ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: গত তিন দশকে দক্ষিণ কোরিয়ার যেকোনো নেতার মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটির মুখোমুখি হবেন লি জে-মিয়ং (Lee Jae-myung)। এগুলি হল ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি, পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী কিম জং-উন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার নিজস্ব অর্থনৈতিক মন্দা।
সেনাশাসনের ক্ষত আর রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে দায়িত্ব নিলেন লি (Lee Jae-myung)
ইমপিচমেন্টের পর ক্ষমতা হারানো প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের জায়গায় নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ দায়িত্ব নিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার লিবারাল নেতা লি জে-মিয়ং (Lee Jae-myung)। যদিও তার পক্ষে দেশের মানুষ জোরালো সমর্থন জানিয়েছে, তবে তার শুরুটা মোটেও মসৃণ হচ্ছে না। ইউন-এর শাসনের পর সেনাশাসনের দাগ আর বহু সমস্যার বোঝা এখন লি-এর কাঁধে।
দক্ষিণ কোরিয়ার গত তিন দশকের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও প্রেসিডেন্টকে এত বড় মঞ্চে এতগুলি চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে সামলাতে হচ্ছে। ট্রাম্পের আমদানি শুল্কের হুমকি, পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী কিম জং-উন, দেশের অর্থনৈতিক মন্দা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা—সামনে বড় লড়াই।
ভোটে জয়, কিন্তু সামনে বিশাল পথ (Lee Jae-myung)
ন্যাশনাল ইলেকশন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ভোটের মধ্যে লি পেয়েছেন ৪৯.৪২ শতাংশ (Lee Jae-myung)। কনজারভেটিভ প্রার্থী কিম মুন-সু পেয়েছেন ৪১.১৫ শতাংশ ভোট। ১৯৯৭ সালের পর এই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এত বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: Bilawal Bhutto Zardari: ‘কাশ্মীরের স্বার্থে আমরা…,’ পাকিস্তানের ব্যর্থতার কথা স্বীকার বিলাওয়ালের
প্রথম লক্ষ্য: আর কখনও যেন না হয় সামরিক অভ্যুত্থান (Lee Jae-myung)
দায়িত্ব গ্রহণের আগেই লি জানিয়ে দিয়েছেন, তার প্রথম কাজ হবে সেনাশাসনের ধাক্কা সামলে দেশের গণতন্ত্রকে মজবুত করা।
তিনি বলেছেন, “আমার প্রথম মিশন হল বিদ্রোহ চূড়ান্তভাবে রুখে দেওয়া এবং নিশ্চিত করা যে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে আর কখনও বন্দুক বা তরবারি উঠবে না। আমাদের জনগণের সম্মিলিত শক্তিতে এই সাময়িক সমস্যা আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব।”
অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে ভাবনা
ভোটে জেতার পর নিজের ভাষণে লি জে-মিয়ং বলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম দিন থেকেই তিনি দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা মেটানোর দিকে মন দেবেন। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর খরচের চাপ কমানোর দিকেই জোর দেওয়া হবে। ছোট ব্যবসায়ীদের সমস্যাকেও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
ট্রাম্পের শুল্কের চাপ
এই মুহূর্তে আমেরিকার সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ শুল্ক আলোচনার ডেডলাইন সামনে। ওয়াশিংটনের দাবি, দক্ষিণ কোরিয়ার আমদানি নীতির কারণে তাদের সঙ্গে বাণিজ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। লি জে-মিয়ং প্রেসিডেন্টের শপথ নেওয়ার সঙ্গেই, কোরিয়ার স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম রফতানির উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক চাপতে চলেছে। এই দুটি পণ্য আমেরিকায় রফতানির ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া চতুর্থ স্থানে ছিল।
আরও পড়ুন: Donald Trump: ‘জঘন্য কাজ!’ ফের মাস্কের নিশানায় ট্রাম্পের বিল, পাল্টা হোয়াইট হাউস
প্রচার চলার সময়ে বক্তব্যে লি বলেছিলেন, “এই বিষয়ে তাড়াহুড়ো নেই ঠিকই, কিন্তু আমাদের এখনই শুল্ক নিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে।” তার উপদেষ্টা জানিয়েছেন, কোনও সমঝোতা না হলে এটি একটি বড় অর্থনৈতিক সংকট ডেকে আনতে পারে।
এই মুহূর্তে দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৮,৫০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, দক্ষিণ কোরিয়াকে নিরাপত্তা দেওয়ার বিনিময়ে তারা অর্থ চেয়েছিল।
উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকি ও রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব
উত্তর কোরিয়া যখন রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, হাজার হাজার সেনা পাঠাচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য, সেই সময় প্রেসিডেন্ট লি জানিয়েছেন, তিনি তার পূর্বসূরির মত কঠোর নীতি অনুসরণ করবেন না। প্রচারের সময় তিনি বলেছিলেন, ইউন সুক ইওল ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা বাড়িয়ে সেনাশাসনের চেষ্টা করেছিলেন। লি বলেন, “উত্তর কোরিয়া যখন দক্ষিণের সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তা, রেলপথ ধ্বংস করছে, যখন সীমান্তে ট্যাঙ্ক-প্রতিরোধক দেয়াল তুলছে, তখন কি এটা নয় যে তারা ভয় পাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া ট্যাঙ্ক নিয়ে এগিয়ে আসবে?”
চীনকে ঘনিষ্ঠ করার ইঙ্গিত
লি ইঙ্গিত দিয়েছেন, দক্ষিণ কোরিয়াকে বেইজিংয়ের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। কারণ চীন দীর্ঘদিন ধরে উত্তর কোরিয়ার পৃষ্ঠপোষক। তিনি চান দুই কোরিয়ার মধ্যে নতুন সম্পর্কের দিক খুঁজে বের করা হোক।
নতুন প্রেসিডেন্টের সামনে বড় দায়িত্ব
লি জে-মিয়ং এর সামনে এখন শুধু দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষদের স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতি, অর্থনীতি আর দেশের স্থিতিশীলতাও টিকিয়ে রাখার বড় চ্যালেঞ্জ। শাসনের শুরুতেই তাকে নিতে হবে একের পর এক কঠিন সিদ্ধান্ত।