ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: ধাওয়ালেরা বলেন যে তারা তাদের জীবন গড়ে তুলেছিলেন পার্টিকে ঘিরে (Mariam and Ashok Dhawale)। “আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি ছিল অ্যাক্টিভিজম এবং তারপর আসে ভালোবাসা… আমরা আমাদের স্বাধীন দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখি।”
নতুন নেতৃত্বে মহিলাদের স্বর (Mariam and Ashok Dhawale)
তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে শেষ হওয়া সিপিআই(এম)-এর ২৪তম পার্টি কংগ্রেসে পলিটব্যুরোর সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর মারিয়ম ধাওয়ালে (Mariam and Ashok Dhawale) যখন জিজ্ঞেস করা হয়, তাঁর এই উত্তরণ পার্টিতে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না, তিনি শান্তভাবে উত্তর দেন— “একজন মহিলা নেতৃত্ব হিসেবে আমি ও আমার মতো আরও অনেকেই দলের কাজকর্মে জেন্ডার পার্সপেকটিভটা জোর দিয়ে নিয়ে আসব।”
তাঁর পাশেই বসে ছিলেন স্বামী ও পলিটব্যুরোর আর এক সদস্য আশোক ধাওয়ালে। তিনি বলেন, “ও ছিল ভারতে স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (এসএফআই)-এর প্রথম মহিলা রাজ্য (মহারাষ্ট্র) সম্পাদক।”
রাজনীতি ও ভালোবাসা— একসঙ্গে পথচলা (Mariam and Ashok Dhawale)
এই দম্পতি এখন সিপিআই(এম)-এর নবনির্বাচিত পলিটব্যুরোর নতুন মুখ, যাঁরা একসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন এবং পারিবারিক জীবনের পথ পেরিয়ে এখন পৌঁছেছেন জাতীয় নেতৃত্বের কেন্দ্রে (Mariam and Ashok Dhawale)। তাঁরা পলিটব্যুরোতে এসেছেন এমন এক সময়ে, যখন দলের প্রবীণ নেতা-দম্পতি প্রকাশ ও বৃন্দা কারাট বয়সজনিত কারণে (৭৫ বছর বয়সসীমা) সরে দাঁড়িয়েছেন। যদিও তাঁরা সেন্ট্রাল কমিটিতে বিশেষ আমন্ত্রিত হিসেবে দলের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন।
আরও পড়ুন: Minakshi Mukherjee: সম্মেলন মঞ্চের বড় দায়িত্বে মিনাক্ষী, কমিটিতেও কি থাকবে তরুণ মুখ?
ছাত্র রাজনীতি থেকেই শুরু
এমবিবিএস ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও পেশাগতভাবে চিকিৎসা নয়, আশোক ধাওয়ালে বেছে নেন রাজপথ। ১৯৭৮ সালে মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পড়ার সময় তিনি এসএফআই-তে যোগ দেন। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত মহারাষ্ট্র এসএফআই-এর সম্পাদক ছিলেন এবং পরে জাতীয় স্তরে ভাইস প্রেসিডেন্ট হন।
মারিয়ম বুটওয়ালা ১৯৭৯ সালে মুম্বইয়ের উইলসন কলেজে পড়াকালীন এসএফআই-এ যোগ দেন। ৬৪ বছর বয়সী মারিয়ম ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে রাজ্য সম্পাদক ও সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হন।
“আমাদের সম্পর্কে প্রথমে ছিল আন্দোলন, তারপর ভালোবাসা,” বললেন আশোক। মারিয়ম যোগ করলেন, “হ্যাঁ, আমরা জানতাম দলই আমাদের জীবনের কেন্দ্র। সেই অনুযায়ী আমরা জীবন গড়েছি।”
কৃষক-নারী সংগঠনের শীর্ষে
২০১৭ সালে আশোক ধাওয়ালে সিপিআই(এম)-এর কৃষক সংগঠন ‘অল ইন্ডিয়া কিসান সভা’র জাতীয় সভাপতি হন। আর ২০১৬ সালে মারিয়ম নির্বাচিত হন ‘অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক উইমেনস অ্যাসোসিয়েশন’-এর জাতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। আজও তাঁরা এই দায়িত্ব পালন করছেন।
একসঙ্গে জীবন, একসঙ্গে সংগ্রাম
১৯৯৪ সালে দলীয় অফিসে তাঁদের বিয়ে হয়, একেবারে সরল রেজিস্ট্রার-ম্যারেজ। “আমি জন্মসূত্রে হিন্দু, ও মুসলমান। তাই আমাদের বিয়ে আন্তঃধর্মীয়। কিন্তু আমরা দু’জনেই এখন নাস্তিক — ভগত সিং-এর পথ অনুসরণ করেই,” বললেন আশোক। মারিয়ম জানান, তাঁদের পরিবার গোঁড়া না হলেও ধর্ম জীবনের অংশ ছিল। কিন্তু তাঁরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, সেটা তাঁরা মেনে নেবেন না।
পলিটব্যুরোতেও স্বাধীন মত
পলিটব্যুরোতে তাঁরা একসঙ্গে থাকলেও, মতামতে স্বাতন্ত্র্য থাকবে বলেই জানালেন এই দম্পতি। “কিছুটা সমন্বয় নিশ্চয়ই থাকবে, কিন্তু আমাদের নিজস্ব মত আছে। এতে দলের কাজের ওপর কোনও প্রভাব পড়বে না,” বললেন আশোক। মারিয়ম বলেন, “ছাত্র রাজনীতিতে যেমন আলাদা মিছিল করতাম, এখনো ঠিক তেমনই সহযোদ্ধা হিসেবে কাজ করব। এমন এক জীবনসঙ্গী থাকা সত্যিই দরকার, যিনি আপনার আবেগ ও আন্দোলনকে বোঝেন।”
কখনও তাঁকে দীর্ঘ সময় সফরে থাকতে হয়, কখনও আশোককে। “তবুও বাড়িতে খিচুড়ি থাকলেও চলে যায়,” হাসতে হাসতে বললেন মারিয়ম। নারীদের জন্য তাঁর পরামর্শ, “জীবনসঙ্গী বাছার সময় অবশ্যই মানসিক মিলটা দেখে নিন।”