ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: উত্তরাখণ্ডে মেঘভাঙা বৃষ্টি আর হড়পা (Landslide) বানের বিভীষিকাময় ছবি যতই সামনে আসছে, ততই উদ্বেগ বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি এলাকার মানুষের মধ্যে। প্রশ্ন উঠছে-এই রাজ্যের দার্জিলিং, কালিম্পঙের মতো অঞ্চল কি একই বিপদের মুখোমুখি হতে চলেছে? প্রকৃতির ভার বহন করার ক্ষমতা কি দিন দিন হারিয়ে ফেলছে বাংলার পাহাড়?
ভূমিধস প্রায় অনিবার্য! (Landslide)
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দার্জিলিং ও সিকিম এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই ভূপদার্থগত (Landslide) ভাবে অত্যন্ত দুর্বল এবং ধসপ্রবণ। জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল শৈবাল ঘোষ জানিয়েছেন, হিমালয় এখনও ভূতাত্ত্বিকভাবে একটি নতুন ও অস্থির পর্বতশ্রেণি। এর গঠন এতটাই দুর্বল যে ভূমিধস প্রায় অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিকে আরও ভয়ানক করে তুলছে পাহাড় কেটে হোটেল, রাস্তাঘাট, টানেল এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো উন্নয়নমূলক কাজ।
বেআইনি নির্মাণের দৌরাত্ম্য (Landslide)
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দার্জিলিং ও কালিম্পঙে বেআইনি নির্মাণের দৌরাত্ম্য অনেকটাই (Landslide) বেড়েছে। কাঠের বদলে কংক্রিট নির্মাণে ভরে উঠেছে পাহাড়ের বুক। পরিবেশবিদদের দাবি, এতে পাহাড়ের স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। বর্ষার সময় তো এমনিতেই ধস নামে, তার উপর এই ধরনের নির্মাণ সেই ঝুঁকিকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলছে।
জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হওয়ায় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত
নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র জানাচ্ছেন, তিস্তা ও তার উপনদীগুলোর উপর একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হওয়ায় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এই বাধার কারণে নদীর গতি কমে, নদীতল উঠে আসে এবং বালি-পাথর জমে গিয়ে প্রবাহের পথ পরিবর্তিত হয়। তার ফলে প্রায় প্রতি বছরই দার্জিলিং, কালিম্পং, শিলিগুড়ির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত
সেতিখোলা, তারখোলার মতো এলাকায় ইতিমধ্যেই ধসের কারণে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে। করোনেশন সেতু থেকে রংপো পর্যন্ত রাস্তাও বন্ধ ছিল বেশ কিছু দিন। এই পরিস্থিতিতে পাহাড় কেটে টানেল তৈরির মতো প্রকল্প উদ্বেগ বাড়াচ্ছে পরিবেশবিদ ও ভূতত্ত্ববিদদের মধ্যে।
আরও পড়ুন: Weather Update: বৃষ্টি চলবে এখনও, উত্তরে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা!
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ শান্তনু বোস স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন-উন্নয়ন প্রয়োজন, কিন্তু সেটা যেন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে না হয়। প্রকৃতির সহ্যক্ষমতা অতিক্রম করলে, ভয়ঙ্কর পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সব মিলিয়ে, উত্তর ভারতের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ধাক্কা যেন বাংলার পাহাড়ে আগাম সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছে। এখনই যদি সতর্ক না হওয়া যায়, তাহলে দার্জিলিং-কালিম্পঙেও ঘটতে পারে সেই একই দুর্যোগ।