Last Updated on [modified_date_only] by Aditi Singha
ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: কলকাতার বনেদি বাড়িগুলির দুর্গাপুজোর (Jorasanko) নাম উঠলেই প্রথম সারিতে চলে আসে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির কথা। আজ যাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবাসভূমি বলে জানি, সেই বাড়িতেই এক সময় ধুমধাম করে অনুষ্ঠিত হতো দুর্গাপুজো। বিশ্বাস হচ্ছে না তো, চিন্তা নেই আমারও হচ্ছে না।

সূচনা হয় কিভাবে? (Jorasanko)
১৭৮৪ সালে নীলমণি ঠাকুরের উদ্যোগে ঠাকুরবাড়িতে শুরু হয় দুর্গাপুজো। পরে তাঁর বংশধর প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের আমলে এই পুজো পায় সর্বাধিক জাঁকজমক। সে সময় কলকাতার বাবু সমাজে বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজো মানেই ছিল প্রতিযোগিতা কে দেবীকে সবচেয়ে বেশি অলঙ্কারে সাজাচ্ছে, কার বাড়িতে সবচেয়ে বড় আয়োজন হচ্ছে, কার ভোগ সবচেয়ে সুস্বাদুএসব নিয়েই চলত রেষারেষি।
প্রতিমা সাজসজ্জা! (Jorasanko)
প্রতিমা গড়া হতো বাড়ির ঠাকুর দালানেই। কথিত আছে, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের স্ত্রী দিগম্বরী দেবীর মুখের আদলেই গড়া হতো প্রতিমার মুখ। দেবীকে অলঙ্কৃত করতে দ্বারকানাথ বিদেশ থেকে, বিশেষত প্যারিস থেকে, গয়না আনাতেন। এমনকি বিসর্জনের সময়ও সেই অমূল্য অলঙ্কার প্রতিমার গায়ে শোভা পেত। ফলে দেবীর বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে ভেসে যেত বহু সম্পদ, আর সেই অলঙ্কার নিয়ে তৈরি হতো চাঞ্চল্য।
বলিতে কি দেওয়া হত! (Jorasanko)
ঠাকুরবাড়ির পুজোয় ছিল না পশুবলি। বৈষ্ণব প্রভাবের কারণে এখানে কুমড়ো বলি দেওয়া হতো। সন্ধিপুজো, ভোগ, ভক্তদের সমাগম, আর তিন দিনব্যাপী নৃত্য-গান ছিল এই পুজোর বিশেষ আকর্ষণ। সাহেব-সুবোরাও নিমন্ত্রিত হতেন।
কেমন ছিল রীতি ও প্রথা!
পুজোর সঙ্গে যুক্ত ছিল কিছু অভিনব প্রথা। পুজোর আগে আকাশে ওড়ানো হতো শঙ্খচিল, যাতে দেবীর আগমনের দিশা নির্ধারণ হয়। আবার বিজয়া দশমীর দিন উড়ানো হতো নীলকণ্ঠ পাখি। দশমীর দিনেই একমাত্র বাড়ির মেয়েরা ছাদে উঠে বিসর্জনের দৃশ্য দেখার অনুমতি পেতেন। ফলে এই আয়োজন ঘিরে ঠাকুরবাড়ির মহিলাদের উচ্ছ্বাস ছিল অপরিসীম।
মূর্তিপূজার বিরোধিতা! (Jorasanko)
দ্বারকানাথের পুত্র দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্ম সমাজে যুক্ত হন এবং ক্রমে মূর্তিপূজার বিরোধিতা করতে থাকেন। ফলে বাড়িতে পুজো চললেও তিনি থাকতেন দূরে, অনেক সময় চলে যেতেন হিমালয়ে। ধীরে ধীরে দেবেন্দ্রনাথের প্রভাবে ঠাকুরবাড়িতে মূর্তিপূজা কমতে থাকে। ১৮৫৮ সালে নগেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু হলে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্গাপুজো বন্ধ হয়। এরপর থেকে ঠাকুরবাড়ি হয়ে ওঠে একেবারেই ব্রাহ্ম সমাজের কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: Mahalaya 2025: মহালয়ার দিন বছরের শেষ সূর্যগ্রহণ! শুভ নাকি অশুভ সংযোগ
থিমের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া (Jorasanko)
আজকের থিম-সর্বস্ব দুর্গাপুজোর ভিড়েও ইতিহাস কাছে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির দুর্গাপুজো এক অনন্য অধ্যায়। সময়ের সঙ্গে তা ইতিহাস থেকে কিংবদন্তি, আর কিংবদন্তি থেকে গল্পে রূপ নিয়েছে।