এর কামারহাটি পুরসভার নোটিশ খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে ওই বেআইনি বাড়ি নির্মাণের উপর পদক্ষেপ করে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে হবে কামারহাটি পুরসভাকে। নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তর সিঙ্গেল বেঞ্চের।
পুরসভার নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মামলাকারীর (Calcutta High Court)
মূল মামলাকারীর আইনজীবী বুধবার শুনানিতে আদালতে দাবি করেন, পুরসভা হাত গুটিয়ে বসে আছে। ওই বাড়িতে বসবাসকারী বলে দাবি করাদের বাড়ি খালি করার নোটিস দিয়ে আর কিছু করেনি। তারা ভাঙতে অপারগ বলে বাইরের কোনও এজেন্সিকে ডাকার কথা ডিভিশন বেঞ্চে বলেছে। কামারহাটি পুরসভা আইনজীবী আদালতে জানায়, আসল মালিককে খুঁজে না পাওয়ায় তারা বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। তারপরে আদালত (Calcutta High Court) বাড়ি ভাঙার নির্দেশ দেয়।
ভৎর্সনার মুখে কামারহাটি পুরসভা কর্তৃপক্ষ (Calcutta High Court)
বিচারপতি (Calcutta High Court) এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে পুরসভাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘অর্ডারে কী লেখা আছে? আপনাদের কমিশনার ইংরেজি বোঝেন? আপনি জোরে জোরে এই অর্ডার পড়ে বলুন, কোনটা না বোঝার মতো লেখা আছে। আমি ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিলাম। তারপরেও ভাঙ্গা হয়েনি কেন? কমিশনারের ওই পদে থাকার কোনও অধিকার নেই। এই অর্ডার যদি কার্যকর করতে না পারেন তিনি আমি কোনও পরামর্শ দেওয়ার জায়গায় নেই। আমি নির্দেশ দিয়েছি, সেটা কার্যকর না করা হলে কীভাবে পুরসভা চলবে, সেটা তারা ঠিক করুক। পুরসভা কেন এখনও কাজে হাত দেয়নি, সেটা আপনিও জানেন। কেন এই নিয়ে শুধু শুধু আইনের কথা বলছেন!’
বিচারপতির নির্দেশ
তারপরই বিচারপতি রাজ্য পুরআইন ১৯৯৩, ২১৮ নম্বর ধারা মেনে পদক্ষেপের নির্দেশ দেন বিচারপতি।নির্দেশ বিচারপতি বলেছেন, ১৯ জুনের নির্দেশে আইন মেনে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছিল। আইন মেনে পদক্ষেপের অর্থ, নোটিস দিয়ে শুনানি করে তারপরেই ভাঙার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাস্তবে পুরসভা প্রথমেই ভাঙতে চলে যায়। আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে গোটা প্রক্রিয়া কার্যকর করে হাইকোর্টে রিপোর্ট দিতে হবে পুরসভাকে।
কে এই জয়ন্ত সিং?
এক সময় বাড়ি বাড়ি ঘুরে দুধ বিক্রি করতেন আড়িয়াদহের জয়ন্ত সিং। পরে শাসকদলের নেতা হয়ে ওঠেন। স্থানীয় প্রতাপরুদ্র লেনে চারতলা প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরি করেন তিনি। এরই মধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের হয়। মামলাকারী অভিযোগ করেন, একটি পুকুর দখল করে পুরসভার কোনও অনুমতি ছাড়াই এলাকায় ওই চারতলা বাড়ি তৈরি করেছেন জয়ন্ত। এমনকী আদালতে ওই মামলাকারীর আইনজীবী নথি পেশ করে অভিযোগ করেন, গোটা নির্মাণই বেআইনি। অথচ পুরসভা কোনও পদক্ষেপ করছে না। যদিও আদালতে পুরসভা দাবি করে, নোটিস দিয়ে নথি তলব করেছিল তারা। তবে বাড়ির মালিক কে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকায় সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় বলেও আদালতে জানায় কামারহাটি পুরসভা। গত ১৯ মে বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্ত নির্দেশ দেন, চার সপ্তাহের মধ্যে জয়ন্তর বাড়ি ভেঙে সেখানে খেলার মাঠ তৈরি করতে হবে। খেলার মাঠ তৈরি করে পুরসভার অফিসারদের আদালতে রিপোর্ট দিতেও বলা হয়।
৬ সপ্তাহের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ
কিন্তু আদালতের সেই নির্দেশ কার্যকর করা হয়নি। উল্টে সেই বাড়ির অন্যান্য বাসিন্দারা বুধবার আদালতে (Calcutta High Court) দাবি করেন, তাদের কোন বক্তব্য না শুনেই পুরসভা আচমকাই তাদের বাড়ি খালি করার নোটিশ পাঠিয়েছে। সেই অভিযোগ জানিয়ে তারা এদিন আদালতে দৃষ্টি আকর্ষণও করেন। তারপরই বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্ত পুরসভাকে আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে ওই বেআইনি বাড়ি নির্মাণের উপর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর কামারহাটিতে এক ব্যক্তিকে মারধরের ঘটনায় প্রকাশ্যে আসে জয়ন্ত সিংয়ের নাম। তাঁর নামে থানায় অভিযোগও দায়ের হয়। তার পর থেকেই একে একে সামনে আসতে থাকে তাঁর নানা কীর্তি। তখনই জানা যায়, আড়িয়াদহের মৌসুমী মোড়ের কাছে জমি দখল করে ও পুকুরের একাংশ ভরাট করে প্রাসাদোপম চারতলা বাড়ি তৈরি করেছেন জয়ন্ত।