ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারতের রাজনৈতিক পরিসরে এক বিতর্কিত অথচ সাহসী কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত সত্যপাল মালিক আর নেই(Satyapal Malik Dies)। মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে দিল্লির রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন প্রাক্তন এই রাজ্যপাল। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমাজমাধ্যমে শোকপ্রকাশ করে লিখেছেন—“ভারতীয় রাজনীতিতে তিনি বিখ্যাত হয়েছিলেন কিছু সত্য কথা বলে, যা খুব অল্পসংখ্যক লোকই পারেন। তিনি ভারতীয় কৃষকদের সমর্থনে সাহসী হয়ে মুখ খুলেছিলেন।”
৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের সাক্ষী ছিলেন সত্যপাল মালিক (Satyapal Malik Dies)
২০১৮ সালের অগস্ট থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল পদে ছিলেন সত্যপাল মালিক(Satyapal Malik Dies)। তাঁর আমলেই ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট, নরেন্দ্র মোদী সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে। রাজ্যের তকমা হারিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয় জম্মু ও কাশ্মীর।
ঘটনাচক্রে, ঠিক ছ’বছর পর সেই একই দিনে (৫ অগস্ট) প্রয়াত হলেন তিনি।
যদিও সেই সময়ে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে তাঁর ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। প্রথমে তিনি দাবি করেছিলেন—“কেন্দ্রীয় সরকার আমাকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের বিষয়ে কিছুই জানায়নি।”
এই মন্তব্য করেন ‘দ্য ওয়্যার’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে। তবে পরে এক সংবাদমাধ্যমে তিনি আবার বলেন যে, ৩৭০ প্রত্যাহারে তাঁরও অবদান রয়েছে। এই পরস্পরবিরোধী মন্তব্য নিয়েই তৈরি হয় রাজনৈতিক বিতর্ক।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ও বারবার দলবদল (Satyapal Malik Dies)
১৯৬০-এর দশকে ছাত্র রাজনীতি দিয়ে শুরু হয় সত্যপাল মালিকের রাজনৈতিক যাত্রা(Satyapal Malik Dies)। তাঁর জীবন ছিল দলবদলের নানা অধ্যায়ে ভরা—
- প্রথমে যোগ দেন চৌধরি চরণ সিংহের ভারতীয় ক্রান্তি দলে।
- ১৯৭৪ সালে চরণ সিংহের হাত ধরে উত্তরপ্রদেশের বাঘপত থেকে বিধানসভা ভোটে জয়ী হন।
- ১৯৮০ সালে লোকদলের হয়ে রাজ্যসভার সাংসদ হন।
- ১৯৮৪ সালে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে ১৯৮৬ সালে ফের রাজ্যসভায় যান।
- ১৯৮৭ সালে বোফোর্স কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পরে কংগ্রেস ত্যাগ করে ভিপি সিংহের জনতা দলে যোগ দেন।
- ১৯৮৯ সালে আলিগড় থেকে জনতা দলের টিকিটে লোকসভা জিতে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হন।
- ২০০৪ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। তবে ওই বছর লোকসভা ভোটে বাগপত আসনে হেরে যান অজিত সিংহের কাছে।
গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন (Satyapal Malik Dies)
রাজনীতির নানা উত্থান-পতনের পর তিনি রাজ্যপালের দায়িত্বও সামলেছেন একাধিক রাজ্যে—
- ২০১৭ সালে বিহারের রাজ্যপাল হন।
- পরে ওড়িশার অতিরিক্ত দায়িত্ব পান।
- এরপর জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব নেন (২০১৮-২০১৯)।
- তারপর গোয়া এবং শেষে মেঘালয়ের রাজ্যপাল হন।
রাজ্যপাল থাকাকালীন কেন্দ্রের সঙ্গে মতবিরোধের ঘটনাও সামনে এসেছে(Satyapal Malik Dies)। জম্মু ও কাশ্মীরে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বলেন—
“আমি দুর্নীতি ঠেকাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কেন্দ্রের থেকে সহযোগিতা পাইনি।”

আরও পড়ুন: Gurmeet Ram Rahim : আবারও ৪০ দিনের প্যারোলে মুক্তি রাম রহিমের
মোদী সরকারের সমালোচক ও কৃষক আন্দোলনের সমর্থক (Satyapal Malik Dies)
সত্যপাল মালিক ছিলেন মোদী (Narendra Modi) সরকারের প্রথম মেয়াদে জমি অধিগ্রহণ বিল পর্যালোচনার প্যানেলের প্রধান। তাঁর নেতৃত্বে কমিটি বিলটির বিরোধিতা করায় তা ঠান্ডাঘরে চলে যায়(Satyapal Malik Dies)। পরবর্তী সময়ে তিনি একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।
বিশেষত কৃষক আন্দোলনের সময় তিনি প্রকাশ্যে বলেন—“এক দিকে আদানি সব চেয়ে ধনী হয়ে উঠছে, আর কৃষকরা এমএসপি-র জন্য লড়ছে।”
এই বক্তব্য ভাইরাল হয় এবং তাঁকে কৃষক আন্দোলনের সমর্থক মুখ হিসেবে চিহ্নিত করে।

আরও পড়ুন: Pakistan Iran Relation : ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে প্রকাশ্যে সমর্থন পাকিস্তানের, ১২টি নতুন চুক্তি সই
এক বিতর্কিত অথচ স্পষ্টভাষী নেতা (Satyapal Malik Dies)
সত্যপাল মালিককে অনেকেই বলতেন “সত্যবলার জন্য বিখ্যাত রাজনীতিক(Satyapal Malik Dies)।” রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শেষ পর্বে তিনি বারবার প্রশাসনের অস্বচ্ছতা ও কর্পোরেট ঘনিষ্ঠতা নিয়ে সরব হন। একই সঙ্গে বিরোধী রাজনীতির মধ্যেও তাঁর বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হতো।
জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের ইতিহাসের সাক্ষী সত্যপাল মালিকের মৃত্যু ভারতের রাজনীতিতে এক যুগের অবসান। রাজনীতি, প্রশাসন এবং বিতর্কের মিশেলে গড়া তাঁর দীর্ঘ যাত্রা তাঁকে চিহ্নিত করেছে এক স্পষ্টভাষী এবং নির্ভীক কণ্ঠস্বর হিসেবে।