ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ভারত বিগত কয়েক দশকে প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে (Kali Weapon)। এই অগ্রগতির অন্যতম রহস্যময় ও চর্চিত প্রকল্প হলো কালী (KALI) অস্ত্র। ‘KALI’ শব্দটি একটি সংক্ষিপ্ত রূপ, যার পূর্ণরূপ হল Kilo Ampere Linear Injector। এটি কোনো প্রচলিত বিস্ফোরক বা ক্ষেপণাস্ত্র-ভিত্তিক অস্ত্র নয়, বরং এটি একটি দিকনির্দেশিত শক্তি অস্ত্র (Directed Energy Weapon), যা মূলত শক্তিশালী ইলেকট্রন বিম এবং মাইক্রোওয়েভ নির্গমনের মাধ্যমে শত্রুর ইলেকট্রনিক সিস্টেম ধ্বংস করতে সক্ষম।
কালী অস্ত্রের তৈরি কীভাবে? (Kali Weapon)
কালী প্রকল্পটি (Kali Weapon) প্রথম শুরু হয় ১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি, ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) এবং ভৌতিক গবেষণা সংস্থা (Bhabha Atomic Research Centre – BARC)-এর যৌথ উদ্যোগে। মূল লক্ষ্য ছিল উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইলেকট্রন বিম তৈরি করা, যা বিভিন্ন পরীক্ষামূলক কাজে এবং পরবর্তীতে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য হবে। এই অস্ত্রের উন্নয়ন হয়েছে পর্যায়ক্রমে — কালী-৫০০, কালী-১০০০, কালী-৫০০০, এবং কালী-১০০০০ ইত্যাদি বিভিন্ন সংস্করণে। সংখ্যাগুলি নির্দেশ করে এর ইলেকট্রন বিমের শক্তি কিলো অ্যাম্পিয়ারে (kA)। প্রতিটি পরবর্তী সংস্করণ পূর্বের তুলনায় বেশি শক্তিশালী ও পরিশীলিত।
কীভাবে কাজ করে এই অস্ত্র? (Kali Weapon)
KALI কোনও সাধারণ ক্ষেপণাস্ত্র বা গুলি চালনা করে না (Kali Weapon)। এটি মূলত একটি ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক পালস (EMP) অস্ত্র, যা শক্তিশালী ইলেকট্রন বা মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ নির্গত করে শত্রুর ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি অকার্যকর করে দিতে পারে। যুদ্ধবিমান, ড্রোন, স্যাটেলাইট ইত্যাদির ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল সিস্টেম ধ্বংস করতে পারে।শত্রু ক্ষেপণাস্ত্রের গাইডেন্স সিস্টেম বিঘ্নিত করে সেটিকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারে। এটি সম্পূর্ণ নিরবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে — কোনো প্রচলিত বিস্ফোরণের শব্দ বা আলো ছাড়াই। এই অস্ত্রের ব্যবহার মূলত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ব্যবহারের জন্য কল্পনা করা হয়েছে, যেমন অ্যান্টি-স্যাটেলাইট ও অ্যান্টি-মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমে।
ভারতের কালী অস্ত্রের কৌশলগত গুরুত্ব (Kali Weapon)
ভারতের মতো একটি দেশ, যেটি দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের (চীন ও পাকিস্তান) মাঝে অবস্থান করছে, তাদের জন্য এই ধরনের উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্যাটেলাইট প্রতিরক্ষায় এর গুরুত্ব অসামান্য।শত্রু স্যাটেলাইট থেকে নজরদারি বা আক্রমণের সম্ভাবনা থাকলে, কালী তার কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে। এছাড়া মিসাইল প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। শত্রু মিসাইল ভারতের আকাশসীমায় প্রবেশ করলে, কালী তার ইলেকট্রনিক সিস্টেমে বিঘ্ন ঘটিয়ে তাকে ধ্বংস করতে পারে।সাইবার এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধেও এই অস্ত্র ব্যবহার করা যায়। আধুনিক যুদ্ধে ইলেকট্রনিক সিস্টেম একটি মূল ভূমিকা পালন করে। এই প্রযুক্তি সেই যুদ্ধে ভারতের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে পারে।
গোপনীয়তা ও রহস্য (Kali Weapon)
KALI অস্ত্র নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহল ও রহস্যের শেষ নেই। কারণ এই প্রকল্পটি বরাবরই অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে পরিচালিত হয়েছে। সরকারি ভাবে DRDO বা BARC কখনোই এই অস্ত্রকে একটি পূর্ণাঙ্গ অস্ত্ররূপে স্বীকার করেনি, বরং এটি গবেষণার একটি অংশ বলেই বর্ণনা করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও সংবাদমাধ্যমের মতে, এটি একটি কার্যকরী অস্ত্র ব্যবস্থা হিসাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত। ইন্টারনেটে প্রায়ই ভুয়ো ছবি বা ভিডিও দেখা যায়, যেখানে কালী অস্ত্রের বিকিরণে বিমান বা স্যাটেলাইট ধ্বংস হতে দেখা যায়। যদিও এইসব ভিডিওর সত্যতা প্রশ্নবিদ্ধ, তবুও এগুলো এই প্রযুক্তিকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ও কল্পনার জাল বুনে দেয়।
সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ (Kali Weapon)
যদিও কালী অস্ত্র একটি অভিনব ও আধুনিক প্রযুক্তি, তবুও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটি স্থিতিশীল এবং বড় আকারের একটি সিস্টেম, তাই একে সহজে মোতায়েন করা কঠিন।এটি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে কাজ করতে সক্ষম, দীর্ঘ দূরত্বে কার্যক্ষমতা সীমিত। আবহাওয়া, পরিবেশ ইত্যাদির উপরও এর কার্যকারিতা নির্ভর করে। তবে ভবিষ্যতে এর ক্ষুদ্রায়ন, মোবিলিটি, এবং নির্ভুলতা বাড়ানোর জন্য গবেষণা চলছে।
কালী অস্ত্র হয়তো আগামী দিনের ভারতীয় যুদ্ধনীতিতে একটি বিপ্লব আনবে। ভারতের কালী অস্ত্র একটি বৈজ্ঞানিক ও কৌশলগত সাফল্যের প্রতীক। এটি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রচলিত আগ্নেয়াস্ত্র বা পারমাণবিক অস্ত্রের থেকে ভিন্ন, কারণ এটি ধ্বংস না করে অক্ষম করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে — যা আধুনিক যুগে আরও কার্যকর ও নিরাপদ প্রতিরক্ষা কৌশল হিসেবে বিবেচিত। যদিও এর অনেক দিক আজও গোপন, তবুও নিঃসন্দেহে বলা যায়, কালী অস্ত্র ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার একটি গর্বিত অধ্যায়।