ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: তারা আমাদের গালিগালাজ করেছে এবং বাংলাদেশি বলে অভিযোগ করেছে (Kargil war veteran asked to prove nationality), বলেন ইরশাদ শেখ। পুনের ঘটনা ঘিরে উত্তাল দেশ; পুলিশ অস্বীকার করলেও পরিবার জানাল হয়রানির অভিযোগ।
পরিবারের দাবি, ৮০ জন এসে দরজা ভাঙার চেষ্টা, ভুয়ো বলেও অপমান (Kargil war veteran asked to prove nationality)
পুনের চাঁদনগর এলাকায় এক কার্গিল যুদ্ধবীরের পরিবারের অভিযোগ, শনিবার ২৬ জুলাই, ২০২৫ মধ্যরাতে প্রায় ৮০ জন হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সদস্য হঠাৎ করে তাঁদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। দাবি করা হয়, তাঁরা বাংলাদেশি, তাই নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে (Kargil war veteran asked to prove nationality)। তারা পরিবারের সদস্যদের আধার কার্ড দেখতে চায়। তবে আধার দেখানোর পরও বলা হয়, এই সব নথি ভুয়ো। ৪৮ বছরের ইর্শাদ শেখ জানান, তাঁর দাদার নাম হাকিমুদ্দিন শেখ। তিনি বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড়ে থাকেন। কার্গিল যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন এবং ২০০০ সালে ইঞ্জিনিয়ার্স রেজিমেন্ট থেকে হাবিলদার পদে অবসর নেন।
“জয় শ্রী রাম” ধ্বনি, পুলিশ ছিল অথচ চুপচাপ (Kargil war veteran asked to prove nationality)
ইর্শাদ শেখ জানান, তাঁদের পরিবারের আরও দু’জন সদস্য সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন (Kargil war veteran asked to prove nationality)। তাঁদের পরিবার গত ৬০ বছর ধরে পুনের চাঁদনগরে বসবাস করছে। তিনি বলেন, মধ্যরাতে ওই গোষ্ঠী দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে। দরজা খোলার পর কয়েকজন জোর করে ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং নারীদের, শিশুদের কাগজপত্র দেখাতে বাধ্য করে। তাঁর অভিযোগ, হিন্দুত্ববাদী ওই গোষ্ঠী “জয় শ্রী রাম” স্লোগান দিতে দিতে তাঁদের থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেই সময় তাঁদের সঙ্গে দুই ব্যক্তি ছিল যারা নিজেদের পুলিশ হিসেবে পরিচয় দেয়। ওই দুই পোশাকবিহীন পুলিশ সদস্য পুরো সময় নীরব ছিলেন, কিছুই করেননি।
থানায় নিয়ে গিয়ে হুমকি, অভিযোগ নিতে অস্বীকার
ইর্শাদ জানান, তাঁরা যখন চাঁদনগর থানায় যান, এক মহিলা পুলিশ অফিসার তাঁদের নথি নিয়ে বাইরে বসিয়ে রাখেন। দুই ঘণ্টা পর বলা হয়, আবার পরদিন আসতে হবে। না এলেই তাঁদের বাংলাদেশি বলে ঘোষণা করা হবে। পরের দিন পুলিশ স্টেশনে গেলে, অভিযোগ না জানাতে এবং বিষয়টি নিয়ে “বেশি না বলার” জন্য চাপ দেওয়া হয়। ইর্শাদের দাবি, “আমাদের সব নথি সত্যি। যদি ভুল থাকত, তাহলে পুলিশ ব্যবস্থা নিত। এখন তারা চাপ দিচ্ছে যাতে আমরা চুপ থাকি।” তিনি আরও জানান, তাঁদের পূর্বপুরুষদের নাগরিকত্বের প্রমাণ ৪০০ বছর আগের থেকেও দেওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন: Tmc Meghalaya : মেঘালয়ে একমাত্র বিরোধী দল তৃণমূল! বিধায়কের দলবদলে বিরোধী দলের তকমা হারাবে?
পরিবারে একাধিক সেনা অফিসার, ১৯৭১ এবং ১৯৬৫ যুদ্ধেও অংশ
ইর্শাদ বলেন, তাঁর এক কাকা ১৯৭১ সালের যুদ্ধে বোমায় আহত হন এবং সাহসিকতার জন্য পুরস্কৃত হন। অপর কাকা ১৯৬৫-র ভারত-পাক যুদ্ধে আব্দুল হামিদের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। তিনি সমাজকর্মী রাহুল ডাম্বালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যিনি একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসারের সঙ্গে দেখা করানোর ব্যবস্থা করেন। পুলিশ আধিকারিক পদক্ষেপের আশ্বাস দিলেও তিন-চার দিন কেটে গেলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
হাকিমুদ্দিন শেখ: “পরিবারের সঙ্গে যা হয়েছে তা ভুল”
পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাকিমুদ্দিন শেখ বলেন, “আমরা ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পুনেতে বসবাস করছি। আমার কাকা মোহাম্মদ সেলিম এখান থেকে সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত হন। পরিবারের সঙ্গে যা হয়েছে তা ভুল। দরকার হলে আমি পুলিশকে বলব।”
পুলিশের বক্তব্য: কোনও গোষ্ঠী হামলা করেনি
যদিও পুলিশ পুরো ঘটনাকে অস্বীকার করেছে। জোন ৪-এর ডেপুটি কমিশনার সোময় মুণ্ডে জানান, “এই ধরনের কোনও গোষ্ঠী ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ শুধুমাত্র নথি যাচাইয়ের জন্য গিয়েছিল। অবৈধ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে এবং সেই সূত্রেই তথ্য পেয়ে পুলিশ রাতে গিয়েছিল।” তিনি বলেন, মহিলা সদস্যদের থানায় আনা হয়নি। পুরুষদের পরের দিন আসতে বলা হয়েছিল। নথি যাচাই করে আপাতভাবে কিছু অবৈধতা পাওয়া যায়নি। সেই সময়ের ভিডিও ফুটেজ পুলিশের কাছে রয়েছে বলেও তিনি জানান।
সংখ্যালঘু মঞ্চের দাবি: আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে, FIR চাই
‘ন্যাশনাল কনফারেন্স ফর মাইনরিটি’র সভাপতি রাহুল ডাম্বালে বলেন, “হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সদস্যরা যুদ্ধবীরের পরিবারকে আতঙ্কিত করার চেষ্টা করেছে। আমরা এ বিষয়ে FIR-এর দাবি জানিয়েছি এবং পুণে পুলিশ কমিশনার অমিতেশ কুমারের সঙ্গে দেখা করব।”