ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিরাটকে মঞ্চে (KKRvsRCB) ডেকে ‘ঝুমে যো পাঠান’ গানে নাচ করেছিলেন শাহরুখ খান। তখনও কী কিং খান বুঝতে পেরেছিলেন সেই ‘পাঠান’ কোহলিই ‘ঝুমে’ উঠে অভিযান ম্যাচেই তাঁর দলের সাড়ে সর্বনাশ করে লজ্জার হার উপহার দেবেন।
কেকেআর-এর হার (KKRvsRCB)
সেই সঙ্গে বলিউড বাদশা ও তাঁর দলের ভক্তকূলের যন্ত্রণা আরও (KKRvsRCB) বাড়িয়ে দিলেন কেকেআরের প্রাক্তনী ফিল সল্ট। গতবছর আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন কেকেআরের সদস্য ছিলেন আরসিবির ডানহাতি এই ওপেনার।দু’জনের পৌনৈ এক ঘণ্টার ব্যাটিং তান্ডবেই ঘরের মাঠে লজ্জার হার দিয়ে অভিযান শুরু করল গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। একতরফা ম্যাচে কেকেআর কে ৭ উইকেটে হারিয়ে দিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। দু’বছর পর আবার আইপিএলে কেকেআর-কে হারালো আরসিবি। তাও আবার ২২ বল বাকি থাকতেই। এই জয়ের ফলে রান রেটও অনেকটাই বাড়িয়ে নিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।
মায়াবী রূপ ইডেনের (KKRvsRCB)
শনিবাসরীয় সন্ধ্যায় মায়াবী রূপ নিয়েছিল (KKRvsRCB) ইডেন। আতসবাজির ঝলকানি, শ্রেয়া ঘোষাল করণ আউজলার অনবদ্য সঙ্গীত পরিবেশন, লাস্যময়ী দিশা পাটানির ‘ঠুমকায়’ উত্তাল হয়ে ওঠে ইডেনের গ্যালারি। এরসঙ্গে শাহরুখ খানের অনবদ্য সঞ্চালনা। বিরাটকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে ‘ঝুমে যো পাঠান’ গানে তাঁর সঙ্গে নাচলেন শাহরুখ।
দারুন শো (KKRvsRCB)
আবার নিজের দলের রিঙ্কুর সঙ্গেও (KKRvsRCB) নাচলেন। যা দর্শকদের বাড়তি পাওনা, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এরসঙ্গে ছিল কেক কাটা, বেলুন ওড়ানো ও ড্রোন শো। ধুনুচি, ভাংড়া, দক্ষিণী নাচের সঙ্গে রথে চড়ে অনুষ্ঠান মঞ্চে আইপিএল ট্রফি নিয়ে এলেন দুই অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে ও রজত পতিদার। মঞ্চে তখন উপস্থিত বিসিসিআই সভাপতি রজার বিনি, অন্যান্য বোর্ড কর্তাদের পাশাপাশি শাহরুখ, শ্রেয়া, দিশা ও করণরা।

ইডেনের গ্যালারি বিরাটময় (KKRvsRCB)
আলো আঁধারীর ইডেনে উপস্থিত হাজার ৬৭ দর্শক আধঘণ্টার সামান্য (KKRvsRCB) বেশি সময়ের জন্য স্বপ্নের রাজ্যে ঘুরে এলেন। অথচ ইডেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বরুণদেব বাধ সাধতে পারে বলে গত দু’দিন ধরে প্রচুর শব্দ খরচ হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে আকাশের মুখ ভার হলেও বেলা যত গড়িয়েছে মেঘের কোল থেকে রোদের ঝলক বেরিয়েছে। আর তা দেখেই গুমরে থাকা মানুষ ইডেনের পথে পা বাড়িয়েছেন। এদিন ইডেনের গ্যালারি ছিল বিরাটময়। ইডেনের অধিকাংশ গ্যালারিই ছিল বিরাট ভক্তদের দখলে। পয়সা উসুল করে হাসিমুখেই মাঠ ছাড়লেন তাঁরা।

নাইট জার্সিতে অভিষেক
দলে বিরাট কোহলির মতো ‘চেজ মাস্টার’ থাকায় টসে জিতে বোলিং নিতে ভুল করেননি আরসিবি অধিনায়ক রজত পতিদার। সল্টের জায়গা কুইন্টন ডি’কক পূরণ করতে পারবেন কিনা তা সময় বলবে। কিন্তু নাইট জার্সিতে অভিষেকেই চূড়ান্ত ব্যর্থ এই প্রোটিয়া উইকেট কিপার ব্যাটার। ম্যাচের প্রথম ওভারে হ্যাজেলউডের দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি হাকিয়ে শুরুটা করেছিলেন ডি’কক। তৃতীয় বলেই তাঁর সহজতম ক্যাচ ফেলেন কেকেআরের আরেক প্রাক্তনী সূযশ শর্মা। তবে পঞ্চম বলেই তাঁকে ফিরিয়ে দেন হ্যাজেলউড। আরসিবি কিপার জীতেশ শর্মার হাতে ধরা পড়েন ডি’কক (৪)। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে অপর ওপেনার সুনীল নারিনকে সঙ্গে নিয়ে বাইশ গজে ঝড় তোলেন নাইট অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে। ৩ ওভারে ৯ রান থেকে ৬ ওভার শেষে দলের রান ৬০-এ পৌঁছে দেয় এই জুটি।

আরও পড়ুন: Ghaziabad Incident: ঘরে গিয়ে খুলে দিল শ্বশুরের পোশাক, পুলিশ আসতেই সব ফাঁস!
৯.৩ ওভারে ১০০ রান ওঠে। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৫ বলে ১০৩ রানের পার্টনারশিপ গড়েন নারিন ও রাহানে। দু’জনে যেভাবে ব্যাট করছিলেন তাতে একটা সময় মনে হচ্ছিল রান আড়াইশো কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। কিন্তু দশম ওভারের শেষ বলে নারিনকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙ্গেন রসিক ডার সালম। ৫টি চার ও তিনটি ওভারবাউন্ডারির সাহায্যে ২৬ বলে ৪৪ রান করে সূযশ শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নারিন। তারপরের ওভারেই মারমুখী রাহানেকে ফিরিয়ে নাইটদের রানের গতি থামিয়ে দেন ক্রণাল পাণ্ডিয়া। রসিকের হাতে ক্যাশ দিয়ে ফেরার আগে ২৫ বলে নিজের অর্ধশতরান পূর্ণ করেন রাহানে।
শেষে এক ডজন বাউন্ডারি ও চার ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৩১ বলে ৫৬ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে প্যাভিলিয়নের ফেরেন নাইট অধিনায়ক। এরপর একমাত্র অঙ্গক্রিস রঘুবংশী ছাড়া আর কোনও নাইট ব্যাটসম্যানই উইকেটে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারলেন না। সহঅধিনায়ক ভেঙ্কটেশ আইয়ার (৬), রিঙ্কু সিংকে (১২) বোল্ড করেন ক্রুণাল। ৪ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা তিনিই। আন্দ্রে রাসেলকেও বেশিক্ষণ দাঁড়াতে দেননি সূযশ। ৩ বলে ৪ রান করে বোল্ড হন তিনিও। রঘুবংশীর ২২ বলে ৩০ রানের সৌজন্যে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৭৪ রান তোলে কেকেআর। রঘুবংশীকে ফেরান যশ দয়াল। এবং ৫ রান করে হ্যাজেলউডের শিকার হর্ষিত রানা। রমনদীপ সিং ৬ এবং স্পেন্সার জনসন এক রান করে অপরাজিত থেকে যান।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ইডেনের বাইশ গজে ঝড় তোলেন আরসিবির দুই ওপেনার বিরাট কোহলি ও ফিল সল্ট। আর তাতেই মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে ১৬.২ ওভারে ২২ বল বাকি থাকতেই খেলা শেষ করে দেয় আরসিবি। ৩.৪ ওভারেই ৫০ রানের গন্ডি পেরিয়ে যায় আরসিবি। ২৫ বলে নিজের অর্ধশতরান পূর্ণ করেন সল্ট। বিরাট ও সল্টকে আটকাতে তখন দিশেহারা অবস্থা নাইট বোলারদের। শেষে নবম ওভারের তৃতীয় বলে সল্টকে ফেরান বরুণ চক্রবর্তী। ৩১ বলে ৯ বাউন্ডারি ও জোড়া ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৫৬ রান করে জনসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন প্রাক্তন নাইট ওপেনার। সল্ট যখন সাজঘরে ফেরেন তখন আরসিবির রান ৯৫। ম্যাচ ততক্ষণে কেকেআরের হাতের বাইরে চলে গিয়েছে।
এরপর দেবদত্ত পারিক্কালকে (১০) দ্রুত ফিরিয়ে দেন নারিন। কিন্তু বিরাট ও অধিনায়ক রজত পাতিদারের দ্বিতীয় উইকেটে ১৯ বলে ৪৪ রানের পার্টনারশিপ কেকেআরের হার নিশ্চিত করে দেয়। ১৬ বলে ৫ বাউন্ডারি ও এক ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৩৪ রান করে আরসিবি অধিনায়ক বৈভব অরোরার বলে রিংকু সিং এর হাতে কাজ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তখন তাঁর দল জয় থেকে মাত্র ১৩ রান দূরে। এদিন ইডেনের গ্যালারিতে তাঁর হয়ে গলা ফাটানো ভক্তদের হতাশ করেনি বিরাটও।
ভক্তদের হাফসেঞ্চুরি উপহার দিলেন। ৩৬ বলে ৪ বাউন্ডারি ও তিন ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৫৯ রান করে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন বিরাট। শেষে ৫ বলে জোড়া বাউন্ডারি ও এক ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ১৫ রান করে অপরাজিত থেকে যান লিয়াম লিভিংস্টোন। এদিন আরও একটি নজির গড়লেন বিরাট। আইপিএলে কেকেআরের বিরুদ্ধে ১০০০ রান পূর্ণ করলেন তিনি। নারিনের ৯ ওভারের পঞ্চম বলে নিজের ৩৮তম রান নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই মাইলস্টোন স্পর্শ করলেন বিরাট। হারের ধাক্কা মাথায় নিয়েই পরবর্তী ম্যাচ খেলতে রবিবার গুয়াহাটি উড়ে যাবে কেকেআর। আগামী ২৬ তারিখ সেখানে নাইটদের প্রতিপক্ষ রাজস্থান রয়্যালস।