ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল : কথায় আছে—“মাছে-ভাতে বাঙালি।” আর সত্যিই তাই! মাছ যেন শুধু পাতে নয়, বাঙালির জীবনের সঙ্গী (Health Benefits of Fish)। দুপুর-রাতের খাবারে মাছ না হলে যেন অনেকের মনই ভরে না। নদী, পুকুর, হ্রদ কিংবা সমুদ্র—যেখান থেকেই আসুক, মাছ শরীরের জন্য উপকারী বলেই বহু বছর ধরে আমাদের খাদ্য তালিকায় অনন্য স্থান দখল করে আছে। তবে সব মাছের গুণ (Health Benefits of Fish) এক নয়। কোন মাছ কি জন্য ভালো, কে কোন মাছ খেলে উপকৃত হবেন—এসব নিয়ে অনেকেরই রয়েছে কৌতূহল। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন মাছের কি পুষ্টিগুণ।
সামুদ্রিক মাছের উপকারিতা (Health Benefits of Fish)
হৃদরোগ প্রতিরোধ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি : সামুদ্রিক মাছে রয়েছে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য রক্ষা করে ও দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। নিয়মিত খেলে ডিমেনশিয়া ও অ্যালঝাইমারের ঝুঁকি কমে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত হয় (Health Benefits of Fish)।
ভিটামিন এ ও ডি-এর উৎস : সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, ম্যাকরেল, টুনা-তে পাওয়া যায় ভিটামিন-এ ও ডি, যা ইমিউনিটি বাড়ায়, হাড় মজবুত করে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এটি উপকারী।
মিনারেল ও খনিজের আধার : ইলিশ, চিংড়ি, লইট্টা ইত্যাদি সামুদ্রিক মাছে রয়েছে জিঙ্ক ও আয়োডিন, যা গলগণ্ড প্রতিরোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
নার্ভ সিস্টেম ভালো রাখে : সামুদ্রিক মাছ নার্ভ সিস্টেম ভালো রাখে। এটি পেশিশক্তি বাড়ায়, হাত-পায়ের অসাড়তা কমায় ও মানসিক অবসাদ দূর করে।
সহজে হজমযোগ্য প্রোটিন : এই মাছে থাকা প্রোটিন সহজে হজম হয়, যা ক্ষয়রোধে সাহায্য করে। পাশাপাশি, ভিটামিন-বি’র উৎকৃষ্ট উৎস হিসেবেও সামুদ্রিক মাছ পরিচিত।
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সাপোর্ট : মাছের সিলেনিয়াম দেহে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে, যা কোষকে সুস্থ রাখে ও বয়সজনিত রোগ প্রতিরোধ করে।
ক্যানসার প্রতিরোধ : ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ নিয়মিত খেলে প্রস্টেট ক্যানসার বা অন্যান্য ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।
দেশি মিষ্টি জলের মাছের উপকারিতা (Health Benefits of Fish)
ভেটকি, রুই, কাতলা, চিতল, ইলিশ : এগুলো তৈলাক্ত মাছ। এদের মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩, ভিটামিন ডি, ফসফরাস, যা মস্তিষ্ক সচল রাখে ও দেহের সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখে (Health Benefits of Fish)।
টুনা মাছ : এতে রয়েছে মাল্টি ভিটামিন—ভিটামিন বি-৩, বি-৬, বি-১২, বি-১, বি-২ ও ডি। এটি মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যকারিতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পাঙ্গাস মাছ : এই মাছ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ও গর্ভস্থ ভ্রূণের বিকাশে সাহায্য করে।
ছোট মাছের অসাধারণ পুষ্টিগুণ
ছোট আমুদি মাছ : প্রচুর প্রোটিন ও ভিটামিন সি (Vitamin C) রয়েছে। যা ইমিউনিটি বাড়াতে ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।
ফলুই মাছ : যদিও কাঁটা বেশি, কিন্তু এতে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন এ। এটি রক্তাল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
মৌরলা মাছ : প্রোটিন ও আয়রন সমৃদ্ধ এই মাছ অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য বিশেষ উপকারী।
কাচকি মাছ : ছোট হলেও শক্তিশালী! এতে আছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন, যা চোখের স্বাস্থ্যে সহায়ক।
ট্যাংরা মাছ : ছোট দেশি ট্যাংরায় রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও আয়রন—যা হাড় শক্ত করে এবং রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
পুঁটি মাছ : ভরপুর ভিটামিন ও ফসফরাস থাকায় এটি হাড় মজবুত করতে ও রোগ প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর।
আরও পড়ুন : Chicken Bone Marrow: মুরগির হাড়ের মজ্জা খাওয়ার অভ্যেস রয়েছে ? জানেন কি রয়েছে এতে?
শুঁটকি মাছ: প্রোটিনের আরেক উৎস
বাংলার নানা অঞ্চলে শুঁটকি মাছ খাওয়ার চল রয়েছে। লইট্টা, ছুরি, গজার, কাঁচকি, ছোট চিংড়ি ইত্যাদি শুকিয়ে তৈরি করা হয় এই খাদ্য।শুঁটকিতে তাজা মাছের চেয়েও বেশি প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রন থাকে। রক্তাল্পতা ও প্রোটিনের ঘাটতি পূরণে এটি বিশেষ উপকারী।যারা দুধ বা মাংস খেতে পারেন না, তাদের জন্য এটি উপকারী বিকল্প প্রোটিন উৎস।বিশেষত ছোট চিংড়ির শুঁটকি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য দারুণ উপকারী।
মাছ শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং পুষ্টিগুণে ভরপুর এক প্রাকৃতিক খাবার। তবে সঠিক মাছ বেছে, সঠিক উপায়ে রান্না করে নিয়মিত খেলে তবেই তা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী হবে। তাই পাতে মাছ রাখুন, কিন্তু জেনে-বুঝে খান—তবেই মিলবে উপকার।