ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ফাত্তাহ-১ (Fattah-1) ইজরায়েলের আয়রন ডোম এবং অ্যারোর মতো সবচেয়ে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও অতিক্রম করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
ইরানের নতুন হামলার দাবি (Fattah-1)
বুধবার রাতে ইজরায়েলের উপর ফের হাইপারসনিক মিসাইল হামলার দাবি করল ইরান (Fattah-1)। ইসলামিক রিপাবলিকের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি এদিন সরাসরি আহ্বান জানিয়েছেন ইজরায়েলিদের প্রতি “কোনো রকম দয়া না দেখাতে।” ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড কর্পস (IRGC) জানিয়েছে, এই হামলা ছিল ‘অপারেশন অনেস্ট প্রমিস ৩’-এর ১১তম ধাক্কা। তারা দাবি করেছে, এই হামলায় ‘ফাত্তাহ-১’ নামের হাইপারসনিক মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে এবং ইরানি বাহিনী এখন “অধিকৃত অঞ্চলের আকাশ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছে।”
এর আগেও হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল এই মিসাইল (Fattah-1)
এই প্রথম নয়, এর আগেও ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর, ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস ২’-এর সময় জেরুজালেমের উপর একাধিক ফাত্তাহ-১ (Fattah-1) মিসাইল নিক্ষেপ করেছিল ইরান। তবে চলমান সংঘাতে এবারই প্রথম এই মিসাইল ব্যবহার করা হল বলে মনে করা হচ্ছে।
হাইপারসনিক মিসাইল কী?
হাইপারসনিক মিসাইল বলতে মূলত হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল ও হাইপারসনিক ক্রুজ মিসাইলকে বোঝানো হয়। এগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যে শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি গতিতে চলতে পারে এবং মাঝপথে দিক পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখে। যার ফলে একে ট্র্যাক করা বা আটকানো অত্যন্ত কঠিন।
আরও পড়ুন: F-14: মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা! ইরানের এফ-১৪ যুদ্ধবিমান গুঁড়িয়ে দিল ইজরায়েল
হাইপারসনিক মিসাইল ম্যাক ৫-এ চলে, অর্থাৎ ঘণ্টায় ৬১০০ কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে। যদিও বেশিরভাগ ব্যালিস্টিক মিসাইলও টার্গেটের দিকে পড়ার সময় এই গতিবেগে পৌঁছে যায়, বলে জানিয়েছে CNN।
ফাত্তাহ-১ মিসাইল কী
ফাত্তাহ-১ ইরানের তৈরি প্রথম হাইপারসনিক মিসাইল। এটি ২০২৩ সালে প্রথম সামনে আনা হয়। মিসাইলটির নামকরণ করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি নিজে। এই মিসাইল এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে ইজরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ বা ‘অ্যারো’-র মতো উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও ফাঁকি দিতে পারে। ইরানের গার্ড কর্পস একে “ইজরায়েল-স্ট্রাইকার” বলে উল্লেখ করেছে।
মিসাইলটি প্রায় ১২ মিটার লম্বা। এটি এক ধাপ বিশিষ্ট প্রপালশন সিস্টেমে চলে এবং ২০০ কেজি বিস্ফোরক বহন করতে পারে। এটি সর্বোচ্চ ১৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। ফাত্তাহ-১-এ হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল (HGV) ওয়ারহেড থাকে, যা শত্রুর প্রতিরক্ষা ফাঁকি দিতে পারে এবং প্রায় ১৭,৯০০ কিমি/ঘণ্টা গতিতে চলতে পারে।
আরও পড়ুন: Iran hit Mossad HQ: ইজরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দফতরে ইরানের হামলা, যুদ্ধ আরও তীব্র
CNN-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের গবেষক ফাবিয়ান হিন্জ জানান, এই মিসাইল একটি “ম্যানুভারেবল রিএন্ট্রি ভেহিকল”-এ ওয়ারহেড বসানো, যা মাটির দিকে পড়ার সময়ও দিক পরিবর্তন করে ডিফেন্স এড়াতে পারে।
ইজরায়েল-ইরান সংঘাত তীব্রতর
গত শুক্রবার থেকে ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে শুরু হওয়া লং-রেঞ্জ হামলার ক্ষেত্রে পক্ষই পিছু হটছে না। ইজরায়েল সেদিন ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনার উপর নজিরবিহীন বোমাবর্ষণ চালায়। উভয় দেশের আবাসিক এলাকায় প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে। বহু বিদেশি নাগরিককেও নিরাপত্তার কারণে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ইজরায়েল দাবি করেছে, তাদের হামলায় ইরানের শীর্ষ সেনা কমান্ডার আলি শাদমানি এবং তাঁর পূর্বসূরি গোলাম আলি রাশিদ নিহত হয়েছেন।