ট্রাইব টিভি বাংলা ডিজিটাল: তিন ম্যাচ বাকি থাকতেই লিগ শিল্ড জেতা হয়ে গিয়েছিল। অপেক্ষা ছিল শিল্ড হাতে পাওয়ার। শনিবার যুবভারতীতে আইএসএল-এর চলতি মরশুমে গ্রুপ লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচে জয়ের ধারা বজায় রেখেই টানা দ্বিতীয়বারের জন্য লিগ শিল্ড হাতে তুলে নিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan beats FC Goa)। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে এফসি গোয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে আই এসএল-এর ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালো মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট।
২৪ ম্যাচে ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে অবশেষে লিগ অভিযান শেষ করলেন শুভাশিষ বোস, জেমি ম্যাকলারেন, জেসন কামিংস, দিমিত্রি পেত্রাতোস, মনবীর সিং, বিশাল কাইথরা। এবার লক্ষ্য প্লে-অফেও জয়ের ধারা বজায় রেখে আইএসএল খেতাব জেতা।
শিল্ড নিয়ে মাঠেই বাঁধভাঙ্গা সেলিব্রেশন ফুটবলার-কোচ-কর্তাদের (Mohun Bagan beats FC Goa)
চলতি আইএসএলে শুধু দুরন্ত পারফরমেন্সই নয় একাধিক নজিরও গড়ল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan beats FC Goa)। প্রথম দল হিসেবে টানা দু’বার লিক শিল্ডের শিরোপা জিতল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। আইএসএলের ইতিহাসে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টই প্রথম দল হিসেবে লিগ পর্যায়ে ৫০ এর বেশি পয়েন্ট এবং সর্বোচ্চ ৫৬ পেল। সেই সঙ্গে এক মরশুমে সবথেকে বেশি ১৭ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়ল। তারমধ্যে ঘরের মাঠে ১১ জয়টাও রেকর্ডবুকে জায়গা করে নিল। এক মরশুমে রেকর্ড ১৫ ক্লিনশিট রাখার রেকর্ডও মোহনবাগানের ঝুলিতে।
প্রিয় দলের খেলোয়াড়দের হাতে লিগ শিল্ড ওঠার মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে শনিবার যুবভারতীর গ্যালারিতে সেলিব্রেশনের আগাম প্রস্তুতি নিয়েই উপস্থিত ছিলেন প্রায় ৬২ হাজার সবুজ-মেরুন সমর্থক। সবুজ মেরুন জনাকে হতাশ করেননি ফুটবলাররা। এফসি গোয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে মধুর প্রতিশোধটাও নিয়ে নিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। প্রথম লেগের ম্যাচে এই গোয়ার কাছেই দুই এক গোলে হারতে হয়েছিল। শনিবার সন্ধ্যায় সেই গোয়াকেই দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে ২ গোলে হারালো মোহনবাগান (Mohun Bagan beats FC Goa)।

আরও পড়ুন: Mohammed Shami: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাড়তি সুবিধার দাবি খারিজ রোহিত-গম্ভীরের, শামি মানলেন বাস্তব
কার্ড সমস্যার জন্য এদিন অধিনায়ক শুভাশিষ বোস খেলতে পারেননি। তাঁর জায়গায় অধিনায়কের দায়িত্ব সামলালেন পেত্রাতোস। অজি তারকা জেমি ম্যাকলারেনকেও বিশ্রাম দিয়েছিলেন কোচ হোসে মোলিনা। মরশুমে একটা ম্যাচও বিশ্রাম না পাওয়া গোলরক্ষক বিশাল কাইথকেও এদিন বিশ্রাম দিয়েছিলেন সবুজ মেরুন কোচ। তার জায়গায় এদিন মোহনবাগানের গোলে ছিলেন ধীরাজ সিং। শুরু থেকেই এদিন গোলের জন্য ঝাঁপায় মোহনবাগান (Mohun Bagan beats FC Goa)। কিন্তু গোয়ার রক্ষণ সতর্ক থাকায় খুব একটা সুযোগ তৈরি করতে পারেননি দিমি, মনবীর সিং, লিস্টন কোলাসো, গ্ৰেগ স্টুয়ার্টরা।
প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে গোল পেয়ে গিয়েছিলেন মনবীর সিং। রেফারি রাহুল গুপ্তা মোহনবাগানের পক্ষে গোলও দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু গোয়ার ফুটবলাররা পেত্রাতোসের হ্যান্ডবলের আবেদন করেন। মবীর গোল করার আগেই দিমির হাতে বল লেগেছিল বলে দাবি করে বিপক্ষের ফুটবলাররা। রেফারি রাহুল গুপ্তা সহকারি রেফারির সঙ্গে কথা বলে পরে গোলটি বাতিল করে দেন। ফলে প্রথমার্ধের খেলা গোলশূন্যভাবেই শেষ হয়।
দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরু থেকেই আক্রমণে চাপ বাড়াতে থাকে মোহনবাগান। আর তাতেই আসে সাফল্য। ৬৩ মিনিটে প্রতিপক্ষের আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় পালতোলা নৌকা। সবুজ বরন ডিফেন্ডার টম অলড্রেডের লম্বা ক্রস হেড করে গোলরক্ষক ঋত্বিক তিওয়ারিকে দিতে যান গোয়ার মিডফিল্ডার বরিস সিং। কিন্তু তা বুঝতে না পেরে গোল ছেড়ে ডানদিকে সরে যান ঋত্বিক। ফলে বরিসের নির্বিষ হেড থেকে বল গোয়ার জালে জড়িয়ে যায়। আচমকা গোল হজম করে গোল পরিশোধে মরিয়া হয়ে ওঠে গোয়া। কিন্তু ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে দ্বিতীয় গোলটি করে মোহনবাগানের জয় নিশ্চিত করে দেন গ্ৰেগ স্টুয়ার্ট।
আরও পড়ুন: 2026 FIFA World Cup Final: ২০২৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রথমবার সুপার বোল স্টাইলের হাফটাইম শো
সবুজ-মেরুন রংমশাল-আবিরে যুবভারতীর গ্যালারিতে অকাল হোলি (Mohun Bagan beats FC Goa)
ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজতেই যুবভারতীর গ্যালারিতে শুরু হয়ে যায় অকাল হোলি। গ্যালারি জুড়ে সবুজ-মেরুন রং মশালের আলোর সঙ্গে উড়লো সবুজ-মেরুন আবির। তার সঙ্গে ফাটলো পটকা। লিগের শেষ ম্যাচে জয় তার সঙ্গে শিল্ড জয়। গ্যালারির সঙ্গে মাঠেও ডবল সেলিব্রেশনে মাতলেন সবুজ-মেরুন ফুটবলার থেকে শুরু করে কোচ, সাপোর্ট স্টাফ ও ক্লাব কর্তারা। এআইএফএফ সভাপতি কল্যাণ চৌবের হাত থেকে অধিনায়ক শুভাশিস লিগ শিল্ড নিতেই সেলিব্রেশনের বাঁধ ভাঙলো যুবভারতীতে। সবুজ-মেরুন থিম সঙ ‘আমাদের সূর্য মেরুন’ এর সঙ্গে ৬২ হাজারের গগনচুম্বী চিৎকারে তখন স্টেডিয়ামে কান পাতা দায়। রাতের যুবভারতীর সবুজ ঘাসের ‘বাগানে’ তখন যেন বসন্ত (Mohun Bagan beats FC Goa)।
শিল্ডে নিয়ে মাঠের মধ্যেই স্ত্রী-বান্ধবী, সন্তানদের সঙ্গে সেলিব্রেশনে মাতলেন কোচ মলিনা থেকে শুরু করে ফুটবলাররা। বড় দাদাদের এই জয় ও সাফল্যের সাক্ষী হতে মাঠে নেমে পড়েছিল মোহনবাগানের অনূর্ধ্ব-১৩, অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ফুটবলারদের সঙ্গে একাডেমির কচিকাঁচারাও (Mohun Bagan beats FC Goa)। বাবা যখন সেলিব্রেশনে ব্যস্ত তখন জুনিয়র স্টুয়ার্ট যুবভারতীর জালে বল জড়াতে ব্যস্ত।

যতবার স্টুয়ার্ট পুত্র জালে বল জড়ালো, ততবার গর্জে উঠল যুবভারতীর গ্যালারি। মাঠ ছাড়ার আগে মোহনবাগান ফরওয়ার্ড গ্ৰেগ স্টুয়ার্ট জানিয়ে গেলেন, তিনি কেরিয়ারে অনেক খেতাব জিতেছেন। কিন্তু তাঁর পরিবার এই প্রথম কোনও ট্রফি জয়ের মুহূর্তের সাক্ষী থাকলো। শনিবার যুবভারতীর উন্মাদনা দেখে রীতিমতো বিস্মিত স্টুয়ার্ট। তিনি বা তাঁর পরিবার এইরকম উন্মাদনা ও উচ্ছ্বাস আগে কোনদিন দেখেননি বলেই জানিয়ে গেলেন।
আরও পড়ুন: Mushfiqur Rahim Retires: ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন মুশফিকুর রহিম
তবে এখানেই থেমে থাকতে চান না স্টুয়ার্ট, শুভাশিসরা। এবার লক্ষ্য আইএসএল খেতাব জয়। সেই ট্রফি জিতেই আসল সেলিব্রেশন হবে বলে জানিয়ে গেলেন দু’জনেই। এই সাফল্য কারও একার নয়, গোটা দলের বলেই মনে করছেন দু’জনে। এদিনের এই গোল সবুজবেরুন সমর্থকদের উৎসর্গ করলেন স্টুয়ার্ট। সেইসঙ্গে অসাধারণ পাঁচ বাড়ানোর জন্য কৃতিত্ব দিলেন জেসন কামিংসকে। উচ্ছ্বসিত মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্তও (Mohun Bagan beats FC Goa)।
এই সাফল্য যেমন দলের ফুটবলার কোচ সাপোর্ট স্টাফ, সমর্থকদের তেমনই মোহন সচিব কৃতিত্ব দিলেন মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের অন্যতম কর্ণধর সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকেও। লিগ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য রীতি মেনে আগামী ১০ তারিখ বিকালে ক্লাব তাঁবুতে ক্লাবের পতাকা উত্তোলন করা হবে। বিদেশে থাকায় বর্তমানে শহরে নেই সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। তাই দেশে ফিরে তিনিই ক্লাবে লিগ শিল্ড নিয়ে আসবেন বলে জানিয়ে দিলেন সচিব দেবাশিস দত্ত।