পরতে পরতে ইতিহাস, অতীতের হাতছানি দিচ্ছে ঐতিহাসিক পাবলিক লাইব্রেরী

নদীয়া তো বটেই পশ্চিমবঙ্গ এমনকি ভারতবর্ষের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সংগ্রহশালাটি প্রচারের আলোক বৃত্তের বাইরেই থেকে গেছে এ যাবৎ কাল

পরতে পরতে ইতিহাস,  অতীতের হাতছানি দিচ্ছে ঐতিহাসিক পাবলিক লাইব্রেরী

ট্রাইব টিভি ডিজিটাল:  রয়েছে পরতে পরতে ইতিহাস। নদীয়ার বিলম্বিত স্বাধীনতার উত্তোলিত প্রথম পতাকা, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নিজের হাতে লেখা তালপাতার পুথি। আর একটু খোঁজ করলেই পেয়ে যাবেন শান্তিপুরের জগৎ বিখ্যাত তাঁতের বিবর্তনের ইতিহাস। নদিয়া জেলার শান্তিপুরের পাবলিক লাইব্রেরির ঐতিহাসিক সংগ্রহশালা যেন হাতছানি দিচ্ছে অজানা ইতিহাসের। 

নদিয়ার দ্বিতীয় প্রাচীন শান্তিপুর পৌরসভার প্রথম খাজনার বিল, চেয়ারম্যানের চেয়ার, শান্তিপুরে নেতাজির আবির্ভাব, - অনেকেই হয়তো জানেন না প্রায় শতাধিক বছরের প্রাচীন দুষ্প্রাপ্য ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য নথির সর্ববৃহৎ জাদুঘরটি আছে  শহর  শান্তিপুরে। শুধু তাই নয়, আর একটু খোঁজ করলেই পেয়ে যাবেন শান্তিপুরের জগৎ বিখ্যাত তাঁতের বিবর্তনের ইতিহাস। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ প্রচলনে সক্ষম হলে তাঁকে সংবর্ধনা জানানোর সময় শান্তিপুরের তাঁতীরা যে তাঁতের কাপড়ের মানপত্র লিখেছিলেন, ইংরেজদের চোখ রাঙানো উপেক্ষা করেও শান্তিপুরের তাঁতিরা কাপড়ের পাড়ে লিখেছিলেন 'বন্দেমাতরম' সেই সমস্ত জিনিসপত্র এই সংগ্রহশালার শোভা বৃদ্ধি করছে। আছে প্রায় সাড়ে চারশো বছরের প্রাচীন লন্ঠন। শান্তিপুরের হারিয়ে যাওয়ার কাঁসা, মাদুলি শিল্পের স্মৃতি ফলক। ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যাওয়া এসব অমূল্য ঐতিহাসিক প্রামাণ্য নথির অমূল্য সম্ভার দেখতে পাবেন শান্তিপুর পাবলিক লাইব্রেরির সংগ্রহশালায়।

নদীয়া তো বটেই পশ্চিমবঙ্গ এমনকি ভারতবর্ষের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সংগ্রহশালাটি প্রচারের আলোক বৃত্তের বাইরেই থেকে গেছে এ যাবৎ কাল। সরকারি উদাসীনতা ও যথাযথ পর্যবেক্ষণের অভাবে শান্তিপুর প্রাইভেট লাইব্রেরীর সংলগ্ন সংগ্রহশালাটি নজরে আসেনি সেভাবে কারোর। তবে প্রয়াত শান্তিপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান অজয় দে, এই মহামূল্যবান প্রামাণ্য ইতিহাস সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে যান। বর্তমান বিধায়কও সংগ্রহশালা, অডিটোরিয়াম, এবং  লাইব্রেরির আরবিক উন্নয়নে নানাভাবে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন সরকারের সঙ্গে। ইতিহাসের পড়ুয়া কিংবা বিজ্ঞান গবেষকদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয় ইতিহাসের দুর্লভ নথি কোথায় পাওয়া?  এক বাক্যে উত্তর আসবে কলকাতার জাদুঘর মানে পার্কস্ট্রিটে অবস্থিত 'ভারতীয় জাদুঘরে '। পরাধীন ভারতবর্ষ থেকে প্রাক স্বাধীনতার মুহূর্তে বিভিন্ন আন্দোলনের পটভূমিকা ও তার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব নিয়ে অসংখ্য তথ্য-প্রমাণ রয়েছে এই সংগ্রহশালায়।

শ্রীচৈতন্যদেবের প্রথমবারের মতো শান্তিপুরে আগমন ও তার দীক্ষা দানের নানান কাহিনী। হস্ত চালিত তাঁতের কাপড়ে নিপুন কৌশলে সেই ইতিহাস ধরে রাখা আছে। এছাড়াও নানান স্বাধীনতা সংগ্রামের কাহিনী ও শান্তিপুরের ভূমিকা পটচিত্রে রক্ষিত আছে এই সংগ্রহশালায়। কালের আবর্তে বেরিয়ে এক নিমিষে কয়েকশো বছর প্রাচীন ইতিহাসে ফিরে যেতে আপনাকে একবার ঢুঁ মারতেই হবে, নদীয়ার শান্তিপুরের এই ঐতিহাসিক সংগ্রহশালায়। সপ্তাহে তিন দিন খোলা রয়েছে এই সংগ্রহশালা। এ ছাড়াও কোনও সংগঠন স্কুল কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকারি কোনও সংস্থার পক্ষ থেকে অনুরোধ সাপেক্ষে সপ্তাহে সাত দিন খুলে দেওয়া হয় এই সংগ্রহশালা। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অবাধ প্রবেশের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। প্রাচীন পুঁথি, মূর্তি, পটচিত্র ব্যবহার্য সামগ্রী, প্রাচীন মুদ্রা, পোশাক ইত্যাদি দেখতে দেখতে মনে হবে যেন প্রাচীন বিশ্বে পা রেখে ফেলেছেন। আর ইতিহাসকে ভালোবাসলে এই জাদুঘর থেকে ফিরতে ইচ্ছে করবে না দর্শনার্থীদের।