অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ, কোনপথে রাজনীতিতে হাসিনার উত্থান-পতন!

চতুর্থবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পদে বসলেও বাংলাদেশের মধ্যে হাসিনা বিরোধী মনোভাব ক্রমশ চরমে ওঠে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে তা প্রথম প্রকাশ্যে আসে। শেখ হাসিনার ‘রাজাকার’ মন্তব্যের পর আন্দোলনে ঝাঁজ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। জানুন বিস্তারিত...

অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ, কোনপথে রাজনীতিতে হাসিনার উত্থান-পতন!
পদত্যাগী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : কোটা সংস্কার আন্দোলন মিটতে না মিটতে হাসিনা হাটাও আন্দোলনে জ্বলছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েই দেশ ছেড়ে দিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছেন হাসিনা। দেশের শাসনভার এই মুহুর্তে সেনাবাহিনীর হাতে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকার গঠন না হলে আরও বড় আন্দোলনের ডাক দিয়েছে পড়শি দেশের আন্দোলনকারীরা। বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক অরাজকতা, ডামাডোলের পরিস্থিতি নতুন নয়। অতীতেও বহুবার গণ আন্দোলনের সাক্ষী থেকেছে পদ্মাপাড়। 

প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ এখনও অশান্ত। সরকার উৎখাতের বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশ। বাড়ছে মৃত্যুমিছিল। এই পরিস্থিতিতেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটালেন তিনি। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে গত পঞ্চাশ বছরে যাঁরা সরকার প্রধান ছিলেন তাদের মধ্যে কেউ রাষ্ট্রপতি, কেউ প্রধানমন্ত্রী, কেউ প্রধান উপদেষ্টা আবার কেউ সামরিক শাসন জারি করে প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। 

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/Howrah-Burglary-in-five-flats-in-Howrah-housing

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তাঁকে পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর পর লন্ডন ও দিল্লি ঘুরে তিনি ঢাকায় পৌঁছন। ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশে গঠিত হয় প্রথম মন্ত্রিসভা। এরপর পদ্মা-মেঘনা থেকে থেকে গড়িয়েছে অনেক জল। শেখ মুজিবর রহমান, জিয়াউর রহমান, হুসেন মহম্মদ এরশাদ ও খালেদা জিয়ার শাসনে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে বাংলাদেশবাসী। তবে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সাধারণ নির্বাচনে পরাজিত হয় খালেদা জিয়ার দল বিএনপি। সেই বছরই বিপুল ভোটে জয়লাভ করে প্রায় ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লিগ। 

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/Bangladesh-PM-Sheikh-Hasina-resigns-and-Army-May-Take-over-Bangladesh

প্রধানমন্ত্রী হন মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ হাসিনা। সে বারই প্রথমবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন হাসিনা। খালেদা জিয়ার মেয়াদকাল যখন শেষ হচ্ছে তখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ফের সহিংস হয়ে ওঠে। তখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের প্রাক্তন কর্তা ফখরুদ্দিন আহমেদ সেনাবাহিনীর সমর্থনে সরকার পরিচালনা করেন। যদিও ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে ফের সাধারণ নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে জেতার পর ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে ফের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তখন থেকেই বাংলাদেশের শাসনভার ছিল হাসিনার দখলে। ২০০৯ সাল থেকে টানা চার বার প্রধানমন্ত্রীর পদে শপথ নেন হাসিনা। 

এই সময়কালে বাংলাদেশে যেমন একাধিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ করা হয়েছে, তেমনই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের অভিযোগও উঠেছে বিভিন্ন মহলে। বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ে বহুবার সমলোচিতও হয়েছে হাসিনা সরকার। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বয়কট করেন বিএনপি-র নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। একতরফা সেই নির্বাচনে জেতে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে ফের আসীন হন হাসিনা। এই নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। যদিও তাতে আমল না নিয়েই ক্ষমতার রাশ আরও কড়া হাতে ধরেন হাসিনা। 

২০১৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলি সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু সেই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলেন বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। এই নির্বাচনেও জয়ী হন হাসিনা। এই সময়কালে বাংলাদেশে বিভিন্ন ইস্যুতে একাধিক আন্দোলন হয়েছে। যদিও তাতে হাসিনার গদি টলমল হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। যদিও আন্দোলনকে দমন করতে হাসিনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রশক্তির ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে বার বার। এই পরিস্থিতিতেই ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ফের সাধারণ নির্বাচন হয় বাংলাদেশে। বিরোধীদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি মানেননি হাসিনা। এক তরফা নির্বাচনে জিতে ফের ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করেন তিনি। 

আরও পড়ুন: https://tribetv.in/BJP-MLA-Niladri-Shekhar-Dana-is-relieved-by-the-High-Court-orders-for-the-employment-of-MLA-relatives-in-Kalyani-AIIMS

চতুর্থবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পদে বসলেও বাংলাদেশের মধ্যে হাসিনা বিরোধী মনোভাব ক্রমশ চরমে ওঠে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে তা প্রথম প্রকাশ্যে আসে। শেখ হাসিনার ‘রাজাকার’ মন্তব্যের পর আন্দোলনে ঝাঁজ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ৫ অগাস্ট সোমবার তীব্র চাপের মুখে পড়ে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েই দেশ ছাড়েন মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা। হাসিনার দেশত্যাগের পর তাঁর সরকারি বাসস্থান গণভবন, সংসদ ভবন, তাঁর দল আওয়ামী লীগের ছোট-বড় দফতরের পাশাপাশি হামলার শিকার হয়েছে ঢাকায় ইন্দিরা গান্ধীর নামাঙ্কিত ভারত-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’। বুলডোজ়ার এনে ভাঙা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তিও। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লিগের অস্তিত্বকেও দাঁড় করালেন প্রশ্নের মুখে।