ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: বাংলার লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতোই বিজেপির মহারাষ্ট্রে লড়কি বহিন(Ladki Bahin)। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনার অনুসরণ করে গত ভোটে বাজিমাত করেছে মহায়ুতি জোটের সরকার। কিন্তু সেই সরকারি প্রকল্পে ব্যাপক জালিয়াতি ফড়নবিস-শিন্ডের রাজ্যে! সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লিখিত, মহারাষ্ট্রে লড়কি বহিন প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন অন্তত ১৪ হাজার পুরুষ। সুবিধা নিয়েছেন কোটি কোটি টাকার।পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সমালোচনাও শুরু হয়ে গিয়েছে নানা মহলে।
লড়কি বহিন প্রকল্প কী? (Ladki Bahin)
গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পশ্চিমবঙ্গের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের ধাঁচে মহারাষ্ট্রেও অনুরূপ মহিলা-ভাতা প্রকল্প চালু করেছিল একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার(Ladki Bahin)। ২০২৪ সালে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পে বলা হয়েছিল, ২১ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে বয়স যেসব মহিলার পরিবারের বার্ষিক আয় আড়াই লক্ষের নীচে সেইসব মহিলারা এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন। তাঁদের প্রতি মাসে দেড় হাজার অর্থাৎ ১৫০০টাকা করে দেওয়া হবে। এতদূর পর্যন্ত সব ঠিক থাকলেও সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসা একটি তথ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ব্যাপক হারে।

অনলাইন রেজিস্ট্রেশনে কারচুপি (Ladki Bahin)
সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনের তথ্য, মহারাষ্ট্রের অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের জন্য তৈরি এই প্রকল্প, লড়কি বহিন যোজনার আওতায় ১৪,০০০-এরও বেশি পুরুষ জালিয়াতির মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন(Ladki Bahin)। নারী ও শিশু উন্নয়ন বিভাগ-এর একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ১৪,২৯৮ জন পুরুষকে ২১.৪৪ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছিল, যারা অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের সময় কারচুপি করে নিজেদের মহিলা হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন। ফলে সব মিলিয়ে এই অতিরিক্ত ১৪,২৯৮ জনকে টাকা দিতে এখনও পর্যন্ত মহারাষ্ট্র সরকারের পকেট থেকে খসেছে ২১ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা! আর এই ঘটনায় কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে রাজ্যের।
আরও পড়ুন-Tej Pratap Yadav: বিহার রাজনীতিতে নতুন টুইস্ট! ভোটে লড়ছেন ত্যাজ্য লালু-পুত্র, কোন দলের প্রার্থী?
যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও আবেদন (Ladki Bahin)
এখানেই শেষ নয়, ওই রিপোর্টে আরও জানা গিয়েছে, বহু মহিলা প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও আবেদন করেছেন(Ladki Bahin)। প্রকল্পে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, প্রতিটি পরিবারে সর্বাধিক দু’জন মহিলা এই সুবিধা নিতে পারবেন। কিন্তু ৭.৯৭ লক্ষেরও বেশি মহিলা একই পরিবারের তৃতীয় সদস্য হিসাবে নাম নথিভুক্ত করেছেন। শুধুমাত্র এই কারণেই সরকারি কোষাগারের ১,১৯৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া, প্রকল্পের সর্বোচ্চ বয়ঃসীমা, অর্থাৎ ৬৫ বছরের বেশি বয়সি ২.৮৭ লক্ষ মহিলা এই প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছেন। এর ফলে ক্ষতি হয়েছে ৪৩১.৭০ কোটি টাকা। এমনকি, চার চাকার গাড়ি রয়েছে, এমন পরিবারেরও ১.৬২ লক্ষ মহিলা এই প্রকল্পে নাম লিখিয়েছেন। ফলে সব মিলিয়ে প্রকল্পের প্রথম বছরেই আনুমানিক ১,৬৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে মহারাষ্ট্র সরকারের।

প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক (Ladki Bahin)
এই প্রকল্পটি চালু হওয়ার ১০ মাসের মাথায় অপব্যবহারের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে(Ladki Bahin)। খবর জানাজানি হতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার বলছেন, ‘দরিদ্র মহিলাদের সাহায্য করার জন্য লড়কি বহিন প্রকল্পটি চালু করা হয়েছিল। পুরুষদের এর সুবিধাভোগী হওয়ার কোনও কারণ নেই। আমরা তাদের দেওয়া অর্থ পুনরুদ্ধার করব। যদি তারা সহযোগিতা না করে, তাহলে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অন্যদিকে, এই সব তথ্য জানা যেতেই নানা মহলে শুরু হয়েছে সমালোচনা। এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে বলেন, ‘এঁরা কী ভাবে প্রকল্পে আবেদন করেছিলেন? কে তাঁদের সাহায্য করেছিল? এর নেপথ্যে আরও বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে। বিষয়টি অবিলম্বে সিট (বিশেষ তদন্ত দল) কিংবা ইডি-র তদন্ত করে দেখা উচিত।’
আরও পড়ুন-Space Sector: ‘শুভাংশুর সাফল্যে মহাকাশ নিয়ে উৎসাহ বেড়েছে!’ রবিবাসরীয় বিশেষ বার্তা প্রধানমন্ত্রীর
প্রকল্প নিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার (Ladki Bahin)
দিনকয়েক আগেই জানা গিয়েছে, এই প্রকল্প চালিয়ে নিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে ফড়নবিসের সরকার(Ladki Bahin)।২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস এই প্রকল্পের সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। ফলস্বরূপ, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৫ লক্ষ অযোগ্য সুবিধাভোগীর নাম সিস্টেম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখনও মোট ২৬.৩৪ লক্ষ সুবিধাভোগী অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী অদিতী তটকরে জানিয়েছেন, গত জুন মাস থেকে এই ২৬.৩৪ লক্ষ আবেদনকারীকে টাকা দেওয়া সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করে দেখা হবে।
