ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বাঙালি অস্মিতায় শান দিতে রবিভূমে বাংলা ভাষা রক্ষায় দ্বিতীয় পর্বের সংগ্রাম শুরু করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ভাষা আন্দোলনের আবহে বোলপুরে বিশাল পদযাত্রা করল তৃণমূল কংগ্রেস। রবি ঠাকুরের প্রতিকৃতি হাতে হাঁটলেন মমতা নিজে, অন্যদের হাতে দেখা গেল বাংলা বর্ণমালার নানা অক্ষর।
ভিনরাজ্যে লাগাতার বাঙালিদের হেনস্তার অভিযোগ উঠছে। তাঁদের বাংলাদেশি বলে তকমা দিয়ে পুশব্যাক করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। এর বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তৃণমূল। সোমবার রবীন্দ্রনাথের বোলপুর থেকেই ভাষা আন্দোলনের সূচনা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ঘড়ির কাঁটা তখন ২টো ছুঁইছুঁই। হাতে রবিঠাকুরের ছবি, বাংলা বর্ণমালা, নেপথ্যে প্রয়াত প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের অবিস্মরণীয় গান ‘আমি বাংলায় গান গাই।’ মমতার সঙ্গী বীরভূমের দলীয় সাংসদ শতাব্দী রায়, বোলপুরের অসিত মাল, রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, জেলায় দলের কোর কমিটির সদস্যরা। তাদের হাতে দেখা গেল বাংলা বর্ণমালার নানা অক্ষর।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে বিতর্ক, বিএলও-দের দায়িত্ববান হওয়ার বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
মিছিল শেষে বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্থার প্রতিবাদে সুর চড়ালেন তৃণমূল সুপ্রিমো। “কী করে ভুলে গেলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথা? কী করে ভুলে গেলেন মাতঙ্গিনী হাজরার কথা? কী করে ভুলে গেলেন দেশবন্ধুর কথা? কী করে ভুলে গলেন নব জাগরণের কথা?” রবিভূমে ভাষা আন্দোলনের মঞ্চ থেকে এ ভাষাতেই বাঙালি হেনস্থার প্রতিবাদে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শান্তিনিকেতনের বুকে দাঁড়িয়ে বারবার মনে করালেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শনের কথা।
রোহিঙ্গা বিতর্ক ও নির্বাচন কমিশনকে নিশানা (Mamata Banerjee)
বোলপুরের সভা থেকেই তৃণমূল সুপ্রিমো মুখ খোলেন রোহিঙ্গা বিতর্কে। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের মতোই পরিসংখ্যান তুলে ধরে মমতা জানান, বিশ্বে এত রোহিঙ্গাই নেই, যতটা এই রাজ্যে রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও তীব্র আক্রমণ শানান তিনি। বাংলায় ভোটার তালিকা থেকে ‘বাঙালিদের’ নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। বলেন, “ছৌ নাচ দেখবেন, ধামসা-মাদল শুনবেন, কাঁসরঘণ্টা-শঙ্খও বাজবে, এবার বাজিয়ে দেব দামামা।” কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
অনুব্রতর অনুপস্থিতি ঘিরে জল্পনা
তবে এই ভাষা আন্দোলনের মঞ্চে অনুপস্থিত ছিলেন বীরভূমের বিতর্কিত তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। মঞ্চে না থেকে তিনি গাড়ির মাথায় বসে দিদির বক্তৃতা শোনেন বলে জানা যায়। সম্প্রতি আইসি-কে কদর্য ভাষায় আক্রমণ এবং দলের অন্দরের নানা বিতর্ক ঘিরে তাঁকে নিয়ে দলীয় অস্বস্তি বেড়েছে।
আরও পড়ুন:Anubrata Mondal : মঞ্চ নয়, গাড়ির মাথায় বসেই দিদির বক্তব্য শুনলেন কেষ্ট!
২১ জুলাই ধর্মতলার মঞ্চেও দেখা যায়নি তাঁকে। ফলে সোমবারের কর্মসূচিতে তাঁর না থাকা স্বাভাবিকভাবেই নজর কাড়ে। তবে আগামী দিনে ইলামবাজারের সভায় কেষ্ট উপস্থিত হন কি না, সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
বোলপুরে কবিগুরুর স্মৃতিধন্য মাটিতে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) মনে করিয়ে দেন, বাংলা সব ভাষার মানুষদের একইভাবে সম্মান দেয়। তাঁর কথায়, “আমি কোনও ভাষার বিরোধী নই। আমরা একতা চাই। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হওয়ার মূল অস্ত্র একতা।” ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে এই আন্দোলন কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, এখন সেটাই দেখার।