ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: প্রধানমন্ত্রী মোদীর কানাডা সফর (Modi at G7) পূর্ববর্তী নেতৃত্বের অধীনে টানাপোড়েনপূর্ণ সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নয়জন বিশ্ব নেতার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে, মোদী জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের সময় বাণিজ্য, সহযোগিতা এবং বিশ্ব শান্তির উপর জোর দেন, যা কানাডার সঙ্গে একটি নতুন অংশীদারিত্বের ক্ষেত্র তৈরি করে।
সফল কানাডা সফর শেষে ক্রোয়েশিয়া যাচ্ছেন মোদি (Modi at G7)
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কানাডা সফর শেষে তাঁর তিন দেশের বিদেশ সফরের শেষ গন্তব্য ক্রোয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন (Modi at G7)। কানাডার ক্যালগেরি থেকে তিনি ক্রোয়েশিয়ার পথে পাড়ি দিয়েছেন। কানাডায় তিনি জি-৭ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। এই সফর তাঁর জন্য ছিল অত্যন্ত “প্রোডাক্টিভ”।
অপারেশন সিন্দুরের পর প্রথম বহুপাক্ষিক সম্মেলন (Modi at G7)
এই জি-৭ (Modi at G7) সম্মেলন ছিল অপারেশন সিঁদুরের পরে মোদির প্রথম বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন। পহেলগামের সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানের সন্ত্রাস ঘাঁটিতে ভারতের ‘নির্ভুল’ আঘাত ছিল এই অপারেশনের অংশ। সেই ঘটনার পরে মোদি এই প্রথমবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে অংশ নিলেন।
মোদির বার্তা: শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের অঙ্গীকার (Modi at G7)
মঙ্গলবার এক্স-এ মোদি লেখেন, “একটি সফল কানাডা সফর শেষ করলাম। কানাডার মানুষ ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ, যারা একটি সফল জি-৭ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা বিশ্ব শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
১০ ঘণ্টায় ৯ জন বিশ্বনেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ
কানাডার কানানাস্কিসে মোদি সাতটি দেশের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন। বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ ও পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হয়। মাত্র দশ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি ৯ জন রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে সহযোগিতা।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কোন কোন নেতা?
প্রধানমন্ত্রী মোদি দেখা করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি লি জে-মিউং, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজের সঙ্গে।

আরও পড়ুন: Ayatollah Ali Khamenei: ‘যুদ্ধ শুরু!’ ট্রাম্পের আত্মসমর্পণ প্রস্তাবের পরেই হুঙ্কার খামেনেই-র
নতুন হাই কমিশনার নিয়োগে সম্মতি
মোদি ও কার্নির বৈঠকে ভারত-কানাডা সম্পর্ককে “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ” বলে উল্লেখ করেন মোদি। তিনি বলেন, দুই দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে যাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লাভজনক সহযোগিতা সম্ভব হয়। এরপর দুই দেশ সম্মত হয় নতুন হাই কমিশনার নিয়োগে, যাতে নাগরিক ও বাণিজ্যিক পরিষেবাগুলি স্বাভাবিক ছন্দে ফেরে। গত বছর অক্টোবরে কানাডা নিজ্জার হত্যা মামলায় ভারতীয় কূটনীতিকদের জড়ানোর অভিযোগ তোলে। তার পরেই ভারত তার হাই কমিশনার সহ ছয় জন কূটনীতিককে ফিরিয়ে আনে। পাল্টা ভারতও ছয় জন কানাডিয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করে।

এক দশক পর কানাডা সফরে মোদি
প্রধানমন্ত্রী মোদি সাইপ্রাস থেকে সোমবার সন্ধ্যায় কানাডার ক্যালগেরিতে পৌঁছন। দীর্ঘ এক দশক পর এটাই ছিল তাঁর কানাডা সফর। জি-৭ গোষ্ঠীতে কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, আমেরিকা, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত।
ভারত-কানাডা সম্পর্কে নতুন অধ্যায়?
প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি মে মাসে নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি মার্চ ১৪, ২০২৫-এ জাস্টিন ট্রুডোর জায়গায় কানাডার ২৪তম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। ট্রুডোর আমলে ভারত-কানাডা সম্পর্ক অনেকটাই খারাপের দিকে গিয়েছিল। ২০২৪ সালের অক্টোবরে কানাডা ছয় জন ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। নিজ্জার হত্যায় ভারত জড়িত বলে ট্রুডোর অভিযোগ ছিল। ভারত সেই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে।
আরও পড়ুন: Volcanic Eruption in Bali: ইন্দোনেশিয়ায় অগ্ন্যুৎপাত, এয়ার ইন্ডিয়ার বলি-গামী বিমান ফিরল দিল্লি
ভারতের অভিযোগ, কানাডার শিখ সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের আশ্রয় দিচ্ছে কানাডা। ভারত এটিকে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন বলেই দেখে। তবে কার্নি নির্বাচনী প্রচারে জানিয়েছিলেন, ভারত-কানাডা সম্পর্ক পুনর্গঠনের ওপর তিনি গুরুত্ব দেবেন। তিনি নিজেকে “সঙ্কটে কার্যকর নেতা” বলেও তুলে ধরেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি বিশ্বের প্রথম নেতাদের মধ্যে একজন, যিনি কার্নিকে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
কানাডায় ভারতীয়দের উপস্থিতি
কানাডায় প্রায় ১৮ লক্ষ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ থাকেন। তাদের মধ্যে শিখ জনসংখ্যা প্রায় ৭.৭ লক্ষ। এছাড়াও আরও ১০ লক্ষ ভারতীয় নাগরিক কানাডায় আছেন পড়ুয়া, দক্ষ কর্মী ও অস্থায়ী কর্মী হিসেবে।