ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ (Kashmir Terror Attack) জঙ্গি হামলায় নিহত হলেন ২৬ জন নিরীহ পর্যটক। সেই তালিকায় রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের দুই বাসিন্দা, আইবি অফিসার মণীশরঞ্জন মিশ্র এবং আমেরিকা-প্রবাসী তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী বিতান অধিকারী। তাঁদের মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরুলিয়ার ঝালদা এবং দক্ষিণ কলকাতার বেহালায়।
কফিনবন্দি দেহ (Kashmir Terror Attack)
গত দু’বছর হায়দরাবাদে কর্মরত ছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অফিসার (Kashmir Terror Attack) মণীশ মিশ্র। পরিবার নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন কাশ্মীরে। সেখানেই জঙ্গিদের হামলায় প্রাণ হারান তিনি। তাঁর কফিনবন্দি দেহ আজ সকালে পৌঁছেছে রাঁচি বিমানবন্দরে, সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাঁর ঝালদার বাড়িতে। শহরে শোকপ্রকাশে ঝালদা নাগরিক মঞ্চ আহ্বান জানিয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত বাজার বন্ধের। জাতীয় পতাকা হাতে মিছিলেও সামিল হয়েছেন বহু মানুষ। প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে গোটা শহর।
কাশ্মীর ভ্রমণের সময় জঙ্গিদের টার্গেট (Kashmir Terror Attack)
অন্যদিকে, বেহালার বিতান অধিকারী ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও সাড়ে তিন বছরের সন্তানকে (Kashmir Terror Attack) নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। কাশ্মীর ভ্রমণের সময় জঙ্গিদের টার্গেট হয়ে প্রাণ হারান তিনি। বিতান ফ্লোরিডায় একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন, কিন্তু শিকড় ভুলে যাননি। বাবা-মায়ের দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। সেই ছেলের মরদেহ ফিরবে, ভাবতেই পারছেন না বীরেশ্বর ও মায়া অধিকারী। তাঁদের আর্তি—“সব ছেড়ে এখানে এলাম, সেই সন্ত্রাস আবার ফিরল ঘরের দরজায়।”
মঙ্গলসূত্র দেখলেই গুলি
পরিবারের দাবি, হামলাটি ছিল ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে পরিকল্পিত। বিতানের স্ত্রী সোহিনী জানিয়েছেন, জঙ্গিরা ধর্মীয় চিহ্ন দেখে মানুষ বেছে বেছে হত্যা করছিল। সিঁথিতে সিঁদুর, গলায় মঙ্গলসূত্র দেখলেই গুলি চালানো হচ্ছিল। বিতানের পরিবার শুধু বিচার নয়, প্রশ্ন তুলেছে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপরও।
প্রাণ হারিয়েছেন বেহালার সখেরবাজারের বাসিন্দা
এছাড়াও, একই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন বেহালার সখেরবাজারের বাসিন্দা সমীর গুহ। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী সমীর তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। জঙ্গিদের এলোপাথাড়ি গুলিতে তাঁর মৃত্যু ঘটে মেয়ের চোখের সামনেই। স্ত্রী শবরী গুহ জানান, মুখে মাস্ক পরে হামলাকারীরা কোনও কথা না বলেই গুলি চালাতে শুরু করে। সমীর তাঁকে ও মেয়েকে শুয়ে পড়তে বলেন, কিন্তু নিজে আর বাঁচতে পারেননি।
এই বর্বরতার মধ্যেও নিহতদের পরিবার চাইছে না প্রতিশোধ, বরং শান্তির দাবি করছে। ভূস্বর্গে যেন আর কারও প্রাণ যায় না, কেউ যেন আবার সন্ত্রাসের শিকার না হয়—এই আর্জি তাদের। কাশ্মীরের রক্তাক্ত প্রেক্ষাপটে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে নিরাপত্তা, মানবতা আর সহানুভূতির ভবিষ্যৎ নিয়ে।